গাজায় রওনা হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত আপডেট দিতেন ম্যাডেলিন হাবিব
গাজায় রওনা হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত আপডেট দিতেন ম্যাডেলিন হাবিব

মুচলেকায় সই করেননি বলে কনশেনস জাহাজের ক্যাপ্টেন ম্যাডেলিনকে আটকে রেখেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক জাহাজ কনশেনসের ক্যাপ্টেন ম্যাডেলিন হাবিবকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। মুচলেকায় স্বাক্ষর না করায় তাঁকে ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগারে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দী’ করে রাখা হয়েছে।

ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে সমুদ্রপথে গাজা অভিমুখে রওনা হওয়া দ্বিতীয় নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’–এর অংশ ছিল কনশেনস। এটি ছিল বহরের সবচেয়ে বড় জাহাজ। আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই জাহাজেই ছিলেন। ইসরায়েল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তুরস্ক হয়ে তিনি আজ শনিবার ভোরে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন।

গতকাল শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ‘মুচলেকায় সই করা না পর্যন্ত’ ম্যাডেলিন হাবিবকে মুক্তি দেবে না ইসরায়েল। গাজার ওপর ইসরায়েলের আরোপ করা অবরোধ অবৈধভাবে ভাঙার চেষ্টা করেছেন অভিযোগ তুলে ৮ অক্টোবর বুধবার ইসরায়েলি বাহিনী কনশেনস জাহাজটি আটক করে। জাহাজের আরোহীদের বন্দী করে কেৎজিয়েত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফ্রিডম ফ্লোটিলার যে কয়টা জাহাজ ইসরায়েল আটক করেছে সেগুলোর গ্রেপ্তার আরোহীদের বৃহস্পতিবার সকালে শুনানির মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরে একটি মুচলেকায় সই রেখে তাদের তুরস্কে বিতাড়িত করে ইসরায়েল।

ম্যাডেলিন হাবিব একজন অভিজ্ঞ নাবিক। আটক হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার কনস্যুলার কর্মকর্তারা কারাগারে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তাদের বলেছেন, তাঁকে অপমান করা হয়েছে। তবে তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হননি।

ম্যাডেলিন কর্মকর্তাদের আরও বলেন, ইসরায়েলে তাঁকে কনস্যুলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও তিনি পেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে শুধু বাসি রুটি ও কলের ঘোলাটে পানি (ট্যাপ ওয়াটার) খেতে দেওয়া হয়েছে।

ম্যাডেলিনকে কারাগারের যে কক্ষে রাখা হয়েছে, সেখানে বিছানায় ছারপোকা আছে বলেও তিনি কর্মকর্তাদের কাছে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এও বলেছেন, হোস্টেলে এবং নৌকায় এর থেকেও খারাপ পরিস্থিতিতে তাঁর ঘুমানোর অভ্যাস আছে।

অতীতে দেখা গেছে, মুচলেকায় সই করুক বা না করুক, আটকের ৭২ ঘণ্টা পর বন্দীদের বিতাড়িত করে ইসরায়েল।

ফ্রিডম ফ্লোটিলার যে কয়টি জাহাজ ইসরায়েল আটক করেছে, সেগুলোর গ্রেপ্তার আরোহীদের বৃহস্পতিবার সকালে শুনানির মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরে একটি মুচলেকায় সই রেখে তাদের তুরস্কে বিতাড়িত করে ইসরায়েল।

অস্ট্রেলিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য দপ্তরের (ডিএফএটি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাডেলিন হাবিব মুচলেকায় সই করতে রাজি হননি। কর্মকর্তারা আরও বলেন, ইসরায়েলের অভিবাসন কর্মকর্তারা তাঁদের নিশ্চিত করে বলেছেন, যাঁরা মুচলেকা সই করতে রাজি হবেন না, তাঁদের অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রাখা হবে।

সাধারণত এমনটা হয় না বলেও জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, অতীতে দেখা গেছে, মুচলেকায় সই করুক বা না করুক, আটকের ৭২ ঘণ্টা পর বন্দীদের বিতাড়িত করা হয়।

বিভিন্ন সূত্র বলেছে, ফ্লোটিলার অন্তত একজন সদস্য মুচলেকায় সই না করেও মুক্তি পেয়েছেন।

গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়া বলেছে, আটক ব্যক্তিদের যে মুচলেকায় সই করতে হয়েছে সেখানে খুব সম্ভবত তাদের এই বলে স্বীকারোক্তি দিতে হয়েছে, তাঁরা গাজার ওপর ইসরায়েলের নৌ অবরোধ অবৈধভাবে ভাঙার চেষ্টা করেছে।

বিভিন্ন সূত্র বলেছে, ফ্লোটিলার অন্তত একজন সদস্য মুচলেকায় সই না করেও মুক্তি পেয়েছেন।

গতকাল অস্ট্রেলিয়ার সিনেটে একটি অধিবেশনে সিনেটর নিক ম্যাককিম দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য অধিদপ্তরকে প্রশ্ন করেন, ম্যাডেলিন হাবিবকে নিয়ে তাদের কোনো ধরনের উদ্বেগ আছে কি না। গোপনীয়তার কথা বলে ডিএফএটি থেকে তাঁর ব্যাপারে তথ্য দেওয়া হয়নি।

তবে ডিএএফটির কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারি ছুটির কারণে আগামী বুধবার পর্যন্ত তাঁরা হয়তো ম্যাডেলিনের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে তথ্যের জন্য গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশটিতে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস এবং ইসরায়েলে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।