
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে সরকারি দপ্তর রাজভবনের নারী কর্মী শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতি এখনো উত্তাল।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের অর্থ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আজ শুক্রবার বিকেলে কলকাতার মৌলালি মোড় থেকে ধর্মতলার ডরিনা ক্রসিং পর্যন্ত এক প্রতিবাদ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। তৃণমূলের মহিলা মোর্চার পক্ষে এই মিছিল হবে।
তবে এই সমাবেশের ডাক দেওয়ার পরেই রাজ্যপালের বাসভবন ও দপ্তর রাজভবনে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজভবন। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে রাজভবনে পুলিশের প্রবেশের ওপর। এমনকি কলকাতা ছাড়া দার্জিলিং ও বারাকপুরের রাজভবনেও চন্দ্রিমার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বলা হয়েছে, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যে অনুষ্ঠানে থাকবেন, সেখানে যাবেন না রাজ্যপাল।
গতকাল রাতেই রাজ্যপাল এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় বলেছেন, ‘তাঁর বদনাম করতে কে বা কারা ভোটের বাজারে ফায়দা লুটতে চেষ্টা চালাচ্ছে। সত্যের জয় হবেই। কৌশলী কোনো আখ্যানের সামনে আমি মাথা নত করতে রাজি নই। যদি আমার বদনাম করে কেউ ফায়দা লুটতে চান, ঈশ্বর তাদের মঙ্গল করুন। কিন্তু তারা বাংলায় দুর্নীতি ও হিংসার বিরুদ্ধে আমার লড়াই থামাতে পারবে না।’
তবে রাজ্যের নারী মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি হয়েছে। এর বিহিত হওয়া দরকার।’
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী গতকাল রাতেই বলেছেন, ‘অভিযোগ সত্য কি না তা দেখতে হবে। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে, সন্দেশখালির ইস্যুতে তৃণমূল কোণঠাসা। এ অভিযোগ ভোটের মুখে রাজনৈতিক চক্রান্ত কি না, তা দেখতে হবে। যদি সত্য হয় তবে কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ নেবে।’
বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি ও ত্রিপুরার সাবেক রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেছেন, ‘ভারতীয় সংবিধানের ৩৬১ ধারা মতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। সংবিধানই রাজ্যপালকে এই নিয়ে রক্ষা কবচ দিয়েছে।’
এদিকে এসব ঘটনার মধ্যে গতকাল রাতে কলকাতায় এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর রাতে রাজভবনে অবস্থানের পর আজ তিনটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেওয়ার কথা। প্রথম বর্ধমানের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ ও অসীম সরকারের জনসভা সাঁই কমপ্লেক্সে, দ্বিতীয় কৃষ্ণনগরের তেহট্টে এবং শেষে বীরভূমের বোলপুর।
রাজভবনের ওই নারী কর্মী গতকাল তাঁর অভিযোগে বলেন, গতকাল ২ মে এবং এর আগে ২৪ এপ্রিল তাঁকে শ্লীলতাহানি করেন রাজ্যপাল। ওই নারী রাজভবনের সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। তিনি গতকাল বিকেলে প্রথম রাজভবনের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। এরপরই রাজভবনের পুলিশ তাঁকে নিকটবর্তী হেয়ারস্ট্রিট থানায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে ওই নারী লিখিতভাবে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এ ঘটনার পর গতকাল রাতে আনন্দবাজার অনলাইনে ওই নারীর একটি বার্তা প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ওই নারী বলছেন, ‘আজ আমি যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে।’