
আফগানিস্তানে সরকার গঠনে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তালেবানবিরোধী কয়েকজন প্রবীণ ও প্রভাবশালী আঞ্চলিক নেতা। ভবিষ্যৎ সরকার নিয়ে সমঝোতায় আসতে একটি নতুন ফ্রন্ট গঠনে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা তালেবান নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসারও পরিকল্পনা করছেন। আঞ্চলিক নেতাদের একটি দলের এক সদস্য এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে কাবুল বিমানবন্দরে গত বৃহস্পতিবার আইএসকেপির বোমা হামলার জবাবে আইএসের এই শাখার বিরুদ্ধে আরও বিমান হামলা চালানোর অঙ্গীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রয়টার্স, এএফপি ও আল-জাজিরার খবর।
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় বলখ প্রদেশের একসময়ের শক্তিমান গভর্নর আতা মোহাম্মদ নুরের ছেলে খালিদ নুর বলেন, তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী স্থানীয় নেতাদের এ দলে প্রভাবশালী জাতিগত উজবেক নেতা আবদুল রশিদ দোস্তাম ও আরও কয়েকজন রয়েছেন। তাঁরা আফগানিস্তানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিলেন।
অজ্ঞাত স্থান থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খালিদ নুর (২৭) বলেন, ‘আমরা সম্মিলিতভাবে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে চাই। কেননা আফগানিস্তানের এ সমস্যা আমাদের কারও একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই জনগণের সমর্থনের পাশাপাশি দেশের সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে স্থানীয় নেতাদের জন্য ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আলোচনায় বসা জরুরি।’
আফগানিস্তানে দীর্ঘ চার দশকের লড়াই-সংঘাতে যে কয়জন আঞ্চলিক নেতা বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন, আতা নুর ও আবদুল রশিদ দোস্তাম তাঁদের অন্যতম। সম্প্রতি কোনো লড়াই ছাড়াই উত্তরাঞ্চলীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর মাজার-ই-শরিফ তালেবান যোদ্ধারা দখল করার পর ওই দুই নেতাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান সরকারের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তাও। পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও আফগান সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য।
যাহোক, বিস্ময়কর সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর আফগানিস্তানে পর্দার আড়ালে চলা এ আলোচনা দেশটির আঞ্চলিক যুদ্ধবাজ নেতাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরারই একটি ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
অধিকাংশ বিশ্লেষকের মত, আফগানিস্তানে নানা বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যের অধিকারী জাতিগোষ্ঠীগুলোর সমর্থন ছাড়া কারও পক্ষেই দীর্ঘ মেয়াদে পুরো দেশকে শাসন করা সম্ভব নয়।
২০০১ সালের আগে আফগানিস্তানে শাসনক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানত পশতুন জনগোষ্ঠীর সংগঠন তালেবান তাজিক, উজবেক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সমর্থন নেয়নি। তবে এবার আশরাফ গনির সরকারকে হটাতে তালেবান তাদের সমর্থন-সহায়তা নিয়েছে।
তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পরও কিছু জায়গায় যেসব প্রতিরোধযোদ্ধা তাঁদের সঙ্গে লড়াই করার প্রস্তুতি নিয়ে আছেন, তাঁদের অন্যতম নেতা আহমেদ মাসুদ। গত সপ্তাহে তিনিও বলেছেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে তাঁরা তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসার আশা করছেন। এতে ব্যর্থ হলে লড়াইয়ের জন্যও তৈরি আছেন তাঁরা।
তবে আতা নুর ও দোস্তামের মতো নেতাদের পেছনে ঠিক কতটা জনসমর্থন আছে, তা অস্পষ্ট। আতা নুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। আর দোস্তামের বিরুদ্ধে আছে বেশ কিছু নির্যাতন ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ। অবশ্য উভয় নেতাই তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকেন।
ইতিমধ্যে তালেবান নিজেদের একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের কাছে এখন আছে প্রায় ২ হাজার সশস্ত্র সাঁজোয়া যান ও ৪০টির মতো যুদ্ধবিমান। আরও আছে তাদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়া আফগান সরকারি সেনাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র। এগুলো তালেবানের অস্ত্রভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। তবু নুর মনে করেন, তালেবান চাইলেও প্রতিরোধযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না।
পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয় যে আফগানিস্তানে কেউ শক্তি খাটিয়ে টিকে থাকতে পারবে না। এটা অসম্ভব। তালেবানের পক্ষে কত আন্তর্জাতিক সমর্থন আছে, তা ব্যাপার না। জোর খাটালে তারাও টিকতে পারবে না। ’
তালেবানের একজন কর্মকর্তা রোববার রয়টার্সকে বলেছেন, তাঁরা শিগগিরই মার্কিন বাহিনীর কাছ থেকে কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্বভার গ্রহণ করার আশা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির অপেক্ষায় আছেন। তিনি আরও বলেন, এটির দায়িত্ব নিতে তালেবানের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল ও অত্যন্ত দক্ষ প্রকৌশলীরা রয়েছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, মানবিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে কাবুলে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সোমবার জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানাবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। তিনি বলেন, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি প্রতিষ্ঠা হলে তা জাতিসংঘকে জরুরি তৎপরতা চালাতে ও তালেবানের ওপর চাপ বজায় রাখতে একটি কাঠামো দাঁড় করাবে। ফ্রান্সের এক সাপ্তাহিকীতে প্রকাশিত এক মন্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।