কাশ্মীরে জি–২০ বৈঠকে আসছে না চীনও

জি–২০ সম্মেলন উপলক্ষে জম্মু–কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে হট এয়ার বেলুন ওড়ানোর অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা। ১২ মে তোলা
ছবি: এএনআই

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে জি–২০ দেশগুলোর পর্যটন সম্মেলনে যোগ দেবে না চীন। গতকাল শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, ‘অবৈধভাবে অধিগৃহীত জম্মু–কাশ্মীরের ক্ষেত্রে এটা ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ।’

চীন বলেছে, জম্মু–কাশ্মীর বিতর্কিত অঞ্চল। বিতর্কিত অঞ্চলে এ ধরনের কোনো বৈঠকের আয়োজন করা উচিত নয়। সে কারণে তারা এই সম্মেলনের তীব্র বিরোধী।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গতকাল শুক্রবার এ খবর জানিয়ে বলেন, চীন ওই সম্মেলনে যোগ দেবে না। এর আগে চীন অরুণাচল প্রদেশের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও যোগ দেয়নি। পাকিস্তানের তীব্র আপত্তির সঙ্গে তারাও সহমত।
সম্প্রতি গোয়ায় এসসিও সম্মেলনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে তারা এক যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মীর প্রসঙ্গের উত্থাপন করেছিল। তখন থেকেই মনে করা হচ্ছিল, শ্রীনগরেও চীন অনুপস্থিত থাকবে।

চীন ছাড়াও এই সম্মেলনে সম্ভবত যোগ দেবে না সৌদি আরব ও তুরস্ক। চীনের মতো এই দুই দেশও সম্মেলনের জন্য নাম নিবন্ধন করেনি। এই সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিতদের মধ্যে নাম নথিভুক্ত করেনি মিসরও। ইন্দোনেশিয়া কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা–ও এখনো নিশ্চিত নয়। গত বছর জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ায়। তারাই ছিল সভাপতি দেশ। কেন্দ্রীয় পর্যটনসচিব অরবিন্দ সিং শুক্রবার অবশ্য বলেন, সম্মেলন শুরুর আগপর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করা যাবে।
 
শ্রীনগরে আগামী সোমবার জি–২০ সম্মেলন শুরু হবে। চলবে আগামী বুধবার পর্যন্ত। এই সম্মেলন সফল করতে ভারত সচেষ্ট। সে জন্য দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচার চলছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাশ্মীরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গত বছরেই ভারত সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে জি–২০ উপলক্ষে সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। চীন তখনই আপত্তি জানিয়েছিল। পাকিস্তানও তখন থেকে সক্রিয়। যদিও ভারতের দাবি, জম্মু–কাশ্মীর তাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল, আছে এবং থাকবে।

তুরস্ক, সৌদি আরব ও মিসর—তিন দেশই ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা—ওআইসির সদস্য। এই দেশের সদস্যরা যাতে কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে না যান, সে জন্য পাকিস্তান অনেক দিন ধরেই সক্রিয়। তারা মনে করছে, শ্রীনগরে জি–২০ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ভারত চাইছে সেখানকার বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক সিলমোহর দিতে।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের পর থেকে জম্মু–কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগে সরব সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসরসহ বেশ কিছু রাষ্ট্র। ভারতও বারবার প্রতিটি অভিযোগই ‘মনগড়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অভিসন্ধিমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান ওআইসিকে ভারত–বিরোধিতার হাতিয়ার করে তুলেছে বলেও ভারত অভিযোগ জানিয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শ্রীনগর সম্মেলনে যোগ দিতে প্রায় ৬০ জন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এ পর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করেছেন।