যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল

ইউক্রেন-রাশিয়ার ওপর হতাশ ট্রাম্প, দনবাস নিয়ে নতুন প্রস্তাব

রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর হতাশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ থামাতে তাঁর পরিকল্পনায় দুই দেশকে রাজি করাতে না পারায় বেশ চটেছেন তিনি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নতুন প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানেও পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রায় চার বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ ঘিরে ট্রাম্পের অসন্তোষ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিত। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের দুই পক্ষকে নিয়েই ব্যাপক হতাশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা করতে চান না। তিনি কাজ চান। তিনি চান এই যুদ্ধ যেন শেষ হয়।

চলতি বছর ক্ষমতায় বসার পর থেকে এই যুদ্ধ থামাতে কম চেষ্টা করেননি ট্রাম্প। সম্প্রতি ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনাও দিয়েছিলেন। তবে ওই পরিকল্পনা মস্কোঘেঁষা—এমন দাবি করে আপত্তি তুলেছিল কিয়েভ। পরে তা সংস্কার করে ২০ দফা করা হয়। যদিও সবশেষ এই পরিকল্পনা নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে মার্কিন প্রতিনিধিরা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি।

‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ প্রস্তাব

রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমঝোতায় সবচেয়ে বড় বাধা দনবাস অঞ্চল। এর প্রায় সবটুকু নিয়ন্ত্রণ করছে রুশ বাহিনী। যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে পুরো দনবাসকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করতে চায় রাশিয়া। তবে তা মানতে নারাজ ইউক্রেন। এরই মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের দনবাস, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেছে রাশিয়া। তবে তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।

এই ভূখণ্ড নিয়ে ট্রাম্পের নতুন এক প্রস্তাব সম্পর্কে বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন জেলেনস্কি। কিয়েভে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দনবাসে যেটুকু অঞ্চল ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, ‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের সেনাদের সরে যেতে হবে। সেখানে রুশ বাহিনীও প্রবেশ করবে না। তবে এই অঞ্চল কে শাসন করবে, তা বলা হয়নি।

এ ছাড়া নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেনের দক্ষিণে যেসব অঞ্চলে রুশ সেনারা অবস্থান করছেন, তাঁরাও সরে যাবেন না বলে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি। তবে দেশটির উত্তরাঞ্চলে নিজেদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে দেবে মস্কো। জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে সে দেশের মানুষের মতামত বা গণভোটের প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে আরও একটি আপত্তি তুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনীয় সেনারা মূলত অবস্থান করছেন দনবাসের দোনেস্কের একটি ছোট অঞ্চলে। জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধের অপর পক্ষ (রাশিয়া) কেন উল্টো দিকে একই দূরত্বে পিছিয়ে যাবে না?’ ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব ঘিরে ‘অনেক বড় বড় প্রশ্নের এখনো’ সুরাহা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আগামী সপ্তাহ গুরুত্বপূর্ণ

ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাবের পর এ নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করেছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি ইউক্রেন ও দেশটির মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। এই সঙ্গে ইউরোপ-আটলান্টিক অঞ্চল ঘিরে আমাদের যে নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে, তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউক্রেনের জন্য একটি ন্যায্য ও টেকসই শান্তির পথ খুঁজে পেতে আগামী সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বৃহস্পতিবার উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, টেকসই মানে এমন একটি শান্তিচুক্তি, যাতে ভবিষ্যৎ সংঘাতের এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামো অস্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রচেষ্টায় ইউরোপকে একপ্রকার দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। তিনি তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনারের কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়ার ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের বিষয়ে সরাসরি সমঝোতা করতে চান। একটি চুক্তির জন্য যদিও কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে বড়দিনের আগেই একটি সমাধানে যাওয়ার ইচ্ছা ওয়াশিংটনের