সৌদি আরবে আজ সোমবার ভোরে মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পথে ভারতীয় ওমরাহযাত্রীবাহী একটি বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে বাসের ৪২ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাসের সঙ্গে একটি ডিজেল ট্যাঙ্কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে দ্রুত সেখানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে।
প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহত ওমরাহযাত্রীদের মধ্যে ভারতের হায়দরাবাদের অনেক নারী ও শিশু যাত্রী ছিল। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ১০টি শিশু থাকতে পারে। অবশ্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখনো সংখ্যা যাচাই করছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, বাসটি ওমরাহযাত্রীদের নিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় যাচ্ছিল। সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাসটিতে বেশির ভাগই তেলেঙ্গানা রাজ্যের যাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাস এবং জেদ্দায় কনস্যুলেট অফিস ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয় নাগরিক ও তাঁদের পরিবারকে পুরো সহযোগিতা দিচ্ছে। জয়শঙ্কর শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রেভান্ত রেড্ডি দিল্লিভিত্তিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা যেন দূতাবাসের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেন।
হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, বাসটিতে আগুন লাগার সময় ৪২ জন ওমরাহযাত্রী ছিলেন। তিনি আরও বলেন, তিনি রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন (ডিসিএম) আবু মাথেন জর্জের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, যিনি তাঁকে দুর্ঘটনা–সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ওয়াইসি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন মৃতদেহগুলো দ্রুত ভারতে ফিরিয়ে আনা হয় এবং আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়।
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে মদিনা থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে মুহারাস/মুফরিহাত নামের এলাকার কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্যাঙ্কারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর যখন বাসটিতে আগুন ধরে যায়, তখন অনেক যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন। এ কারণে তাঁদের বাস থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ খুব কম ছিল।
উদ্ধারকারী দলগুলো বলেছে, ঘটনাস্থলের দৃশ্য বেশ ভয়াবহ। বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, একজন যাত্রী কোনোমতে বেঁচে গেছেন, তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সৌদি আরবের সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পাশাপাশি ভারতীয় কর্মকর্তা ও ওমরাহ এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরাও উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে এবং দেশে অপেক্ষমাণ পরিবারগুলোর জন্য তথ্য সমন্বয় করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
হায়দরাবাদে ওমরাহযাত্রীদের আত্মীয়স্বজন এখন উদ্বেগ–আশঙ্কা নিয়ে খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা তাঁদের ট্রাভেল অপারেটর ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
পবিত্র ওমরাহযাত্রা বহু পরিবারের জন্য এখন হৃদয়বিদারক এক অনিশ্চয়তায় পরিণত হয়েছে।