মোদির ৯ বছরের সাফল্য–ব্যর্থতার কাজিয়া

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: এএনআই

প্রধানমন্ত্রিত্বের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কাছে যা ‘অনন্য সাফল্য’, বিরোধীদের কাছে তা ‘পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতা’। সাফল্য ও ব্যর্থতার এই কাজিয়ার মধ্যে ক্ষমতার দশম বছরে পা দিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি।


২০১৪ সালের ২৬ মে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মোদি। পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালের ৩০ মে দ্বিতীয় দফায় শপথ নেন তিনি। দশম বছরে তৃতীয় দফার অগ্নিপরীক্ষার আগে মোদি সরকারের ৯ বছরের খতিয়ান তুলে ধরতে এক মাস ধরে দেশজোড়া বিপুল এক কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে, যার ‘ক্যাচ লাইন’ বা স্লোগান হচ্ছে ‘সেবা, সুশাসন ও গরিব কল্যাণ’।

আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সেই প্রচারাভিযান, যাতে দেখা যাবে, রাজ্যে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের বিরাট জনসভা। গণমাধ্যমগুলো ভরে যাচ্ছে সরকারি বিজ্ঞাপনে। সর্বত্র সরকারের সাফল্যের সাতকাহন।

কিন্তু এর মধ্যেই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস মেলে ধরেছে সরকারের ‘ব্যর্থতার’ খতিয়ান। দলের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে ৯ বছরের ৯টি চরম ব্যর্থতার উল্লেখ করে কংগ্রেস প্রকাশ করেছে ‘৯ সাল, ৯ সওয়াল’ নামের এক শ্বেতপত্র। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, সাহসী হয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হোন। সংবাদ সম্মেলন ডাকুন এবং এসব প্রশ্নের জবাব দিন।


৯ বছরের ৯টি ‘পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতা’ তুলে ধরে কংগ্রেস বলেছে, সরকারের উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

কী সেই ব্যর্থতা? কংগ্রেসের শ্বেতপত্র অনুযায়ী আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, নজিরবিহীন বেকারত্ব, ধনীদের আরও ধনলাভ ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি। কংগ্রেসের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে হবে, কেন সরকারি সম্পত্তি তাঁর বন্ধু শিল্পপতিদের বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কেন বেড়ে চলেছে অর্থনৈতিক অসাম্য? জানাতে হবে, কেন কৃষি আইন বাতিল করার সময় কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ করা হয়নি? ৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও কেন কৃষকদের আয় প্রতিশ্রুতিমতো দ্বিগুণ হলো না? কেন জীবন বিমা করপোরেশন বা স্টেট ব্যাংকে গচ্ছিত সাধারণ মানুষের টাকা বন্ধু শিল্পপতি ‘আদানির’ সংস্থায় খাটনো হয়? কেনই–বা তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেশ ছেড়ে পালাতে দেন, বিজেপিশাসিত রাজ্যের চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আড়াল করেন?

দেশের নিরাপত্তা নিয়েও মারাত্মক প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস জানতে চেয়েছে, ২০২০ সালে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া সত্ত্বেও চীন কী করে এখনো ভারতের জমি দখল করে থাকে? প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কংগ্রেস বলেছে, ৯ বছরের এই ইমারত খাড়া করা হয়েছে ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও জনতার দুর্দশা’র ওপর।

জয়রাম রমেশ বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও ঘৃণার আবহ’ রচনার দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।

কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জের জবাব প্রধানমন্ত্রী দেননি। সংবাদ সম্মেলন না করার সিদ্ধান্ত ৯ বছর পর বদলাবেন, তেমন কোনো ইঙ্গিতও দেননি। যদিও সরকারের পক্ষে জোরালো জবাব দিয়েছেন দলীয় সভাপতি জে ডি নাড্ডা ও সাবেক মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁদের কথায়, বিগত ৯ বছরে অন্তত ৯টি চমৎকার (৯ সাল, ৯ কামাল) ঘটনা ঘটেছে। যেমন পঙ্গুত্ব ঘুচিয়ে সরকার নির্ণায়ক হয়েছে। দেশের ‘দুর্নীতিযুক্ত’ তকমা দূর হয়েছে। ভঙ্গুর অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। সারা পৃথিবী ভারতকে সমীহ করতে শিখেছে।

রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, কংগ্রেসের অভিযোগ ‘মিথ্যার বেসাতি’ ও ‘প্রতারণার পাহাড়’, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তীব্র ঘৃণাবোধ থেকে যার উৎপত্তি।

কর্ণাটকে পরাজয়ের পর বিজেপি ৯ বছরের ‘সাফল্য’কে হাতিয়ার করে যে প্রচারাভিযান শুরু করেছে, তার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, বছর শেষে চার বড় রাজ্যের নির্বাচনী আবহ তৈরি করা। এই চার রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সরকার রয়েছে। রাজস্থান ও ছত্তিশগড় কংগ্রসের দখলে। তেলেঙ্গানার রয়েছে বিআরএস সরকার। প্রচার অভিযানের অন্য উদ্দেশ্য হলো, এই চার রাজ্যে দলকে সংঘবদ্ধ করে তোলা এবং কর্ণাটকের ফলাফল যে হতাশা সৃষ্টি করেছে, তা কাটিয়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে ৩১ মে রাজস্থানের আজমিরে জনসভা করবেন মোদি নিজে।