
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় হদিস মিলল করোনার এক ভুয়া টিকাকেন্দ্রের। কেন্দ্রটি থেকে শত শত মানুষকে ভুয়া টিকা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটির কর্ণধারকে। তিনি নিজেকে কলকাতা পৌর করপোরেশনের যুগ্ম কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে টিকাদান শিবির চালিয়ে যান। নিজেকে একজন আইএএস কর্মকর্তা হিসেবেও পরিচয় দেন তিনি।
গত মঙ্গলবার এই টিকাকেন্দ্রে টিকা নেন তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। কিন্তু টিকা দেওয়ার পর তাঁকে কোনো সনদ দেওয়া হয়নি। তাঁকে বলা হয়, মুঠোফোনে পাঠানো হবে সনদ। পরে মুঠোফোনেও সনদ না এলে মিমির সন্দেহ হয়। এরপরই তিনি শরণাপন্ন হন কসবা থানার। পুলিশ তদন্তে নেমে কসবার রাজডাঙ্গায় অবস্থিত কেন্দ্রটি ভুয়া হিসেবে জানতে পারে। এরপর এই কেন্দ্রের কর্ণধার ২৮ বছরের যুবক দেবাঞ্জন দেবকে গ্রেপ্তার করে। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে সরকারি স্টিকার লাগিয়ে গাড়িতে চড়তেন তিনি। ছিল সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীও।
দেবাঞ্জনের চালচলনে এতটুকু ঘাটতি ধরা পড়েনি। তিনি কসবার টিকাকেন্দ্রে গত ১০ দিনে বিনা মূল্যে টিকা প্রদান করেন প্রায় দেড় হাজার মানুষকে। টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে সুবিধা আদায় করেন তিনি। চাঁদা হিসেবে নেন লাখ লাখ রুপি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুধু কসবায় নয়, কলকাতার সিটি কলেজেও টিকাদান ক্যাম্প খুলে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদেরও ভুয়া টিকা প্রদান করেছেন তিনি।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, দেবাঞ্জন দেব বিভিন্ন ক্যাম্পে কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন ও স্পুতনিক-৫ টিকা দিয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার পৌর করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কাউন্সিলর অতীন ঘোষ জানান, দেবাঞ্জন যে টিকা দিয়েছেন, তা আদৌ কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন বা স্পুতনিক নয়। আসল কোভিশিল্ডের মতো দেখতে হলেও ভায়ালে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোউত্তীর্ণের তারিখ বা উৎপাদনকারী কোম্পানির নাম নেই। শুধু কোভিশিল্ড লেখা। ফলে এই ভায়াল যে জাল, তা মনে করছে পৌর করপোরেশন। পুলিশ এখন খোঁজ করছে এই দেবাঞ্জনের সঙ্গে আর কারা জড়িত। কারণ, দেবাঞ্জন একটি বিরাট দল নিয়ে এই প্রতারণা চালাচ্ছিলেন। তাঁর রয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মচারী, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। প্রচুর অর্থ দিয়ে তাঁদের রাখা হয়েছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দেবাঞ্জন বলেছেন, তিনি এই টিকা কিনেছেন কলকাতা বড়বাজারের ওষুধের পাইকারি বাজার বাগরি মার্কেট থেকে। পরে পুলিশ দেবাঞ্জনের কসবার দপ্তরে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ভুয়া টিকা উদ্ধার করেছে।
কলকাতা পৌরসভা মনে করছে, দেবাঞ্জন করোনা টিকার নামে হাম বা বিসিজি টিকাও দিতে পারেন। উদ্ধার হওয়া ওই টিকা পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থায় পাঠানো হচ্ছে। তবে জাল কোভিশিল্ডের ভায়ালে কোভিশিল্ডসহ মিক্সড ভ্যাকসিন লেখা রয়েছে।
চিকিৎসক অজয় সরকার বলেছেন, মিক্সড মানে একটি পাউডার ও পানি মিলিয়ে তৈরি করা হয় টিকার ডোজ। এখন তদন্ত করে দেখা উচিত, শরীরে দেওয়া ওই টিকার পরিবর্তে কী দিয়েছিলেন তিনি। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা আছে কি না বা এরই মধ্যে তা হয়েছে কি না, সেগুলোও দেখা দরকার।
যেসব মানুষ এই টিকা নিয়েছেন, কলকাতা পৌর করপোরেশন তাঁদের ঠিকানা নিয়ে খোঁজ শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার খবর মেলেনি। ইতিমধ্যে কলকাতার সাধারণ মানুষ অভিযোগ তুলেছেন, কীভাবে কলকাতা পৌর করপোরেশনের নামে শহরে এ ধরনের ভুয়া টিকাকেন্দ্র খুলে প্রতারণা করেছেন দেবাঞ্জন, তা নিয়ে। তাঁর কসবার টিকাকেন্দ্রে পৌর করপোরেশনের লোগোসহ বোর্ড লাগানো রয়েছে। বলা হয়েছে, পৌর করপোরেশনই এই টিকাকেন্দ্র স্থাপন করে মানুষকে বিনা মূল্যে টিকা প্রদান করছে।