ওপেকের লোগো
ওপেকের লোগো

ফিরে দেখা

প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের আধিপত্য ঠেকাতে কতটা সফল ওপেক

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সব বিভেদ ভুলে একজোট হয় চার আরব দেশ। একই কারণে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল লাতিন আমেরিকার ভেনেজুয়েলা। বিশ্ব মোড়লদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে সেদিন ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জন্ম হয় ‘দ্য অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)’। ওপেক প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পূর্তিতে এ জোটকে নিয়ে আজকের ‘ফিরে দেখা’র আয়োজন।

গত শতাব্দীর ৫০–এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা তেলে বাজার ভেসে যাচ্ছিল এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলো নিজেদের তেলের পূর্বনির্ধারিত দর কমিয়ে দিচ্ছিল।

তেলের বাজারের টালমাটাল ওই সময় ১৯৫৯ সালে অনেকটা বিনা নোটিশে অপরিশোধিত তেল ও পরিশোধিত তেলজাত পণ্য আমদানির ওপর কোটা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ম্যান্ডেটরি অয়েল ইমপোর্ট কোটা (এমওআইপি) প্রকল্পের ফলে দেশটিতে অপরিশোধিত তেল ও পরিশোধিত তেলজাত পণ্যের আমদানি অনেকটা সীমিত হয়ে পড়ে। যেটুকু আমদানি হতো সেখানে প্রাধান্য পেত কানাডা ও মেক্সিকো।

যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে। সোভিয়েত ইউনিয়নের তেলের কারণে বাজারদর আগেই পড়ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে বাদ পড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম আরও দ্রুত পড়তে থাকে। ওই বছর ফেব্রুয়ারি থেকে পরের বছর আগস্ট মাস পর্যন্ত পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো তেল বিক্রির জন্য তেলের আগে থেকে নির্ধারণ করা মূল্য কমাতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাতেও তেলের মূল্যের পতন আটকানো যাচ্ছিল না।

সে সময় সেভেন সিস্টার্স খ্যাত এ কোম্পানিগুলো ছিল—এক্সন, মবিল, স্ট্যান্ডার্ড, গালফ, টেক্সাকো, বিপি ও সিএফপি। তবে কোনো কোনো তথ্যে এ সাত কোম্পানির মধ্যে সিএফপির জায়গায় শেল–কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাত কোম্পানির মধ্যে চারটি—এক্সনমবিল, বিপি, শেল ও গালফ বিশ্বের অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের ৮৩ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করত।

যুক্তরাষ্ট্র ও এর প্রভাবশালী মিত্রদের একচোখা নীতি ও আধিপত্যের প্রতিবাদে, নিজেদের ন্যায্য হিস্যা পেতে এবং বৈশ্বিক তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণের লাগাম নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার স্বপ্নে চার পারস্য উপসাগরীয় দেশ ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরব জোট বাঁধে। একই কারণে এদের সঙ্গে যুক্ত হয় লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জন্ম হয় ‘দ্য অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)’–এর।

সংকটের সূত্রপাত

যে সংকট থেকে ওপেকের জন্ম, তার সূত্রপাত অবশ্য আরও আগে থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডস কার্যত পুরো মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত তেলের উত্তোলন এবং বিশ্বজুড়ে তার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করত। এ নিয়ন্ত্রণ তারা বজায় রেখেছিল ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব খাটিয়ে।

১৯৫০–এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যাপকভাবে তেল উত্তোলন শুরু করে। এতে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ অনেকটা বেড়ে যায়, দ্রুত কমতে শুরু করে দাম। এ অবস্থায় বিভিন্ন বাজারে সোভিয়েত তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে বহুজাতিক বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলো তাদের তেলের ‘পোস্টেড প্রাইস’ কমিয়ে দেয়; বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ভেনেজুয়েলার তেলের জন্য। অথচ সে সময়ে তেলের প্রমাণিত মজুতের ৮০ শতাংশই ছিল এই দেশগুলোর (মধ্যপ্রাচ্য ও ভেনেজুয়েলা) কাছে।

সে সময় সেভেন সিস্টার্স খ্যাত এ কোম্পানিগুলো ছিল—এক্সন, মবিল, স্ট্যান্ডার্ড, গালফ, টেক্সাকো, বিপি ও সিএফপি। কোনো কোনো তথ্যে এ সাত কোম্পানির মধ্যে সিএফপির পরিবর্তে শেলের কথা এসেছে। এ সাত কোম্পানির মধ্যে চারটি—এক্সনমবিল, বিপি, শেল ও গালফ সে সময়ে বিশ্বের অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের ৮৩ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করত।

