
পশ্চিমবঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারিতে রেখে বা ডিজিটাল অ্যারেস্টের মাধ্যমে প্রতারণার মামলায় ৯ ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভারতে এই ধরনের ঘটনায় এটাই প্রথম সাজা। পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী মহকুমা আদালত গত শুক্রবার এই রায় দিয়েছেন।
জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে। রানাঘাটের এক অবসরপ্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানী অভিযোগ করেন, তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে যোগাযোগ করে মুম্বাই পুলিশের ভুয়া পরিচয়ে বলা হয়—তিনি একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ডিজিটালি ‘গৃহবন্দী’ থাকতে হবে। সেই ভয় দেখিয়ে সাত দিনের মধ্যে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে তাঁকে এক কোটি টাকা পাঠাতে বাধ্য করা হয়।
ঘটনার পর ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর কল্যাণী সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের হলে রানাঘাট থানা তদন্ত শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, পুরো প্রতারণা চক্রটি বিদেশ থেকে, মূলত কম্বোডিয়া থেকে পরিচালিত হচ্ছিল। তবে, টাকা জমা পড়ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা সহযোগীদের অ্যাকাউন্টে।
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ পরে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ও হরিয়ানায় অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় একাধিক এটিএম কার্ড, পাসবই এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি।
এই মামলায় ২৬০০ পাতার চার্জশিট দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে ৯ জনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। মামলায় ২৯ জন সাক্ষ্য দেন, যাঁদের ছ’জন ভিন্ন রাজ্যের। চার মাসের বেশি সময় ধরে বিচারপ্রক্রিয়া চলে।
দণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জন হলেন মহম্মদ ইমতিয়াজ আনসারি, শহিদ আলি শেখ, শাহরুখ রফিক শেখ, যতীন অনুপ লাডওয়াল, রোহিত সিংহ, রূপেশ যাদব, সাহিল সিংহ, পাঠান সুমাইয়া বানু এবং ফালদু অশোক। তাঁদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন বিচারক শুভার্থী সরকার।
সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই ৯ জনের বিরুদ্ধে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন থানায় আরও ১০৮টি প্রতারণার মামলা রয়েছে। মোট প্রতারণার অর্থের আনুমানিক পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
আইনজীবী মহলের মতে, এই রায় সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা। তাঁদের মতে, ভারতে ডিজিটাল অ্যারেস্ট-কেন্দ্রিক প্রতারণায় এটাই প্রথম সাজা। সাইবার অপরাধ দমনে বিচারব্যবস্থার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।