
সাত বছরের মধ্যে প্রথম চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সফরে গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। এমন সময় এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করেছে ওয়াশিংটন। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার দণ্ড হিসেবে নয়াদিল্লির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে রাশিয়া থেকে তেল কেনার ব্যাপারে অনড় ভারত। নিজেদের অর্থনীতির স্বার্থে ওয়াশিংটনের কাছে নতি স্বীকার করতে চাইছে না দেশটি।
মোদি মূলত আগামী রোববার শুরু হওয়া সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) দুই দিনের সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে যাচ্ছেন। এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব রোধে এই জোট গড়ে তোলা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এশিয়ার অন্যতম বড় শক্তি চীনের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে বিরোধ চলছে। বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব রয়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভারতের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে এত অল্প সময়ের মধ্যে কতটা আস্থা নষ্ট হয়েছে, তা মার্কিন কর্মকর্তারা পুরোপুরি বুঝতে পারছেন কি না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’
এই গবেষক বলেন, চীনের জন্য দুই দিনের এই সম্মেলনটা এর থেকে ভালো সময়ে আর হতে পারত না। মোদি এমন সময় চীনে থাকবেন, যখন বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দুর্বল হয়েছে। চীনের জন্য এটি একটি বড় সম্ভাবনা।
ভারতে বেঙ্গালুরুভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান তক্ষশিলা ইনস্টিটিউটের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান মনোজ কেওয়ালরামানি বলেন, ‘চীনের কিছু মানুষ যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা উপভোগ করছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে এই মুহূর্তটিকে কাজে লাগাতে চাইছেন পুতিন।’
সম্মেলনের ফাঁকে সির সঙ্গে বসতে পারেন মোদি। তাঁদের আলোচনায় বড় গুরুত্ব পেতে পারে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো। চীন ও ভারতের মধ্যে অতীত দ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করে মনোজ কেওয়ালরামানি বলেন, দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক আস্থাহীনতা থেকেই যাবে। তবে তারা যদি নিজেদের সম্পর্কে একটি স্থিতিশীলতা আনতে পারে, তাহলে বাস্তবিক অর্থে বড় অর্জন সম্ভব।
সাংহাই সম্মেলনে পুতিন ও সির পাশে মোদির ছবি ওয়াশিংটনের প্রতি একটি বার্তা পাঠাবে বলে মনে করেন ভারতের একজন সাবেক কূটনীতিক। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় নয়াদিল্লি। তবে নিজেদের অংশীদারত্বে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে ভারতের। তেল আমদানি বা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের নতি স্বীকার করাটা আত্মসমর্পণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এমন কোনো ধারণা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই নয়াদিল্লি।