ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সোমবার দিল্লিতে একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইএ) স্বাক্ষর করেন
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সোমবার দিল্লিতে একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইএ) স্বাক্ষর করেন

ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই, ভারত চাইছে জোরদার বাণিজ্য সম্পর্ক

দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ভারতে এসেছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। পারস্পরিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উন্নত করতে গতকাল সোমবার দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সোমবার দিল্লিতে একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইএ) স্বাক্ষর করেছেন।

ভারতীয় অর্থমন্ত্রী সীতারমণ জোর দিয়ে বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, উদ্ভাবন ও উন্নত প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।

এই চুক্তির লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগপ্রবাহ আরও বাড়ানো। সীতারমণ জোর দিয়ে বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, উদ্ভাবন ও উন্নত প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ নিয়ে স্মোট্রিচ বলেন, ‘চুক্তিটি আমাদের যৌথ লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ।’

অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে কয়েকটি দেশ চরম ডানপন্থী ইসরায়েলি নেতা স্মোট্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে স্মোট্রিচ লেখেন, ‘আজ (সোমবার) ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন ও পারস্পরিক সমৃদ্ধির প্রতিফলন।’

চুক্তির বিষয়ে স্মোট্রিচ আরও বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন নতুন সুযোগের দুয়ার খুলে দেবে, ইসরায়েলের রপ্তানি জোরদার করবে এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে ব্যবসা বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা ও উপকরণ সরবরাহ করবে।

ভারতের অর্থমন্ত্রী এই চুক্তিকে একটি ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ বলে বর্ণনা করেছেন। সীতারমণ আরও বলেন, এই চুক্তি আর্থিক সেবা ও লেনদেন খাতে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে অর্থ লেনদেন সংযোগ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে ও ইসরায়েলের মধ্যে ৩৯০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান পারস্পরিক বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি ডলার। তবে দুই দেশের মধ্যে মূল বাণিজ্য প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে হয়। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা দেশ ভারত।

সোমবার ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন ও পারস্পরিক সমৃদ্ধির প্রতিফলন।
বেজালেল স্মোট্রিচ, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী

গত বছর আল–জাজিরার একটি অনুসন্ধানে উঠে আসে, ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইসরায়েলকে রকেট ও বিস্ফোরক সরবরাহ করেছে, যেগুলো গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের অস্ত্র হয়ে উঠেছে।

নতুন করে এই চুক্তি ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও হত্যাযজ্ঞের কারণে রাজনৈতিকভাবে ইসরায়েল ক্রমে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা গাজা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালালে প্রথম যে দেশ তেল আবিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে, সেটি হলো ভারত। হামাসের ওই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে এর তীব্র নিন্দাও জানিয়েছিল নয়াদিল্লি।

গাজায় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার প্রতিবাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ হয়েছে। ভারত সরকার ওই বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমন করেছে।

২০২৪ সালে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে ৩৯০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান পারস্পরিক বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি ডলার। তবে দুই দেশের মধ্যে মূল বাণিজ্য প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে হয়। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা দেশ ভারত।

ভারত এখনো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত সমাধানে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতিকে সমর্থন করে।

কিন্তু গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করে জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দান থেকে বিরত থেকেছে ভারত।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক ছাড়াও আরও কিছু খাতে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েলে পড়তে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া সম্প্রতি ইসরায়েলের নির্মাণ কোম্পানিগুলো ভারত থেকে প্রায় এক লাখ কর্মী নিয়োগ দিতে অনুমতি চেয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলে কাজ করা ফিলিস্তিনিদের কাজের অনুমতিপত্র বাতিল করা হয়। সেসব জায়গা পূরণে ভারত থেকে কর্মী নিচ্ছে ইসরায়েল।