Thank you for trying Sticky AMP!!

কোনো রাজ্য থেকে বাঙালি বিতাড়ন চলবে না: সাধন পুরকায়স্থ

প্রেসক্লাবে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন আসামের নাগরিক রক্ষা কমিটির সচিবপ্রধান সাধন পুরকায়স্থ। কলকাতা ভারত, ২০ আগস্ট। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের আসাম রাজ্যে বাঙালি বিতাড়নের পথ ধরে এবার উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাঙালি বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার ও স্থানীয় লোকজন। এর শিকার হচ্ছে মণিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে বসবাসরত বাঙালি হিন্দু-মুসলমানেরা। আজ সোমবার সকালে আসামের নাগরিক রক্ষা কমিটির সচিবপ্রধান সাধন পুরকায়স্থ প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেছেন।

আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকা থেকে ৪০ লক্ষাধিক বাঙালির নাম বাদ পড়ার প্রতিবাদ জানাতে কলকাতায় আসেন সাধন পুরকায়স্থ। সোমবার বিকেলে কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বেঙ্গলি রিফিউজিস’ আয়োজিত সভায় যোগ দিয়ে ভারতের কোনো রাজ্য থেকে বাঙালি হিন্দু-মুসলিম বিতাড়ন চলবে না বলেও প্রতিবাদ জানান তিনি।

এক ফাঁকে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় নাগরিক রক্ষা কমিটির সচিবপ্রধান সাধন পুরকায়স্থ বলেন, আসামের মতো মণিপুর বিধানসভায় চলতি বছরের ২৩ জুলাই নতুন একটি বিল পাস হয়েছে। বিলটির নাম ‘মণিপুর পিপলস বিল-২০১৮’। এই বিলে বলা হয়েছে, ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারির আগে যেসব বাঙালি এই রাজ্যে এসেছেন, তাঁরা মণিপুরে থাকতে পারবেন। যদিও এই বিল আসার আগেই গত ২০০৩ সালে মণিপুর থেকে উচ্ছেদ করা হয় ১০৮টি বাঙালি পরিবারকে। এসব পরিবারের কাছে শত বছর ধরে বসবাস করার কাগজপত্র ছিল। এসব বাঙালি পরিবারকে উচ্ছেদ করে সেখানে সিলেট থেকে আসা মণিপুরিদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাদ পড়েছে বাঙালিরা। শুধু তা-ই নয়, মণিপুরে ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাঙালি এলাকার নাম বদল করা হয়েছে। জাকুডহর বাজারের নাম বদলে রাখা হয়েছে লামলং বাজার। দুর্গাপুরের নাম বদল করে রাখা হয়েছে নান্দিকোনা। মধুপুরের নাম রাখা হয়েছে লুকাইভূমি।

নাগরিক রক্ষা কমিটির মুখ্যপাত্র সাধন পুরকায়স্থ বলেন, বাঙালি বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে নাগাল্যান্ড, অরুণাচল ও ত্রিপুরাতেও। আসামের মরিগাঁও জেলার ৬০ শতাংশ হিন্দু-মুসলমানের নাম ঠাঁই পায়নি এনআরসিতে। বংশানুক্রমিক যেসব বাঙালিরা যুগ যুগ ধরে আসামে বসবাস করে আসছেন, তাঁদের নাম বাদ পড়ে গেছে। ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামী বহু বাঙালি পরিবারের সদস্যদের নাম ওঠেনি। নাম ওঠেনি সাবেক বিধায়ক আতাউর রহমানের। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম প্রকাশিত নাগরিক পুঞ্জির খসড়া তালিকায় আতাউর রহমানের নাম থাকলেও এই বছরের ৩০ জুলাই প্রকাশিত দ্বিতীয় খসড়া তালিকায় তাঁর নাম নেই। নাম নেই শিলচরে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য অধিকর্তা বিকাশ কান্তি নাথের। ১৯৪৪ সালে দেওয়া কাগজপত্র জমা দিলেও নাম বাদ পড়েছে বীরেন্দ্র চন্দ্র নাথের। অথচ তাঁর দাদা দীবাবসু নাথের নাম উঠেছে। আবার ডিব্রুগড়ের চন্দন মজুমদারের মায়ের নাম এনআরসিতে উঠলেও ওঠেনি তাঁর নিজের নাম। অন্যদিকে গুয়াহাটির শেখর দের ছয় বোনের নাম তালিকাভুক্ত হলেও তাঁর নাম পড়েছে। ১৯৫৬ সাল থেকে শেখর দের বাবা পুলিন বিহারি পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে বসবাস করে আসছেন।

‘আসামের নাগরিক পুঞ্জি থেকে ৪০ লাখ ৭০০ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। যার অধিকাংশই বাঙালি হিন্দু-মুসলমান। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না’, বলেন সাধন পুরকায়স্থ। এর প্রতিবাদ জানাতেই তিনি আসাম থেকে কলকাতায় এসেছেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বেঙ্গলি রিফিউজিসের সভাপতি সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস। আলোচনায় অংশ নেন রাণী রাসমণির পরিবারের সদস্য শ্যামলী দাসসহ অন্যরা। বক্তারা বলেছেন, ‘আসামের এই এনআরসির বিরুদ্ধে আমাদের বাঙালি সমাজকে প্রতিবাদী হতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে, এনআরসির দ্বিতীয় খসড়া তালিকা আসামের বাঙালি হিন্দু-মুসলমানেরা মানবে না, মানে না। এনআরসিতে তুলতে হবে সবার নাম। নইলে বাতিল করতে হবে এনআরসি। শুধু আসাম কেন, ভারতের কোনো অঞ্চল থেকে বাঙালি বিতাড়ন চলবে না।’

আসামের পথ ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি তাড়ানোর যে নীলনকশা তৈরি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। বাঙালি বিতাড়ন যাতে গতি না পায়, তার আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে ভারত সরকারকে। নইলে এই দাবি নিয়ে গোটা দেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।