
ভারতের বিহার রাজ্যের একটি হাসপাতালে পাঁচ সশস্ত্র ব্যক্তি ঢুকে পড়ল। তারা এক রোগীর কেবিনে গিয়ে গুলি চালিয়ে তাঁকে হত্যা করল। তারপর সেখান থেকে নিরাপদে পালিয়ে গেল। এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়, বরং বিহারের ভয়াবহ বাস্তবতা।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বন্দুকধারীরা অস্ত্র বের করে কেবিনের দরজা খুলে কক্ষে ঢুকছে এবং পরে সেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের কেবিনে থাকা গুলিবিদ্ধ চন্দন মিশ্র নামের ওই ব্যক্তি মারা যান।
চন্দন মিশ্র নিজেও একজন কুখ্যাত অপরাধী। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি পাটনার পরস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, প্রতিপক্ষ কোনো অপরাধী চক্র এই হামলার পেছনে রয়েছে।
পাটনার পুলিশ প্রধান কার্তিকায় শর্মা বলেন, বিহার রাজ্যের বক্সার জেলার বাসিন্দা চন্দন মিশ্রর নামে কয়েক ডজন খুনের মামলা রয়েছে। তাঁকে বক্সার থেকে ভাগলপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। পরে চিকিৎসার জন্য তাঁকে পরস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ প্রধান বলেন, প্রতিপক্ষ অপরাধী চক্র চন্দন শেরুর অনুসারীরা চন্দনকে গুলি করে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই তিনি মারা যান। বক্সার পুলিশের সহযোগিতায় হামলাকারীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।
পাটনার পুলিশ বলছে, হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
এ ঘটনা আবারও বিহারের রাজধানী পাটনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সামনে নিয়ে এসেছে। গত কয়েক সপ্তাহে পাটনায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়ী গোপাল খেমকা, বিজেপি নেতা সুরেন্দ্র কেওয়াত ও আইনজীবী জিতেন্দ্র মাহাতো খুনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
এই পরিস্থিতিতে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ-বিজেপি সরকার চাপের মুখে পড়েছে। বিরোধী দল আরজেডি ও কংগ্রেস এ ঘটনা নিয়ে কড়া ভাষায় নীতীশের সরকারকে আক্রমণ করছে। আগামী অক্টোবর বা নভেম্বরে এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব প্রশ্ন তুলেছেন, ‘রাজ্যের কোথাও কি কেউ নিরাপদ? সরকারি মদদপুষ্ট অপরাধীরা আইসিইউতে ঢুকে রোগীকে গুলি করে হত্যা করছে। বিহারে কেউ কি নিরাপদ? ২০০৫ সালের আগে এমন ঘটনা কি ঘটেছিল?’
বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় সিনহা বলেছেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।
বিহার রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক বিনয় কুমার এনডিটিভিকে বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ২০০৪ সালে প্রতিদিন গড়পড়তায় চারটি অপরাধ হতো। এখন তা অনেক কমেছে। গত বছর প্রায় ২ হাজার ৭০০ খুনের ঘটনা হয়েছে, যা ২০০৪ সালের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ কম।
বিনয় কুমার আরও বলেন, চন্দন মিশ্রর নামে প্রায় তিন ডজন মামলা আছে। তিনি আগে বক্সারের এক কুখ্যাত অপরাধীর সহযোগী ছিলেন। তাঁকে সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরস একটি সুরক্ষিত হাসপাতাল, যেখানে সাবেক নিরাপত্তাকর্মী এবং বেশ কয়েকজন প্রহরী দায়িত্বে থাকেন। সাধারণ দর্শনার্থীকেও ঢোকার আগে বেশ কয়েকবার তল্লাশি করা হয়। এত নিরাপত্তার পরও কীভাবে অপরাধীরা হাসপাতালে ঢুকে কেবিন পর্যন্ত পৌঁছাল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।