Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতে কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রাকেশ টিকায়েত

উত্তর প্রদেশের ভোটে বিজেপিকে শায়েস্তায় ‘মিশন ইউপি’

ভারতের উত্তর প্রদেশে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জাঠ কৃষকেরা ব্যাপকভাবে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।

দেশটির কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদির সরকার বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন করার পর প্রায় এক বছর ধরে ভারতজুড়ে আন্দোলন করেন কৃষকেরা। কৃষকদের তুমুল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন তিনটি বাতিল করতে বাধ্য হয় ভারত সরকার। কৃষি আইন বাতিল হলেও বিজেপি সরকারের ওপর কৃষকেরা নানা কারণে ক্ষুব্ধ। এমন প্রেক্ষাপটে কাল বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশে সাত ধাপের বিধানসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে। রাজ্যের এ ভোটকে ঘিরে এবার সব চোখ কৃষকদের ওপর।

কৃষকদের টানা আন্দোলনের মুখে মোদি সরকার তাঁদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে একটি মেনে নেয়। অর্থাৎ বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিল করা হয়। কিন্তু ওই আন্দোলনে কৃষকদের ওপর পুলিশি নৃশংসতা থেকে শুরু করে তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারে বিলম্বসহ নানা বিষয়ে কৃষকেরা বিজেপি সরকারের ওপর এখনো বেশ ক্ষুব্ধ।

দাবি মানার ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘ উদাসীনতাই যে শুধু কৃষকদের ক্ষুব্ধ করেছে, তা নয়। কৃষকেরা বলছেন, সমঝোতার অংশ হিসেবে তাঁরা যে চুক্তি পেয়েছে, তা বেশ নড়বড়ে। আলুচাষিরা আলু সংগ্রহ–সংক্রান্ত সমস্যার কথা বলছেন।

আলুচাষিদের ভাষ্য, আলু সংগ্রহ করা হচ্ছে না। হিমাগারে আলু রাখার জন্য তাঁদের অনেক বেশি অর্থ দিতে হচ্ছে।

আলুচাষিদের অভিযোগ, সরকার শুধু বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তারা কাজের কাজ কিছুই করছে না।

২০২০ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার তিনটি কৃষি আইন পাস করলে ভারতের কৃষকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন

আখের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। আখচাষিরা বলছেন, যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তা খুবই কম।

তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত উত্তর প্রদেশের অধিবাসী। রাজ্যের জাঠ কৃষকবলয়ে তাঁর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

রাকেশ টিকায়েত খোলাখুলিভাবে বলেছেন, সাম্প্রতিক অতীতে যা কিছু ঘটেছে, তারপর আর রাজ্যের কৃষকদের বলে দেওয়ার দরকার নেই যে এবার তাঁরা কাকে ভোট দেবেন।

ভারতের কৃষক ইউনিয়নগুলোর জোট সংযুক্ত কিষান মোর্চা ইতিমধ্যে ‘মিশন ইউপি’ ঘোষণা করেছে। এই মিশনের লক্ষ্য উত্তর প্রদেশে বিজেপিকে শায়েস্তা করা।

মোর্চার নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘জনগণের কাছে আমাদের আবেদন হলো, বিজেপিকে শাস্তি দিন, যারা কৃষকবিরোধী কাজ করেছে।’ নির্বাচনের সময় কেউ যদি এ কথা বলেন, তার মানে বোঝাটা কঠিন নয়।

Also Read: উত্তর প্রদেশের ভোট যে কারণে মোদির জন্য জনপ্রিয়তার পরীক্ষা

কৃষকদের আবেগের বিষয়গুলোর একটি হলো গত বছর উত্তর প্রদেশের লাখিমপুর খেরিতে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে চারজনকে হত্যা করা। তখন থেকেই কৃষকেরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলে আসছেন।

অভিযোগ রয়েছে, লাখিমপুর খেরিতে কৃষকদের আন্দোলন চলাকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রের গাড়িচাপায় কৃষকেরা প্রাণ হারান। ঘটনা–পরবর্তী সহিংসতায় আরও প্রাণহানি ঘটে। তারপরও অজয় মিশ্র স্বপদে বহাল রয়েছেন। তিনি কীভাবে এখনো মোদির মন্ত্রিসভায় আছেন, সেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধী দলগুলো।

নয়াদিল্লিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল

অজয় মিশ্র রাজ্যে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে কৃষকদের হুমকিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগ আছে। তাঁর নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ছেলে আশিসকে রক্ষা করার অভিযোগও আছে। তাই লখিমপুর খেরিতে বিজেপির প্রচারণা কৃষকদের মধ্যে কোনো ভাবলেশের জন্ম দিতে পারেনি।

Also Read: গরু নিয়ে কেন বিপাকে উত্তর প্রদেশ বিজেপি

কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তে কৃষকেরা যে জোর আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা তাঁদের লড়াকু মনোভাবকে আরও দৃঢ় করেছে। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে কৃষকেরা তাঁদের আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার শ্রদ্ধাশীল না হওয়ায় কৃষকেরা এখন বিরক্ত, ক্ষুব্ধ।

কৃষক নেতা দর্শন পাল বলেন, কোনো প্রতিশ্রুতিই সরকার রাখেনি।

কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব প্রতিশ্রুতির পর কৃষকেরা তাঁদের আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি রক্ষাকবচ প্রদান। রয়েছে আন্দোলনকারী কৃষকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করা।

সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কোনোটি পূরণ হয়নি বলে জানান উত্তর প্রদেশের মিরাটের মহেশ চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছুই হয়নি। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ৭০০ কৃষক কেন মারা গেলেন? আমাদের কি এ সরকারকে বিশ্বাস করা উচিত?’

উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় বিজেপির প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তাঁদের কালো পতাকা দেখানো হয়েছে।

বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন করেন কৃষকেরা

রাকেশ বলেন, কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য এখন অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমএসপিকে আইনি রক্ষাকবচ দিতে এত বিলম্ব কেন?

গাজিয়াবাদের নিতীন ত্যাগী বলেন, আখের উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দাম সেভাবে বাড়েনি, যাতে কৃষকেরা লাভবান হতে পারেন।

উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজ্যের জাঠ ও মুসলমান তাদের অতীত বিভেদ-মতপার্থক্য দূরে ঠেলে তারা আবার একটি ‘জোট’ হিসেবে কাজ করবে কি না, তা দেখার বিষয়। রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি) প্রধান জয়ন্ত চৌধুরীর দাদা চরণ সিংয়ের সময় এমন জোট দেখা গিয়েছিল।

রাজ্যের কৃষক নেতাদের বিশ্বাস, উত্তর প্রদেশ বিধানসভার এবারের নির্বাচন ধর্মের ভিত্তিতে হবে না। এবারের নির্বাচনে ভোটারদের রায় অর্থনৈতিক নানা ইস্যুর ওপর নির্ভর করবে। এ ছাড়া অন্য কোনো ইস্যু থাকবে না।

ডেকান হেরাল্ড অবলম্বনে

Also Read: তিন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা মোদির