ভারতের বিহারের বিজেপিদলীয় উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী
ভারতের বিহারের বিজেপিদলীয় উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী

নেপালে অশান্তির দায় কংগ্রেসের: বিজেপি নেতা কেন এমন মন্তব্য করলেন

সবকিছুতে কংগ্রেসকে দায়ী করতে গিয়ে বিজেপি নিজেই বিপাকে পড়েছে। বিড়ম্বনা এতটাই যে বিজেপি নির্দেশ দিয়েছে, নেপাল পরিস্থিতি নিয়ে কোনো নেতা কোনো বিবৃতি দিতে পারবেন না। দিতে হলে কী কলবেন, কীভাবে বলবেন, কতটা বলবেন—তা জেনে নিতে হবে দলের সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছ থেকে।

বিজেপির এই নির্দেশ অবশ্যই মৌখিক। নির্দেশের কারণ বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধুরীর আলটপকা মন্তব্য।

নেপালে রাজনৈতিক পালাবদলের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী গতকাল বুধবার গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘এসব কংগ্রসেরই ভুল। এতগুলো বছর ধরে এসব দেশকে কংগ্রেস আলাদা করে রেখেছে। নেপাল যদি ভারতের অংশ হতো, তাহলে সে দেশটা সুখী হতো। সমৃদ্ধিশালী হতো।’

সম্রাট চৌধুরী বলেন, নেপালের মতো পাকিস্তানও যদি ভারতের থাকত, তাহলে সে দেশও সমৃদ্ধিশালী হতো। কংগ্রেস তা পারেনি। এটা তাদের ভুল। নেপালের আজকের এই অবস্থার দায় যে কংগ্রেসের, সে কথা তিনি একাধিকবার বলেন।

বিজেপির উপমুখ্যমন্ত্রীর এই অভিমত গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা নিয়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিড়ম্বনায় পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার সকালেই সব রাজ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ চলে যায়।

কেন্দ্র থেকে বলা হয়, নেপালে যা চলছে তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে কাউকে কোনো মন্তব্য করতে হলে দলের সভাপতিকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। কেউ যেন আগ বাড়িয়ে কোনো রকম আলটপকা মন্তব্য না করেন।

একই সঙ্গে উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পরিস্থিতি নিয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভারত সরকারও নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক। ভারতের পক্ষে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে কোনো পক্ষ অবলম্বন না করে ও প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে শুধু বলা হয়েছে, ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসেবে ভারত আশা করে, সবাই সংযত হবে ও আলোচনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সব বিষয়ের মীমাংসা করবে।’

স্পষ্টতই, ভারত অপেক্ষার নীতি নিয়েছে। সে দেশের কোনো রাজনৈতিক মহলের পক্ষে কোনো মন্তব্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঠিক করেছে, রাজতন্ত্র অথবা কোনো রাজনৈতিক দলের নীতি নিয়ে কিছু বলা হবে না। কারণ, তাতে ভুল বার্তা যেতে পারে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাই অপসারিত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির নামও করেননি। মোদি বলেন, ‘নেপালের স্থিতিশীলতা, প্রগতি ও শান্তিরক্ষা ভারতের প্রাথমিক গুরুত্ব। নেপালি ভাইবোনেদের কাছে আবেদন, আপনারা শান্তির পক্ষে থাকুন।’

নেপাল থেকে এই মুহূর্তে নানা ধরনের খবর আসছে, যার সত্যাসত্য বিচার করা কঠিন। অপসারিত প্রধানমন্ত্রী অলির করা কিছু মন্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, যা কতটা সত্য তা জানা যায়নি। সেই কারণে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি চীনপন্থী বলে পরিচিত ছিলেন। ভারতের ওপর নির্ভরতা কমাতে চীনের সঙ্গে তিনি বাণিজ্যচুক্তি করেছিলেন। তাঁরই আমলে ২০১৫ সালে মদেশীয় বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। সে সময় তিনি উগ্র জাতীয়তাবাদে হাওয়া দিয়েছিলেন।

২০২৪ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অলির প্রথম বিদেশ সফর ছিল চীন। সম্প্রতি ভারত–চীন স্থল বাণিজ্যচুক্তি নিয়েও তিনি নেপাল সরকারের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। কালাপানি, লিপুলেখ অঞ্চল নেপালের দাবি তুলে ওই পথে বাণিজ্য চালানোর বিরোধিতা করেছিলেন।

কালাপানি, লিপুলেখ নেপালের মানচিত্রেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। চলতি মাসেই অলির ভারত সফরে আসার কথা ছিল। যদিও জনরোষ থেকে বাঁচতে আপাতত তিনি সেনাছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছেন।