সৌদি আরবে চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে দেশটিতে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সংখ্যা পৌঁছেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব মৃত্যুদণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটিকে দেশটির ইতিহাসের ‘রক্তক্ষয়ী সময়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রাইভের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে অন্তত ৩৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটিতে এটি এক বছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩৪৫।
চলতি বছর যাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই মাদকসংক্রান্ত অহিংস অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন। জাতিসংঘ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে বর্ণনা করেছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অর্ধেকের বেশিই বিদেশি। তাঁদের মধ্যে পাকিস্তান, মিসর ও জর্ডানের নাগরিকেরাও রয়েছেন।
বিবিসির মন্তব্যের অনুরোধে সৌদি কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, সৌদি আরবে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। রিপ্রাইভের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান জিদ বাসিউনি বলেন, ‘সৌদি আরব এখন “ধরাকে সরা জ্ঞান” করছে। তারা কার্যত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থাকে উপহাস করছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা দেশটিতে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা ও দণ্ড কার্যকর করার আগে পরিবারকে অবহিত করা জরুরি।মরিস টিডবল-বিঞ্জ, বিচারবহির্ভূত হত্যাবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত
এ বছর যাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও দুজন যুবক রয়েছেন, যাঁরা গ্রেপ্তারের সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। আবদুল্লাহ আল-দেরাজি ও জালাল আল-লাব্বাদ নামের ওই দুই যুবককে শিয়া সম্প্রদায়ের হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দণ্ডিত করা হয়। এ ছাড়া গত জুনে সাংবাদিক তুর্কি আল-জাসিরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ঘটনাটিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছে ইউনেসকো।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রেকর্ডকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছে। সংস্থাটির গবেষক জোয়ি শেয়া বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ও বিনোদন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আড়াল করার চেষ্টা করছে।
চলতি বছর যাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই মাদকসংক্রান্ত অহিংস অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন। জাতিসংঘ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে বর্ণনা করেছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অর্ধেকের বেশিই বিদেশি। তাঁদের মধ্যে পাকিস্তান, মিসর ও জর্ডানের নাগরিকেরাও রয়েছেন।
এদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত মরিস টিডবল-বিঞ্জ অবিলম্বে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা ও দণ্ড কার্যকর করার আগে পরিবারকে অবহিত করা জরুরি।