উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে মারা যাওয়া ১৪ বছরের আকাশ পাটনির স্বজনের আহাজারি। গতকাল আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে মারা যাওয়া ১৪ বছরের আকাশ পাটনির স্বজনের আহাজারি। গতকাল আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে

ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত

মরদেহ পাওয়ার অপেক্ষায় স্বজনেরা

ভারতের আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে উড়োজাহাজটিতে থাকা ২৪২ আরোহীর ২৪১ জনই মারা গেছেন। আর বিমানবন্দরের পাশে যে ভবনে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছিল সেখানে মারা গেছেন আরও ২৪ জন মেডিকেল কলেজশিক্ষার্থী।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের গুজরাট রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৮৭ মডেলের একটি উড়োজাহাজ। উড্ডয়নের পরপরই বিমানবন্দরের পাশের একটি আবাসিক এলাকায় সেটি বিধ্বস্ত হয়।

মরদেহ পেতে আহমেদাবাদের হাসপাতালের বাইরে স্বজনদের অপেক্ষা যেন ফোরাচ্ছে না। পরিচয় শনাক্তে দাঁতসহ অন্য নমুনা পরীক্ষা করার কাজ চলছে। তবে মরদেহ পুড়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করাটা জটিল হয়ে উঠেছে।

দুর্ঘটনার পর থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলে। উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে যে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ভবনে আটকে পড়েছিল সেখানে কোনো মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে কি না, তা খোঁজা হচ্ছে।

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তা। এক দিন আগে ২৪২ জন আরোহী নিয়ে এখানেই বিধ্বস্ত হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ। গতকাল গুজরাটের আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে পাশে

উদ্ধার অভিযান দেখতে গতকাল দুর্ঘটনাস্থলে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে তিনি হাসপাতালে যান উড়োজাহাজটিতে বেঁচে থাকা একমাত্র আরোহীর খোঁজখবর নিতে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহত অন্যদের খোঁজও নেন তিনি।

ভারতীয় পুলিশের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, উড়োজাহাজটিতে থাকা দুটি ব্ল্যাক বক্সের একটি উদ্ধার হয়েছে। তবে সেই ব্ল্যাক বক্স থেকে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার বা ককপিট ভয়েস রেকর্ডার পাওয়া গেছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য অবশ্য তারা দিতে পারেনি।

দুর্ঘটনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারতের সরকারি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সম্পর্কে জানে এমন একটি সূত্র গতকাল রয়টার্সকে বলে, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, এর পাখা ও অবতরণের জন্য ব্যবহৃত চাকা কেন খোলা ছিল, সেসব বিষয় দেখা হচ্ছে। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, দুর্ঘটনার নেপথ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার কোনো গাফিলতি ছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে সরকারি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে অন্য একটি সূত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তার কথা ভেবে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের ৭৮৭ মডেলের উড়োজাহাজ ভারতীয় যেসব এয়ারলাইনসের বহরে রয়েছে সেগুলো আপাতত না চালানোর বিষয়টি ভাবছে ভারত সরকার। ওই সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্তের ওপর ভিত্তি করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

‘মরেদহগুলো কি দেবেন’

গতকাল আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ এক প্রবীণ নারী বলেন, তাঁর চারজন স্বজন ওই উড়োজাহাজে ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের একজনেরও মরদেহ পাননি জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। ওই নারী বলেন, ‘আপনারা কি মরদেহগুলো আমাদের দেবেন? যদি মরদেহ দিতে না পারেন তাহলে আর কথা বলব না। আমরা খুবই ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত।’

হাসপাতালের সামনে আরও অনেককে বসে থাকতে দেখা গেল। কথা বলে জানা গেল, ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ পাওয়ার জন্য তাঁরা নিজেদের রক্তের নমুনা দিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু মরদেহ কখন পাবেন, সে তথ্য তাঁদের কেউ দিতে পারছেন না।

জয়শঙ্কর পিল্লাই নামে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক সাংবাদিকদের জানান, মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্তের জন্য চিকিৎসকেরা রাতভর কাজ করেছেন। মরদেহগুলো থেকে পাওয়া দাঁতের নমুনা পরীক্ষা করে দেখছেন তাঁরা। কেননা উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পরে অগ্নিকাণ্ডে বেশির ভাগ মরদেহই পুড়ে গেছে। দাঁত পুড়ে যায় না বলে দাঁতের নমুনায় ভরসা করে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

জয়শঙ্কর পিল্লাই নামের ওই চিকিৎসক বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া ১৩৫টি মরদেহ থেকে আমরা দাঁতের নমুনা সংগ্রহ করেছি। এটা খুবই হৃদয়বিদারক এক পরিস্থিতি।’ তবে কতটি মরদেহের পরিচয় তাঁরা শনাক্ত করতে পেরেছেন, এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

হাসপাতালে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মরদেহ তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচয় শনাক্ত করতে সময় প্রয়োজন জানিয়ে তাঁরা বলেন, পরিচয় শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।