Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

পুলিশদের শিক্ষিত করা দরকার: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

বাক্‌স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ কী, কোথায় তা সীমা লঙ্ঘন করে, কখন তা অপরাধ গণ্য হতে পারে এই বিষয়ে পুলিশ বাহিনীকে শিক্ষিত করা দরকার। এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে দাখিল করা এফআইআর খারিজের আবেদন নাকচ করে বোম্বে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বাতিল করে গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এই মন্তব্য করেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এস ওকা ও উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ও জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সমালোচনা করার। তাঁরা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিটি ক্ষোভ প্রকাশ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলে গণতন্ত্র বাঁচবে না।

সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছেন যে মামলায়, তার কেন্দ্রে রয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের অধ্যাপক জাভেদ আহমেদ হাজাম। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের এক কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক হাজামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২২ সালের ১৩ ও ১৫ আগস্ট তিনি শিক্ষক ও অভিভাবকদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দুটি বার্তা পাঠান। তার একটিতে লেখা ছিল, ‘৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের কালো দিন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছে। আমরা খুশি নই।’

হাজামের অন্য বার্তায় লেখা হয়, ‘১৪ আগস্ট পাকিস্তানের শুভ স্বাধীনতা দিবস।’ এই দুই বার্তা পাঠানোর কারণে কোলাপুর পুলিশ অধ্যাপক হাজামের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ (ক) ধারায় এফআইআর দাখিল করে। ওই ধারা অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতি, জন্মস্থান, বাসস্থান নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতার জন্ম দেওয়া এবং সম্প্রীতি নষ্ট করা অপরাধ বলে গণ্য হয়।

বোম্বে হাইকোর্ট তাঁর আবেদন নাকচ করে ‘অপরাধ’ বহাল রাখায় অধ্যাপক হাজাম সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। বোম্বে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল তাঁর এফআইআর খারিজের আবেদন বাতিল করেছিলেন।

গতকাল রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আইন ও শালীনতা মেনে ক্ষোভ প্রকাশের অধিকার ভারতীয় সংবিধান ১৯ (ক) (১) ধারায় প্রতিটি নাগরিককে দিয়েছে। এটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। অন্যের ক্ষোভ প্রকাশের অধিকারকে সবার সম্মান জানানো উচিত। এটাই গণতন্ত্র। এই অধিকার রক্ষা হওয়া দরকার।

বিচারপতি ওকা ও ভুঁইয়া বলেন, গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলে ক্ষোভ বা অসন্তোষ প্রকাশ সংগত। তবে তা লাগামছাড়া হতে পারে না। কিছু নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতই আছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আবেদনকারী সেই সীমা মোটেই লঙ্ঘন করেননি। তিনি যা করেছেন, তা নিজস্ব মতপ্রকাশ। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ১৫৩ (ক) ধারায় অপরাধ গণ্য হওয়ার মতো কিছু করেননি। সেই মানসিকতাও তাঁর ছিল না। তিনি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাত্র। সেই অধিকার ভারতের সংবিধানই তাঁকে দিয়েছে।

বিচারপতিরা বলেন, ‘আমাদের দেশের গণতন্ত্রের বয়স ৭৫ বছরের বেশি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব কী, তা দেশের মানুষ জানেন। তাই, ওই বক্তব্য বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা বাড়াবে, সংঘাত সৃষ্টি করবে, ঘৃণা ছড়াবে—এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বার্তা প্রসঙ্গে বিচারপতিরা বলেন, অন্য দেশের স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা জানানোর অধিকারও নাগরিকদের আছে। এতে অন্যায়ের কিছু নেই।

এই রায়ের সঙ্গেই বিচারপতিরা বলেন, ‘সময় এসেছে আমাদের পুলিশ বাহিনীকে শিক্ষিত করা। বাক্‌স্বাধীনতা কী, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কী, সংবিধান কী বলছে, কোন ক্ষোভ প্রদর্শন ন্যায়সংগত, বাক্‌সংযমের সীমা কোথায়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কেমন, সেসব বিষয়ে আমাদের পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবস্থাকে প্রকৃত শিক্ষিত করা দরকার।’