ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রভাবশালী এমএলএ হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, বাংলাদেশ-লাগোয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনি বাবরি মসজিদ গড়ার কাজ শুরু করবেন।
১৯৯২ সালে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোনো নেতা এই মসজিদ নতুন করে নির্মাণের কথা বললেন এবং তিনি সেটা বললেন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে।
হুমায়ুনের এই মন্তব্য নিয়ে রাজ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের একজন এমএলএর এই ধরনের মন্তব্য হিন্দু ভোটকে এক জায়গায় নিয়ে এসে বিজেপির সুবিধা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন, ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ করার অভিযোগে হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।
ফিরহাদ বলেন, ‘আমরা তিনবার হুমায়ুনকে সাবধান করেছি। কিন্তু তিনি তাঁর কাজ করে চলেছেন। এ কারণেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হলো। দল তাঁর সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না।’
তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, হুমায়ুন কবীরের এ ধরনের মন্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করা। মুর্শিদাবাদ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যেখানে ২২টি বিধানসভা আসন রয়েছে। এর প্রায় সব কটিই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে।
তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, মুর্শিদাবাদে উত্তেজনা ছড়ানোর পরে সেই উত্তেজনাকে নির্বাচনের আগে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের মাধ্যমে বাড়তি হিন্দু ভোট টানাই বিজেপির লক্ষ্য। এ কাজে বিজেপিকে ভেতর থেকে সাহায্য করছিলেন হুমায়ুন। সেটা রুখতেই তাঁকে দ্রুত দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল কংগ্রেস।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিরহাদ হাকিম বলেন, হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গে কেন বাবরি মসজিদ বানানো হবে, তা কেউই জানেন না। কিন্তু এ ধরনের একটা মন্তব্য করে দলকে রাতারাতি চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন হুমায়ুন। তাই তাঁকে বহিষ্কার করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, বিজেপির সঙ্গে কথাবার্তা বলেই এ কাজ করেছেন হুমায়ুন কবীর; যদিও এ বিষয়ে বিজেপি কোনো মন্তব্য এখনো করেনি।
হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠ মুর্শিদাবাদের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, দলে থেকে বহিষ্কার হওয়ার লক্ষ্যেই এ ধরনের প্রচার চালাচ্ছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক। তাঁর কাজকর্মে তৃণমূল কংগ্রেস বেশ কয়েক বছর ধরেই অখুশি। ফলে হুমায়ুন জানতেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন না।
ওই নেতা বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখে একধরনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হুমায়ুন কবীর শুরু করেছেন, যাতে বিজেপির সুবিধা হতে পারে। এর উদ্দেশ্য এটাও হতে পারে, ভবিষ্যতে তিনি বিজেপি থেকে মনোনয়ন পেতে চাইছেন।
তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব হুমায়ুনকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।