
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টকে দূষণমুক্ত করতে পর্বতারোহীদের জন্য চালু থাকা ‘জামানত প্রথা’ আর থাকছে না। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এই নিয়ম কার্যকর থাকলেও পাহাড়ে আবর্জনার স্তূপ না কমায় এটিকে ‘ব্যর্থ’ বলে আখ্যা দিয়েছে নেপাল সরকার। আজ মঙ্গলবার নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
পুরোনো নিয়ম অনুযায়ী, এভারেস্ট আরোহীদের ৪ হাজার ডলার (প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা) জামানত জমা দিতে হতো। শর্ত ছিল, ফেরার পথে অন্তত ৮ কেজি বর্জ্য নিচে নামিয়ে আনলে এই অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু এক দশকেও পাহাড়ের প্রায় ৫০ টন আবর্জনার সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এই উদ্যোগ থেকে সরে আসছে দেশটি।
নেপালের পর্যটন বিভাগের পরিচালক হিমাল গৌতম বিবিসিকে বলেন, এই নিয়ম এখন কেবল প্রশাসনিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ আরোহীই তাঁদের জামানত ফেরত পেয়েছেন, কিন্তু পাহাড়ের ওপরের ক্যাম্পগুলোর আবর্জনা কমেনি।
সাগরমাথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান শেরিং শেরপা বলেন, পর্বতারোহীরা সাধারণত নিচের ক্যাম্পগুলো থেকে ময়লা নামিয়ে আনেন। কিন্তু ওপরের দুর্গম ক্যাম্পগুলোতে পরিত্যক্ত তাঁবু, ক্যান ও খাবারের প্লাস্টিকের প্যাকেটের স্তূপ থেকেই যাচ্ছে। এ ছাড়া নজরদারির অভাবকেও এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
জামানত প্রথার পরিবর্তে এখন থেকে প্রত্যেক আরোহীর কাছ থেকে ‘অফেরতযোগ্য পরিচ্ছন্নতা ফি’ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে নেপাল। এই অর্থ দিয়ে একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করা হবে। সেই তহবিল থেকে ক্যাম্প-২ এ একটি চেকপোস্ট স্থাপন এবং বিশেষ ‘মাউন্টেন রেঞ্জার’ নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা সার্বক্ষণিক ওপরের ক্যাম্পগুলোতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা তদারকি করবেন।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্ভবত প্রত্যেক পর্বতারোহীর কাছ থেকে ৪ হাজার ডলার করে ফি আদায় করা হতে পারে। পার্লামেন্টে আইন পাস হওয়ার পর এটি কার্যকর করা হবে।
শেরপা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তাদের মতে, জামানত প্রথায় কাউকে কোনোদিন জরিমানা গুনতে হয়নি, যা নিয়মটির কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। এখন নতুন এই ফির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ সরাসরি এভারেস্টের পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যয় করা সম্ভব হবে।
প্রতিবছর প্রায় ৪০০ পর্বতারোহী ও তাদের বিশাল সংখ্যক সহযোগী এভারেস্ট অভিযানে যান। প্রচণ্ড শীতের কারণে পর্বতের ওপরের অংশে মানুষের মলমূত্র পর্যন্ত পচে না, যা হিমালয়ের পরিবেশের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা এভারেস্টকে দূষণমুক্ত করতে পারবে বলে আশা করছে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়।