তেহরানে খেলনার জাদুঘরে খেলনা দেখছেন দর্শনার্থীরা। ২৬ অক্টোবর ২০২৫
তেহরানে খেলনার জাদুঘরে খেলনা দেখছেন দর্শনার্থীরা। ২৬ অক্টোবর ২০২৫

তেহরানে খেলনার জাদুঘর, কী আছে সেখানে

ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বাড়ি মেরামত করে সেটিকে খেলনার জাদুঘর করা হয়েছে। ওই জাদুঘরে আছে প্রাচীন পারস্য থেকে শুরু করে সোভিয়েত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নানা সময়ের খেলনা। এসব খেলনা বহু আগের শৈশবের স্মৃতিকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।

৪৬ বছর বয়সী আজাদেহ বায়াত এই জাদুঘর গড়ে তুলেছেন। ছয় বছর সংস্কার কাজ চলার পর গত বছর জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

আজাদেহ বায়াত বলেন, ‘আমার সব সময় মনে হতো, শিশু-কিশোরেরা এগুলো দেখতে আসবে। কিন্তু এখন এমনকি বড়রাও নিয়মিত জাদুঘর ভ্রমণে আসেন।’

শিশুশিক্ষাবিষয়ক গবেষক বায়াত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজারের বেশি খেলনা সংগ্রহ করেছেন।

বায়াত বলেন, ‘নিজেদের মা–বাবা ও দাদা-দাদির খেলনা দেখে শিশুরা বয়োজ্যেষ্ঠদের আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং তাদের জগতের সঙ্গে নিজেদের জগৎকে আরও ভালোভাবে যুক্ত করতে শিখতে পারে।’

আজাদেহ বায়াত এই জাদুঘর গড়ে তুলেছেন। ছয় বছর সংস্কার কাজ চলার পর গত বছর জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেখানে দুই হাজারের বেশি খেলনা রয়েছে।

জাদুঘরে পারস্যের প্রাচীন আমলের একটি মাটির পশুমূর্তি কাচের প্রদর্শনী বাক্সে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাছেই একটি তাকের ওপর সাজানো কাঠের ‘ম্যাট্রিওশকা’ পুতুলের একটি দল। রক্তিম গালের পুতুলগুলো রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা। এর একদিকে সোভিয়েত আমলের উজ্জ্বল রঙের টিনের গাড়িগুলো ঝলমল করছিল।

জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে একটি অ্যাটারি কনসোল। এটি ১৯৮০–এর দশকের ভিডিও গেমের প্রাথমিক সংস্করণ।

সেখানে কয়েকটি মার্কিন বার্বি ডলও রয়েছে। পশ্চিমা প্রভাবের প্রতীক হিসেবে একসময় ইরানে বার্বি ডল কেনাবেচার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ ছিল।

বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় বার্বি ডলের বিকল্প হিসেবে ২০০০–এর দশকে ইরান কর্তৃপক্ষ ‘সারা ও দারা’ নামের দুটি পুতুল বাজারে আনে।  

২৭ বছর বয়সী মায়েদেহ মির্জাইর জন্য এই জাদুঘর অতীত রোমন্থনের সুযোগ।

নিজেদের মা–বাবা ও দাদা-দাদির খেলনা দেখে শিশুরা বয়োজ্যেষ্ঠদের আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং তাদের জগতের সঙ্গে নিজেদের জগৎকে আরও ভালোভাবে যুক্ত করতে শেখে।
আজাদেহ বায়াত, জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা

এই তরুণী সোনাশিল্প খাতে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘ওই দুটি ইরানি পুতুল (সারা ও দারা) ঘিরে এত প্রচার হয়েছিল যে বই-খাতাসহ সবকিছুর ওপর, সব জায়গায় তাদের মুখ দেখা যেত।’

ঘরের অন্য পাশে, একজন জাদুঘর কর্মী সেখানে যাওয়া দর্শনার্থী স্কুলশিক্ষার্থীদের একটি কাঠের আক্রোব্যাট পুতুলের নড়াচড়ার কৌশল দেখাচ্ছিলেন। এই পুতুলটি ‘আলি ভারজেহ’ বা ‘আলি দ্য জাম্পার’ নামে পরিচিত। দড়িতে টান দিলেই সেটি জীবন্ত হয়ে নড়েচড়ে ওঠে।

জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বেলজিয়ামের জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র ‘টিনটিন’কে নিয়ে একটি আয়োজন করেছে। পাশাপাশি কয়েকটি ‘পাপেট শো’ হয়েছে।

জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে একটি অ্যাটারি কনসোল। এটি ১৯৮০–এর দশকের ভিডিও গেমের প্রাথমিক সংস্করণ।

৩১ বছর বয়সী মেহদি ফাতিহি একজন ফিটনেস প্রশিক্ষক। তিনি জাদুঘরটি দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘মনে পড়ে, এসব খেলনা দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় বা ঘরে খেলতাম। আজকালের শিশুদের কারও কারও হয়তো মনে হতে পারে, আমাদের পুতুলগুলো বোকা বোকা ও খুবই সাধারণ ছিল; কিন্তু এসব খেলনা আমাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।’