মিয়ানমারে বিক্ষোভে আবার পুলিশের গুলি, নিহত ৫

মিয়ানমারে শুক্রবার দিবাগত রাতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের সময় নিহত ব্যক্তিদের একজনের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের মাতম। আজ শনিবার ইয়াঙ্গুনের থারকেটা জেলায়
ছবি রয়টার্স

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে আরও পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মান্দালয়, ইয়াঙ্গুন ও পায়াই শহরে গুলি হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডিভিবি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শুক্রবার দিবাগত রাতে বিক্ষোভ করে জনতা। বিক্ষোভকারীরা ইয়াঙ্গুনের থারকেটা জেলার পুলিশ কেন্দ্রের সামনে জমায়েত হয়ে জান্তাবিরোধী চলমান বিক্ষোভে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানান। সে সময় পুলিশ গুলি চালালে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হন।

মান্দালয় শহরেও ১৯৮৮ সালে নিহত শিক্ষার্থীর স্মরণে বিক্ষোভ হয়। সেখানেও বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালায় পুলিশ। এতে আরও দুজন নিহত হয়েছেন বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। আরেক বিক্ষোভকারী নিহত হন মধ্য শহর পায়াইতে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। গ্রেপ্তার করা হয় দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। এরপর থেকে মিয়ানমারের জনগণ জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন।

১৯৮৮ সালের বিক্ষোভে নিহত শিক্ষার্থী ফোন মাওয়ের স্মরণে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন রেঙ্গুন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ওই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এর কয়েক সপ্তাহ পর আরেক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার পর মিয়ানমারে জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আগস্ট মাসে হওয়া ওই বিক্ষোভ ৮-৮-৮৮ নামে পরিচিত। আনুমানিক তিন হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হন সেই বিক্ষোভে।

ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন অং সান সু চি। দুই দশক ধরে তাঁকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল তৎকালীন জান্তা সরকার। ২০০৮ সালে তাঁকে মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু করে সেনাবাহিনী। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে আবার ক্ষমতায় আসে এনএলডি। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ১ ফেব্রুয়ারি সেনা-অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। আবার আটক করা হয় সু চিকে।

এরপর থেকে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে মিয়ানমারে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গেও সহিংস আচরণ করছে জান্তা সরকার। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ৭০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই হাজার জনের বেশি।