মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী গত তিন দিনে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর (এফএও) বিদ্রোহীদের কাছে আরও বেশ কয়েকটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের ৬২ সেনা নিহত হয়েছেন। দেশব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় জান্তাদের লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে বিদ্রোহীরা।
মিয়ানমারের জান্তার সমালোচক গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত ইরাবতীর খবরে বলে হয়, সাগাইং, মাগউই ও মান্দালে অঞ্চল এবং কাচিন ও কারেন প্রদেশে হতাহত ও ঘাঁটি দখলের ঘটনা ঘটেছে। তবে সামরিক বাহিনীর হতাহতের ঘটনা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি।
জান্তা বাহিনী পিডিএফের নিয়ন্ত্রণ থেকে সাগাইং শহর উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। অং সান সু চিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) সামরিক শাখা হচ্ছে পিডিএফ।
পিডিএফের হোমালিন গ্রুপ জানিয়েছে, সাগাইং অঞ্চলের হোমালিন শহরের শুই পাই আই এলাকায় সামরিক বাহিনী ১০ দিন চেষ্টার পর গত শনিবার তাদের অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। ১০ দিন ধরে তারা পিডিএফের কাছ থেকে সাগাইং শহর পুনর্দখলের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের মুখে তাঁদের পিছু হটতে হয়েছে।
গত বছরের ২২ নভেম্বর পিডিএফ বাহিনী ওই শহর দখল করেছে। সামরিক জান্তা ও তাদের মিত্র শান্নি ন্যাশনালিজ আর্মির (এসএনএ) প্রায় ৪০০ সদস্য ওই শহরের পুনর্দখলের চেষ্টায় অভিযান শুরু করেছিলেন।
জান্তারা যেখানে ছিল, তারা চলে যাওয়ার পর সেখান থেকে ১৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পিডিএফ। সংঘর্ষকালে আরও ৪০ জান্তা সদস্য আহত হয়েছেন।
ইয়াসাগাইও পিডিএফ বলেছে, শনিবার জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন-২৫৮ বাহিনীর প্রায় ১০০ সদস্যের ইউনিটের ওপর পিডিএফ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। মাগউই অঞ্চলের ইয়াসাগাইও শহরের কিয়াউক হ্লি বি এলাকায় পরে লুটপাট করেন জান্তা সদস্যরা।
পিডিএফ জানায়, ওই এলাকায় ড্রোন হামলায় সামরিক বাহিনীর দুই সদস্য নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।
পিডিএফ জানায়, তারা জান্তাপন্থী গ্রাম জি তাওয়ে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। অঞ্চলটি জান্তাপন্থী পিউ সাউ হ্লিতি গেরিলা–অধ্যুষিত। সেখানে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি।
শনিবার মাইনগিয়ান ব্ল্যাক টাইগার পিডিএফ ও অন্য একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী গ্রেনেড ও ৪০-এমএম বিস্ফোরক ব্যবহার করে ইয়াসাগাইও শহরে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত দুজন আহত হয়েছেন।
মাইনগিয়ান ব্ল্যাক টাইগার পিডিএফ বলেছে, তারা ও মান্দালে ডিস্ট্রিক্ট পিডিএফ ব্যাটালিয়ন-৩ শনিবার ১০টি ভূমিমাইন ব্যবহার করে নাটোগাই শহরে সেনাবাহিনীর ট্রাকে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।
মাইনগিয়ান শহর থেকে সেনাবাহিনীর ট্রাকটি নাটোগাই শহরে যাচ্ছিল। অতর্কিত হামলার পর ট্রাকটি থেমে যায় এবং সেখান থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন সেনারা। পরে সেটি আবার মাইনগিয়ান শহরের দিকে ফিরে যায়। ভূমিমাইনের বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর দুই সদস্য নিহত হয়েছেন।
নাটোগাই আঞ্চলের পিডিএফ জানায়, শুক্রবার মান্দালে অঞ্চলের মাইনগিয়ান শহরের কাছে সান পিয়া গ্রামে সেনাঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের যৌথ হামলায় জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৬ সদস্য নিহত হয়েছেন। ঘাঁটিতে ২০ সেনাসদস্য ছিলেন। এ সময় জান্তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র জব্দ করা হয়।
সংঘর্ষে মাইনগিয়ান ব্ল্যাক টাইগার পিডিএফের এক সদস্যও নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় কাচিন গণমাধ্যমের এক খবরে বলা হয়, কাচিন প্রদেশের পাকান্ত শহরের নান্ত তেইন এলাকায় গতকাল রোববার প্রভাবশালী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) বিদ্রোহীরা জান্তার আরেকটি ঘাঁটি দখল করেছে।
কেআইএ বিদ্রোহীরা ওই ঘাঁটির চারদিক ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে অবরোধ করে রেখেছিল। রোববার বিদ্রোহীদের হামলার পর ঘাঁটিতে আট সেনাসদস্যের মরদেহ পাওয়া যায়।
নান্ত তেইন এলাকার ওই ঘাঁটি সেনাবাহিনীর জন্য কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই ঘাঁটি কেআইএর দখলে যাওয়ার ফলে ওই অঞ্চলে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ আরও সুসংহত হয়েছে।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি একইভাবে পাকান্ত শহরের নান্ত তেইন ও ওয়াই খার এলাকায় অভিযান চালায় কেআইএ বিদ্রোহীরা। ২০ জানুয়ারি পাহাড়ের ওপর একটি ঘাঁটি ও ওয়াই খার এলাকার থানা দখল করে তারা।
শুক্রবার কাচিন প্রদেশের মানসি শহরের আরেকটি কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
এনইউজি জানায়, রোববার পিডিএফ ও কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (কেএনএলএ) বিদ্রোহীরা কারেন প্রদেশের থানডাওঙ্গি শহরে সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এ সময় জান্তা বাহিনীর অন্তত ২০ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিন দিনের লড়াই শেষে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের সামরিক শাখা কেএনএলএ ও পিডিএফ মাইন লুইন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিটি দখল করে নেয়।
বিদ্রোহীরা ঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও খাবার উদ্ধার করেছে।