এ তেল কোম্পানিগুলোর এতটা প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হয় উপনিবেশবাদের প্রেক্ষাপটে। তেল উত্তোলনের অধিকার (অয়েল কনসেশন) সে সময় ইউরোপীয় বা মার্কিন কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, রাষ্ট্রগুলোর (মধ্যপ্রাচ্যের দেশ) পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ছিল না, আবার তেল উৎপাদনের মতো কারিগরি জ্ঞানও ছিল সীমিত। তেল উত্তোলনের চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বিপুল সুবিধা পায়। বড় আকারে করছাড়ও পায়। অন্যদিকে, মুনাফায় তেলের মালিক দেশগুলোর অংশীদারত্ব ছিল খুব কমই।

এসব কোম্পানির ওপর প্রভাব বিস্তার করত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো।

৫০–এর দশকে পরপর দুবার তেলের পোস্টেড প্রাইস কমার পর বিপদে পড়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের তেল আমদানিতে কোটা আরোপ তেল রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির আরব দেশগুলোর জন্য সংকট আরও গভীর করে তোলে।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ১৯৬০ সালে জন্ম হয় ওপেকের

বাগদাদে বৈঠক ও ওপেকের জন্ম

নিজেদের অর্থনীতি বাঁচাতে বিভেদ ভুলে ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে এক হোটেলে বৈঠকে বসেন পারস্য উপসাগরীয় চার দেশ ইরাক, ইরান, কুয়েত ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিরা। সঙ্গে যুক্ত হয় ভেনেজুয়েলা। ১০ সেপ্টেম্বর বৈঠক শুরু হয়। চার দিন আলোচনার পর ১৪ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় দ্য অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)।

বৈঠকে প্রতিনিধিরা এ সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক তেলের দাম যেন আর না কমে তা নিশ্চিত করা। তাঁদের লক্ষ্য, বিশ্ববাজারে তেলের ন্যায্য ও স্থিতিশীল দাম, ভোক্তা দেশগুলোর জন্য নিয়মিত, সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থা, আর এ শিল্পে বিনিয়োগকারীদের জন্য ন্যায্য মুনাফা নির্ধারণ; যেন প্রতিটি দেশের জন্য তেল উত্তোলন লাভজনক হয়।

১৯৭৩ সালের মধ্যে আরও আটটি দেশ ওপেকের সদস্য হয়। এরা হলো—আলজেরিয়া, ইকুয়েডর, গ্যাবন, ইন্দোনেশিয়া, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইকুয়েডর ১৯৯২ সালে ও গ্যাবন দুবছর পর ১৯৯৪ সালে ওপেকের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে। ২০১৬ সালে কাতারও সদস্যপদ প্রত্যাহার করে।

বর্তমানে ওপেকভুক্ত দেশগুলো হলো—সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইরাক, ইরান, আলজেরিয়া, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, গ্যাবন ও ভেনেজুয়েলা।

ওপেকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬১ সালের ১ জানুয়ারি। শুরুতে ওপেকের সদর দপ্তর ছিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। পাঁচ বছর পর ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর সেটি সরিয়ে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় নেওয়া হয়।

জাকার্তায় ১৯৬৪ সালে ওপেকের সপ্তম সম্মেলন

ওপেকের প্রাথমিক লড়াই

তেলের দাম বাড়ানোর এ সম্মিলিত প্রচেষ্টা ১৯৬০–এর দশকে সফলতার মুখ দেখেনি; বরং বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের প্রকৃত দাম ১৯৬০ সালে যেখানে ছিল ব্যারেলপ্রতি ৯ দশমিক ৭৮ ডলার (২০০৪ সালের মূল্য ধরে) তা ১৯৭০ সালে নেমে আসে ৭ দশমিক ০৮ ডলারে।

তবে ১৯৭১ সাল থেকে দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে এবং ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে আরব-ইসরায়েল (ইয়ম কিপুর) যুদ্ধের পর হঠাৎ তেলের দাম দ্রুত বাড়তে শুরু করে এবং তা ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০ ডলার থেকে বেড়ে ৩৬ ডলারের বেশি হয়ে যায়।

ইয়ম কিপুর যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশের কাছে তেল বিক্রি বন্ধের (এমবার্গো) ঘোষণা দেয় ওপেক। অনেকে বলেন, ওপেকের এ নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়।

বর্তমানে ওপেকভুক্ত দেশগুলো হলো—সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইরাক, ইরান, আলজেরিয়া, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, গ্যাবন ও ভেনেজুয়েলা।

তবে অনেকে আবার এ ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করার কারণে নয়; বরং ওপেক দেশগুলো তেল উত্তোলন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বাজারে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ কমে যায়। আর এতেই তেলের দাম বেড়ে যায়।

কোনো বিক্রেতা দেশ যদি নির্দিষ্ট ক্রেতা দেশের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করে ও বাকিদের কাছে আগের দামেই তেল বিক্রি করে, তবে বিশ্ববাজারে তেলের দামে খুব একটা হেরফের হয় না। তেল এমন একটি পণ্য, যা পুনরায় বিক্রি করা যায় বা সহজে হাতবদল করা যায়; অনেকটা মুদ্রার মতো। তাই একই তেল হাতবদল করে অন্যদের কাছ থেকে কেনা যায়।

