ফিলিস্তিনি শিশুর মুখে হাসি। গাড়িতে বোঝাই জিনিসপত্রের ওপর বসে আছে সে। যুদ্ধবিরতির পর তাকে নিয়ে উত্তর গাজায় নিজ ঠিকানায় ফিরছে পরিবার। শুক্রবার গাজার মধ্যাঞ্চলে
ফিলিস্তিনি শিশুর মুখে হাসি। গাড়িতে বোঝাই জিনিসপত্রের ওপর বসে আছে সে। যুদ্ধবিরতির পর তাকে নিয়ে উত্তর গাজায় নিজ ঠিকানায় ফিরছে পরিবার। শুক্রবার গাজার মধ্যাঞ্চলে

বিশ্লেষণ

ইসরায়েলি দখলদারির অবসান ছাড়া স্থায়ী শান্তি আসবে না

ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত বন্ধে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে কিছু কিছু পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে খুশির খবর। গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) বন্ধে এগুলো বড় পদক্ষেপ। ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে হামাস এ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

এর আগেও ইসরায়েলের সঙ্গে অনেকগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল হামাসের। তবে ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করায় সেগুলো স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এবারের চুক্তিপ্রক্রিয়ায় অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পক্ষ সংশ্লিষ্ট রয়েছে। চুক্তিতে নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি অন্তত আটটি আরব ও মুসলিম দেশ চুক্তিতে পৌঁছাতে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা করা যে ২০ দফার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, সেটার প্রাথমিক খসড়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হস্তক্ষেপে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাকি পক্ষগুলো চুক্তির কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে গেছে। নানা দিক থেকে চাপে থাকা হামাসও শেষ পর্যন্ত চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি ট্রাম্পের ২০ দফা নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তা বেশ কৌশলী।

ইসরায়েলের দখলদারি যত দিন চলবে, তত দিন ওই অঞ্চলের উত্তেজনা শেষ হবে না। বরং ইসরায়েলের দখলদারি অব্যাহত থাকলে সেখানে আবারও নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে। তাই ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি উদ্যোগ স্থায়ী হতে হলে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের চলমান দখলদারির অবসান হতে হবে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কিছু কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। গাজা ভূখণ্ডে অবস্থানরত ইসরায়েলি সেনারা বর্তমান অবস্থান থেকে চুক্তিতে উল্লেখ করা নির্দিষ্ট এলাকায় যেতে শুরু করেছেন। বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর অনেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছেন। গাজায় চাহিদামতো ত্রাণবাহী ট্রাক ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিগগিরই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকেও প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ধাপে ধাপে চুক্তি বাস্তবায়িত হলে তা নেতানিয়াহু সরকারের জন্য একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হবে। কারণ, গাজায় তাঁর যুদ্ধের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল, হামাসসহ উপত্যকাটির অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল করা। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও সরিয়ে দিয়ে উপত্যাকাটি দখলে নেওয়া। এর কোনোটিই আপাতত সম্ভব হয়নি।

এবারের চুক্তিপ্রক্রিয়ায় অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পক্ষ সংশ্লিষ্ট রয়েছে। চুক্তিতে নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি অন্তত আটটি আরব ও মুসলিম দেশ চুক্তিতে পৌঁছাতে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে।

গাজায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের জাতিগত নিধন বিশ্বের মানুষ দেখেছে। ফিলিস্তিনিরা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে। কিন্তু স্বাধীন দেশের স্বপ্ন এখনো তাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। যত দিন না স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, তত দিন ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম চলবে। ইসরায়েলের অবিরাম হামলা, হত্যাযজ্ঞ ও দুর্ভিক্ষ উপেক্ষা করে গাজাবাসী যে প্রাণশক্তির পরিচয় দিয়েছে, তাতে করে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম যে অব্যাহত থাকবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

অবরোধসহ অন্যান্য বিধিনিষেধের মাধ্যমে গাজা উপত্যকাকে উন্মুক্ত কারাগার বানিয়ে রেখে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের প্রতিমুহূর্তের নিশানা বানিয়ে, ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি, স্থাপনা, বাগান ধ্বংস করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

ইসরায়েলের দখলদারি যত দিন চলবে, তত দিন ওই অঞ্চলের উত্তেজনা শেষ হবে না। বরং ইসরায়েলের দখলদারি অব্যাহত থাকলে সেখানে আবারও নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে। তাই ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি উদ্যোগ স্থায়ী হতে হলে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের চলমান দখলদারির অবসান হতে হবে। সেটা না হলে অঞ্চলটিতে শান্তি অধরা রয়ে যাবে।