গাজা নগরীতে ইসরায়েলি হামলার পর একটি ধ্বংসাবশেষ হাতে এক ফিলিস্তিনি যুবক, ৫ আগস্ট ২০২৫
গাজা নগরীতে ইসরায়েলি হামলার পর একটি ধ্বংসাবশেষ হাতে এক ফিলিস্তিনি যুবক, ৫ আগস্ট ২০২৫

আগ্রাসনের ৭০০ দিন

গাজা নগরীর প্রায় ৪০ শতাংশ দখলের দাবি ইসরায়েলের

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার গাজা নগরীর কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ইসরায়েলের সেনারা। তারা নগরীর প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি করেছে। গতকাল শুক্রবার গাজার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম এই নগরীর একটি ১২ তলা ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। একটি পাঁচতলা ভবনেরও একাংশ বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে।

গতকাল গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের ৭০০তম দিন পূর্ণ হয়েছে। এদিন গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা শুরুর পর থেকে অন্তত ১৯ হাজার ৪২৪টি শিশু নিহত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ৫২ মিনিটে একটি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। নিহত শিশুদের মধ্যে নবজাতক ও এক বছরের কম বয়সীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার।

একই সময়ে গাজায় ১০ হাজার ১৩৮ জন নারী ও ৪ হাজার ৬৯৫ জন বয়স্ক মানুষ নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ নিহতের মধ্যে নারী ও বয়স্ক মানুষ প্রায় ২৩ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নিহত হয়েছেন ২৯ হাজার ৯৭৫ জন বা ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

গাজায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে হামাস বা অন্যান্য ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা কত, তা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়নি। তবে সম্প্রতি ইসরায়েলের ফাঁস হওয়া এক নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজায় নিহত ব্যক্তিদের প্রায় ৮৩ শতাংশই বেসামরিক মানুষ।

১২ তলা ভবন ধ্বংস

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র গত বৃহস্পতিবার বলেন, তারা এখন গাজা নগরীর ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ইসরায়েলি হামলা শুরুর আগে এই নগরীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করতেন।

গত মাসের শুরুর দিকে গাজা নগরী পুরোপুরি দখলের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যে প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার নগরীর উপকণ্ঠে বিমান ও গোলা হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনারা। তারা ধীরে ধীরে নগরীর কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।

এই পরিস্থিতিতে গতকাল বোমা হামলা চালিয়ে নগরীর দ্য ম্যানেজমেন্ট অব মুশতাহা টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েল। এতে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছেন।

গাজা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, শুক্রবার ইসরায়েলের হামলায় গাজা নগরীসহ গাজায় উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৬৯ জন নিহত ও ৪২২ আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।

ইসরায়েলের দাবি, ম্যানেজমেন্ট অব মুশতাহা টাওয়ারে হামাসের যোদ্ধারা অবস্থান করছিল। কিন্তু টাওয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এতে কোনো যোদ্ধা ছিল না। এখানে অবস্থানকারীদের সবাই ছিলেন বেসামরিক ফিলিস্তিনি।

গাজা নগরীতে আরেকটি পাঁচতলা ভবনের বাসিন্দাদেরও সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ভবনটির একাংশে বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

সামরিক বিশেষজ্ঞ ইলাইজা ম্যাগনিয়ার আল–জাজিরাকে বলেন, নিজেদের সেনাদের হতাহতের সংখ্যা কমাতে গাজা নগরীর বহুতল ভবন লক্ষ্যবস্তু করছে ইসরায়েলে। তবে বহুতল ভবন নিশানা করার অন্যান্য লক্ষ্য রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। যেমন বেসামরিক বাসিন্দাদের ভীতসন্ত্রস্ত করা, যাতে তারা এই নগরী ছেড়ে চলে যায়।

গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ‘গাজার নরকদ্বারের তালা এখন খুলে ফেলা হচ্ছে। দ্বারটি খোলার পর আর বন্ধ হবে না এবং (ইসরায়েলি সামরিক) কার্যক্রম তীব্রতর হবে।’