যেমনটা হচ্ছে রাশিয়ার তেলের ক্ষেত্রে। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশটিকে চাপে ফেলতে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের তেলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু রাশিয়ার তেল বিক্রি এতে খুব একটা কমেনি; বরং দেশটি কম মূল্যে তেলের বিকল্প ক্রেতা খুঁজে নিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি তেল নিয়ে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল, সে সময় তেলের উৎপাদন ও বাজারদর মূল্যায়নে বৈঠকে বসেছিলেন ওপেক ও ওপেক প্লাস দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর

ওপেক প্লাস কী

বর্তমানে ওপেকের সদস্যসংখ্যা ১২। সঙ্গে ওপেকভুক্ত নয় এমন তেল রপ্তানিকারক ১০ দেশ মিলে ২০১৬ সালে গঠিত হয় ওপেক প্লাস জোট। বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়াও ওপেক প্লাস জোটের অংশ হয়।

ওপেক ও ওপেক প্লাস জোটের নেতা সৌদি আরব এবং রাশিয়া। এ দুই দেশ সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলন করে। দুই দেশ এখন (রয়টার্সের দেওয়া ২০২৪ সালের হিসাব) গড়ে প্রতিদিন যথাক্রমে ৯০ লাখ ব্যারেল ও ৯৩ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল উৎপাদন করে।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির ক্ষমতা ওপেকের হাতে আছে কি

ওপেকের দাবি, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের ৪১ শতাংশ আসে তাদের জোটভুক্ত দেশগুলো থেকে। এ ছাড়া সংস্থাটির অনুমান, বিশ্বের প্রমাণিত যে তেল মজুত আছে তার প্রায় ৮০ শতাংশই রয়েছে ওপেকভুক্ত দেশে।

বর্তমানে ওপেকের সদস্যসংখ্যা ১২। এর সঙ্গে ওপেকভুক্ত নয় এমন তেল রপ্তানিকারক ১০ দেশ মিলে ২০১৬ সালে গঠিত হয় ওপেক প্লাস জোট। বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়াও ওপেক প্লাস জোটের অংশ হয়।

বাজারের বৃহৎ অংশীদার হওয়ার কারণে ওপেকের সিদ্ধান্ত সরাসরি বিশ্ববাজারে তেলের দামে প্রভাব ফেলে। সংগঠনটির সদস্যদেশগুলো নিয়মিত বৈঠকে বসে ঠিক করে কত পরিমাণ তেল তারা বাজারে বিক্রি করবে।

ফলে, চাহিদা কমে গেলে যদি তারা সরবরাহ কমায়, তখন তেলের দাম সাধারণত স্থিতিশীল থাকে বা বেড়ে যায়। আবার যখন তারা বাজারে বেশি তেল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন দাম কমার প্রবণতা দেখা দেয়।

ওপেকের সিদ্ধান্ত কীভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে

ওপেকভুক্ত কয়েকটি দেশ তেল উত্তোলন কমিয়ে দিলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ওপেক এ কাজ করায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে লকডাউনের সময় বিশ্ববাজারে তেলের দামে ধস নেমেছিল। সেই সময় দাম ধরে রাখার চেষ্টা হিসেবে ওপেক প্লাস প্রতিদিন ১ কোটি ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশের সমান ছিল। যদিও ওপেক বলে থাকে, বাজারে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করা নয়; বরং চাহিদা ও জোগানের সমন্বয়ের ওপর নজর রাখা তাদের কাজ।

ওপেকভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি ভীষণভাবে তাদের তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তাই মুখে যতই বলুক তারা তেলের বাজারদর ঠিক করে না; বাস্তবে নিজেদের অর্থনীতি ঠিক রাখতে ঠিকই কলকাঠি নাড়ে।

ওপেক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদন ও রপ্তানি করে সৌদি আরব। ওপেক জোটে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশও তারা। বিশ্লেষকদের মতে, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ ডলারের মধ্যে রাখতে পারলে সৌদি আরবের বাজেটে ভারসাম্য বজায় থাকে।

তেলের বাজার অস্থিতিশীল হলে বিশ্বজুড়ে তার কী প্রভাব পড়ে, মূল্যস্ফীতি এক লাফে কতটা বেড়ে আকাশ ছোঁয়, তার সর্বশেষ প্রমাণ আমরা দেখেছি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়াকে শাস্তি দিতে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা বিশ্ব। সেই শাস্তি পেতে হয় সারা বিশ্বকে। এমনকি শাস্তি আরোপ করা দেশগুলোও শাস্তি ভোগ এড়াতে পারেনি।

(তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, ওপেক ওয়েবসাইট ও এনার্জি এডুকেশন)