শিবসেনা দল, প্রতীক সবই গেল উদ্ধব ঠাকরের

উদ্ধব ঠাকরে
ফাইল ছবি: এএফপি

শিবসেনা নাম ও দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘তির-ধনুক’ শিন্ডে গোষ্ঠীকে দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন ওই দলের প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে উদ্ধব ঠাকরে। দলে বিভক্তির পর অধিকাংশ নির্বাচিত বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের সঙ্গে যোগ দিলে দুই গোষ্ঠীই নাম ও নির্বাচনী প্রতীকের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল।
শিবসেনার মধ্যে ক্ষমতা দখলের এই লড়াই মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজনীতিকেও চনমনে করে তুলেছে।

ওই সিদ্ধান্তের পর নির্বাচনের কমিশনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে উদ্ধব ঠাকরে বলেন, নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়া হোক। সে জায়গায় কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হোক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। তিনি বলেন, তারা দল ও প্রতীক ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু দলের আদর্শ নিয়ে যেতে পারবে না। তিনি কমিশনকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘পদলেহী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

দলের সংসদ সদস্য ও দলীয় মুখপত্র সামনার সম্পাদক সঞ্জয় রাউত অভিযোগ করেছেন, দুই হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে নির্বাচন কমিশন দলের নাম ও প্রতীক শিন্ডে গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছে।

শিবসেনার বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে

নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্তের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘সত্যের জয় হলো। আমাদের মতো জোটসঙ্গীর কথা ছেড়েই দিলাম, বালাসাহেবের আদর্শকেও তাঁরা ভুলে গেছেন।’ উদ্ধবের নাম উচ্চারণ না করে তিনি বলেছিলেন, ‘ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রিত্বের লোভে তাঁরা কংগ্রেসের পা চাটতে শুরু করেন। শরদ পাওয়ারের পায়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা।’

অমিত শাহকে পাল্টা জবাব দিয়ে জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমার খলনায়কের সঙ্গে তাঁর তুলনা করে উদ্ধব বলেছেন, ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া।’ নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র খলনায়কের নাম ছিল ‘মোগাম্বো’। তার নেশা ছিল সর্বত্র প্রভাব বিস্তারের। সে জন্য দলে একের সঙ্গের অন্যকে লড়িয়ে নিজে ক্ষমতা ভোগ করত। অমিত শাহকে সেই মোগাম্বোর সঙ্গে তুলনা করে উদ্ধব বলেন, ‘বিজেপি মহারাষ্ট্রকে গ্রাস করতে চায়। ওই লোক মহারাষ্ট্রের শত্রু।’

বিজেপির প্রথম শরিক ছিল শিবসেনা। প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরেও বিজেপির মতো আদর্শগত দিক দিয়ে ছিলেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী। সেই আদর্শ ছড়িয়ে তিনি মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। শিবসেনাকে করে তুলেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাঁর মৃত্যুর আগেই নেতৃত্বের প্রশ্নে বিরোধকে কেন্দ্র করে বালাসাহেবের ভাইপো রাজ ঠাকরে নতুন দল গড়েন। কিন্তু শিবসেনাকে দুর্বল করতে পারেননি।

শিবসেনা ক্রমে দুর্বল হতে থাকে বিজেপির চাপে। শিবসেনা প্রভাবিত এলাকায় বিজেপি প্রভাব বাড়াতে থাকে। তাদের ঠেকাতে ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে জোট ছেড়ে উদ্ধব জোট বাঁধেন কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে। সেই থেকে তক্কে তক্কে থাকা বিজেপি একনাথ শিন্ডেকে খাড়া করে শিবসেনায় ভাঙন ধরায়।

সেনা-কংগ্রেস-এনসিপির জোট সরকার সংখ্যালঘু হয়ে যায়। শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি নতুন জোট তৈরি করে আবার দখল করে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা।

নির্বাচন কমিশনকে ‘মোদির পদলেহী’ বলার পাশাপাশি উদ্ধবের পক্ষ টাকা লেনদেনেরও মারাত্মক অভিযোগ এনেছে। সঞ্জয় রাউত গতকাল রোববার বলেছেন, দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ছয় মাস ধরে টাকাপয়সার লেনদেন চলেছে। শিন্ডে শিবিরের এক ঘনিষ্ঠ আবাসন ব্যবসায়ী তাঁকে ওই তথ্য দিয়েছেন।

সঞ্জয় রাউত গত শনিবার টুইটের মাধ্যমেও তাঁর অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ‘একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শুধু নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেই চলে না, তার সিদ্ধান্ত যে প্রভাব ও পক্ষপাতহীন, সেটাও দেখাতে হয়। দুঃখের বিষয়, নির্বাচন কমিশন সেই আস্থা জোগাতে পারেনি। বিজেপি তার দুই হাজার কোটি টাকা লগ্নির স্বার্থে যেকোনো পর্যায়ে নামতে পারে।’

এই পরিস্থিতিতে আজ সোমবারই শিন্ডে গোষ্ঠী বিধানসভার স্পিকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, বিধানসভা ভবনে শিবসেনাকে দেওয়া কার্যালয় তাদের বরাদ্দ করা হোক।