দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান শিগেরু ইশিবা। টোকিও, জাপান, ২৩ জুলাই ২০২৫
দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান শিগেরু ইশিবা। টোকিও, জাপান, ২৩ জুলাই ২০২৫

জীবনযাত্রার ব্যয়ে ক্ষুব্ধ ভোটার: পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা আজ রোববার পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান যখন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন তাঁর পদত্যাগ দেশটিকে দীর্ঘ নীতিগত অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় (গ্রিনিচ সময় সকাল ৯টা) সংবাদ সম্মেলন করবেন ইশিবা (৬৮)। তবে তিনি সত্যি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নে তাঁর কার্যালয় কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইশিবা এক বছরের কম সময় আগে প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তখন থেকে তাঁর জোট সরকার আইনসভার দুই কক্ষের নির্বাচনেই পরাজিত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ে ক্ষুব্ধ ভোটাররা এর জন্য সরকারকে দায়ী করছেন।

গত জুলাই মাসে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে ইশিবাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিল তাঁর নিজ দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। যুদ্ধ-পরবর্তী প্রায় পুরো সময় জাপান শাসন করেছে এলডিপি। তবে ইশিবা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর বদলে তিনি মনোযোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কসংক্রান্ত বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্তকরণের দিকে। শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন জাপানের গুরুত্বপূর্ণ গাড়িশিল্পকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

গত জুলাই মাসে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে ইশিবাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিল তাঁর নিজ দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। যুদ্ধ-পরবর্তী প্রায় পুরো সময় জাপান শাসন করেছে এলডিপি। তবে ইশিবা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর বদলে তিনি মনোযোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কসংক্রান্ত বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্তকরণের দিকে। শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন জাপানের গুরুত্বপূর্ণ গাড়িশিল্পকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

এমন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় গত সপ্তাহে জাপানি মুদ্রা ইয়েন ও সরকারি বন্ডে ধস নামে। গত বুধবার ৩০ বছরের বন্ডের মুনাফার হার সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।

ইশিবার ভাগ্য নিয়ে জল্পনা আরও বাড়ে, যখন এলডিপি সোমবার দলটির নতুন নেতৃত্ব বাছাই হবে কি না, তা নিয়ে ভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

গত বছর এলডিপির নেতৃত্ব নির্বাচনে ইশিবা দ্বিতীয় দফায় অল্প ব্যবধানে সানায়ে তাকাইচিকে হারিয়েছিলেন। আরেক সম্ভাব্য উত্তরসূরি শিনজিরো কোইজুমি—অভিজ্ঞ রাজনীতিক পরিবারের সন্তান, চেহারায় আকর্ষণীয় এবং ইশিবার কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের।

‘এলডিপির ধারাবাহিক নির্বাচনী পরাজয়ের পর ইশিবার ওপর যে রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছিল, তাঁর পদত্যাগ অবশ্যম্ভাবী ছিল’, বলেন মেইজি ইয়াসুদা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ কাজুতাকা মায়েদা।

এলডিপির ধারাবাহিক নির্বাচনী পরাজয়ের (আইনসভার উভয় কক্ষে) পর ইশিবার ওপর যে রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছিল, তাঁর পদত্যাগ অবশ্যম্ভাবী ছিল।
কাজুতাকা মায়েদা, মেইজি ইয়াসুদা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ

কাজুতাকা আরও বলেন, ‘সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের মধ্যে কোইজুমি ও তাকাইচিকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় দেখা হচ্ছে। কোইজুমি বড় কোনো পরিবর্তন আনবেন বলে আশা করা হচ্ছে না। তবে তাকাইচির সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির নীতির পক্ষে অবস্থান ও সুদের হার বাড়ানো বিষয়ে সতর্ক মনোভাব আর্থিক বাজারের নজর কাড়বে।’

তবে আইনসভার কোনো কক্ষেই এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই নতুন দলীয় সভাপতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এলডিপির নতুন নির্বাচিত নেতা চাইলে আইনসভা ভেঙে আগাম নির্বাচন ডাকতে পারেন। যদিও জাপানের বিরোধী দলগুলো বিভক্ত, তবু ডানপন্থী, অভিবাসনবিরোধী ‘সানসেইতো’ পার্টি গত জুলাইয়ে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে বড় সাফল্য পেয়েছে।

রোববার কিয়োদো সংবাদ সংস্থার প্রকাশিত এক জনমতে ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, এখনই আগাম নির্বাচন করার দরকার নেই।

আইনসভার কোনো কক্ষেই ইশিবার ক্ষমতাসীন এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই নতুন দলীয় সভাপতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন—এমন নিশ্চয়তা নেই।

যদি শিগেরু ইশিবা প্রত্যাশিতভাবে পদত্যাগ করেন, তবে তাঁর শেষ কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত করা। ওই চুক্তিতে জাপান ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপানের গাড়ি শিল্পের ওপর শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।