যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আগ্রাসনের জবাব দেওয়া উচিত।
কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।
সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের শশী থারুর বলেন, ‘প্রথমে আমাদের আলোচনায় বসা উচিত। জানি না, ট্রাম্প আমাদের ওপর এত রেগে আছেন কেন। চীনকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল, আর আমাদের মাত্র ২১ দিন। এখন যদি তারা শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, তবে আমাদের জবাবও হতে হবে পাল্টা শুল্ক।’
থারুর জানান, বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে গড়ে ১৭ শতাংশ শুল্ক নেয়। তাঁর কথায়, ‘আমাদেরও সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা উচিত। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি এটা করে, আমরাও একই কাজ করব।’
বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।শশী থারুর, কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা
গতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভারত বারবারই বলেছে, তার জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার সস্তা তেল কেনা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।
ট্রাম্পের চাপের মুখেও ভারত কি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে—এমন প্রশ্নে থারুর বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে, কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।’
বর্তমানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা কার্যত স্থগিত রয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে কৃষিসহ বেশ কিছু কৌশলগত খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার দিতে ভারতের রাজি না হওয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে। দেশীয় কৃষকদের স্বার্থেই এমন অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।
ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারতের কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। আমি জানি, এর জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হতে পারে, কিন্তু আমি প্রস্তুত। দেশের কৃষক, মৎস্যজীবী ও পশুপালকদের স্বার্থে ভারত প্রস্তুত।’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শশী থারুর বলেন, ‘ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষির সঙ্গে যুক্ত। সরকার যে–ই হোক—মোদির কিংবা আমাদের; কৃষকের পাশে দাঁড়াতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে থারুর বলেন, ‘বিদেশে আমাদের সত্যিকার বন্ধুরা বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু যাঁরা বুঝতে প্রস্তুত নন, আমাদের সম্পর্ককে আমাদের মতো করে মূল্য দেন না, তাঁদের বাদ দিয়ে আমাদের অন্য বন্ধু খুঁজতে হবে।’