ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ২৭ জুলাই ২০২৫
ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ২৭ জুলাই ২০২৫

গাজায় অপুষ্টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে, সতর্ক করল ডব্লিউএইচও

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অপুষ্টির মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা বিপজ্জনক গতিপথে রয়েছে।

দীর্ঘ বিরতির পর গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলার কার্যক্রম আবার শুরুর পর ডব্লিউএইচওর কাছ থেকে এ সতর্কবার্তা এল।

গতকাল রোববার জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলে। এর আগে ইসরায়েল জানায়, তারা গাজার কিছু অংশে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে যুদ্ধ বন্ধ রাখবে। যাকে তারা বলছে, ‘কৌশলগত বিরতি’। এ বিরতির আওতায় জাতিসংঘের ত্রাণবহরের জন্য করিডর তৈরি করে দেওয়ার কথাও জানায় তারা।

ইসরায়েলের দাবি, গাজাবাসীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখার যে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ উঠেছে, তা খণ্ডন করতেই এ বিশেষ ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের ভাষ্য, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে এমন অভিযোগ তুলে বিশ্বের সামনে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।

জর্ডানের সামরিক বাহিনী বলেছে, গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কাজ করছে। ইতিমধ্যে তারা উড়োজাহাজ দিয়ে তিন দফায় গাজায় ২৫ টন ত্রাণসামগ্রী ফেলেছে। এ ছাড়া মিসর হয়ে ত্রাণবাহী লরির একটি বহর গাজায় প্রবেশ করেছে। আরেকটি বহর ঢোকার কথা রয়েছে জর্ডান থেকে।

তবে গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ত্রাণবহর যে পথে অগ্রসর হচ্ছিল, তার পাশেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৯ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এমনকি গত শনিবার যুদ্ধ সাময়িক বন্ধের বিষয়টি কার্যকরের এক ঘণ্টার মাথায় গাজার একটি আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে। ২৭ জুলাই ২০২৫

স্থানীয় সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলের নেতজারিন করিডরের সালাহ আল-দিন সড়কে জাতিসংঘের ত্রাণবহরের অপেক্ষায় বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সেখানেই গুলির ঘটনা ঘটে। হতাহত ব্যক্তিদের নুসাইরাতের আল-আওদা হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান হাসপাতালটির একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সেনাদের দিকে কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তি এগিয়ে আসছিলেন। তাই সেনারা সতর্কবার্তা হিসেবে গুলি ছোড়েন। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে তারা কিছু জানে না।

অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে না দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে ইসরায়েল। এর মধ্যে গাজায় চরম খাদ্যসংকট ও অনাহারের ঘটনা নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। এ চাপে পড়ে ইসরায়েল এখন কিছুটা নমনীয় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েক দিন ধরে না খেয়ে দিন পার করছে। আর প্রতি চারজনের একজন দুর্ভিক্ষসদৃশ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণ ফেলা চরম দুর্ভোগ লাঘবে সহায়ক হবে। তবে গাজায় ত্রাণসহায়তা পাঠানোর একমাত্র কার্যকর ও টেকসই উপায় হলো স্থলপথ।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। তিনি বলেছেন, প্রতিদিন গাজায় আরও ধ্বংস, আরও হত্যাকাণ্ড ও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরও অমানবিকতা চলছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন গাজায় আরও ত্রাণ পাঠাবে। তবে তিনি এ কথাও বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয়।