Thank you for trying Sticky AMP!!

নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ২৬ জানুয়ারি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন

আইসিজের আদেশ মানতে ইসরায়েল কতটা বাধ্য?

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশ দেননি। এ আদেশে গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের অন্তর্নিহিত স্বীকৃতির বিষয়টি প্রতীয়মান। তবে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আইনি প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার পরিস্থিতি যে বিপর্যয়কর, তা–ও স্বীকার করে নিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে আদালতের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে পরিস্থিতির ‘আরও অবনতির মারাত্মক ঝুঁকি’ ছিল বলে আদালত তাঁর আদেশে বলেছেন। কেননা, এ ধরনের অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

আইসিজের বিচারক প্যানেলের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোয়ান ডানেহিউ রায় পড়া শুরুর পরপরই গাজার দুর্দশার বিষয়টি আদালত যে কতটা গুরুতরভাবে বিবেচনায় নিয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে করে পুরো মামলাটি নস্যাৎ করার চেষ্টায় ইসরায়েলের দৌড়ঝাঁপ বিফল হয়ে পড়ে।

এর ফলে এ আদেশ বিস্তৃত পরিসরে দক্ষিণ আফ্রিকার দাবি করা নয়টি ‘অস্থায়ী পদক্ষেপের’ বেশির ভাগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

১৭ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আদালত প্রায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২৬ জানুয়ারি এ আদেশ দিয়েছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি এড়াতে এবং গাজায় অসহনীয় জীবনযাত্রার সৃষ্টি বা ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের জন্ম রোধ এড়াতে ইসরায়েলকে তার সক্ষমতার মধ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে গণহত্যার পক্ষে জনসাধারণকে দেওয়া উসকানি ‘প্রতিরোধ’ ও ‘শাস্তির নিদান’ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের আরও কিছু করতে হবে বলেও আদালত আদেশে বলেছেন। গাজায় মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ‘তাৎক্ষণিক ও কার্যকর ব্যবস্থা’ নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়নি বটে, তবে যতগুলো আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ধরন আমূল বদলে যাবে।

Also Read: যুদ্ধবিরতির উল্লেখ না থাকাটা ‘হতাশার’

যদিও ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা এই বলে যুক্তি তুলে ধরছে, বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য হামাস দায়ী।

ইসরায়েলের দাবি, হামাস গাজার ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোসহ শরণার্থীশিবিরের ভেতর ও ভূগর্ভ থেকে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এত করে ইসরায়েলের পক্ষে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি এড়ানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

দেশটি আরও বলছে, বিপদ এড়াতে বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করার জন্য ব্যাপকভাবে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাদের সেনাবাহিনী ‘বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক’—এ বিশ্বাস তার দেশের ইহুদি নাগরিকদের মধ্যে প্রায় সর্বজনীনভাবে রয়েছে।

তবে গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলমান ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের জেরে গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বাড়িঘর হারানো মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে; জীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই, মানবিক সহায়তা চরমভাবে অপর্যাপ্ত, স্বাস্থ্যসেবা এরই মধ্যে প্রায় পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গড়াচ্ছে।

Also Read: আইসিজের রায়ে সব কটি বিষয়ের বিপক্ষে কেন ভোট দিলেন উগান্ডার বিচারক

আইসিজের বিচারক প্যানেলের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোয়ান ডানেহিউ রায় পড়া শুরুর পরপরই গাজার দুর্দশার বিষয়টি আদালত যে কতটা গুরুতরভাবে বিবেচনায় নিয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে করে পুরো মামলাটি নস্যাৎ করার চেষ্টায় ইসরায়েলের দৌড়ঝাঁপ বিফল হয়ে পড়ে।

 বিচারক ডানেহিউ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিরা যে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, তার একটি করুণ সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির শিশুদের দুর্দশা ‘হৃদয়বিদারক’।

 যদিও গণহত্যার বিষয়ে আদালতের চূড়ান্ত রায় নয় এটি—এতে হয়তো কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।

 তবে আদালত যেসব আদেশ দিয়েছেন, তার মধ্যে গাজার ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। একই সঙ্গে বিচারকেরা যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা দক্ষিণ আফ্রিকার মূল অভিযোগ বিবেচনায় নিয়েছেন, তা স্পস্ট হয়েছে।

Also Read: গাজায় ইসরায়েলের হামলায় মৃত্যু ২৬ হাজার ছাড়াল

 আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে কী জবাব দেবে, ইসরায়েলকে এখন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইসিজের আদেশ মানা বাধ্যতামূলক, কিন্তু তা কার্যকর করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ইসরায়েল চাইলে বিচারকদের এ নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষাও করতে পারে।

গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে—বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এসব সামনে তুলে ধরে ইসরায়েল যুক্তি দিতেই পারে যে এরই মধ্যে তারা আদালতের আদেশ পালনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে।

Also Read: আইসিজের নির্দেশের পর যা বলল হামাস–ইসরায়েল

তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও (যদিও এখনো সে রকম কোনো লক্ষণ নেই) ইসরায়েল যে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত—সেই বাস্তবতা বহাল থাকবে। যে অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আইসিজে মনে করেন, আপাতদৃষ্টে তা বিশ্বাসযোগ্য এবং সে কারণে বিষয়টি আরও বিশদভাবে বিবেচনায় নেওয়ার যোগ্য।

 বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট গণহত্যার ভস্ম থেকে জন্ম নেওয়া ইসরায়েলকে এখন আদালতের রায় না দেওয়া পর্যন্ত আইনি ছায়ায় থাকতে হবে।