একটি স্মরণসভায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁ থেকে দ্বিতীয়), তাঁর স্ত্রী সারা (সর্ব বাঁয়ে), প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল হারজগ
একটি স্মরণসভায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁ থেকে দ্বিতীয়), তাঁর স্ত্রী সারা (সর্ব বাঁয়ে), প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল হারজগ

দুর্নীতির মামলায় প্রেসিডেন্টের কাছে নেতানিয়াহুর ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুর্নীতিসহ তিন মামলার বিচার থেকে অব্যাহতি চেয়ে আজ রোববার প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন। আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ বিচার দেশের ‘সংহতিকে নষ্ট’ করছে।

প্রেসিডেন্ট হারজগের কার্যালয় এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর আবেদনকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই আবেদনের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। প্রাসঙ্গিক সব মতামত পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এ আবেদনের বিষয়ে বিবেচনা করবেন।’

চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার অনুরোধ জানিয়ে হারজগের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এতে তিনি লিখেছিলেন,‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পুরোপুরি ক্ষমা করে দিতে আমি আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি যুদ্ধের সময় শক্তিশালী এবং দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসরায়েলকে এখন শান্তির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন।’

আজ এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। এতে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ছয় বছর ধরে বিচার চলছে এবং তা আরও অনেক বছর ধরে চলার সম্ভাবনা রয়েছে।’

খালাস পাওয়া পর্যন্ত বিচার চালিয়ে যেতে প্রস্তুত জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কিন্তু নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মতো জাতীয় স্বার্থের কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না। ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে বহু চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।’

ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘এই বিচার অব্যাহত থাকায় আমরা (ইসরায়েল) ভেতর থেকে ভেঙে পড়ছি, তীব্র বিভাজন তৈরি হচ্ছে, বিভেদের মাত্রা বাড়ছে।’

জালিয়াতি, ঘুষ এবং আস্থা ভঙ্গের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলায় বিচার চলছে। এর মধ্যে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সারার বিরুদ্ধে এক মামলায় অভিযোগ করা হয়, তাঁরা রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েকজন ধনকুবেরের কাছ থেকে মূল্যবান বিলাসবহুল সামগ্রী নিয়েছেন। এর মধ্যে চুরুট, গয়না ও শ্যাম্পেনের মতো বিলাসবহুল সামগ্রী রয়েছে, যার অর্থমূল্য ২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বেশি।

অন্যদিকে নিজের বিষয়ে আরও ইতিবাচক প্রতিবেদন করার জন্য ইসরায়েলের দুটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেনদরবার করার অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান বিচার নিয়ে তাঁর সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন বেড়েছে। নেতানিয়াহু ও তাঁর সমর্থকদের দাবি, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এই বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

৭৬ বছর বয়সী নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্বপালনকারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে তিনি সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর তিন মেয়াদে তিনি ১৮ বছরের বেশি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২২ সালের শুরুতে নেতানিয়াহুর বর্তমান মেয়াদ শুরু হয়। তখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি বিচার বিভাগে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব দেন। এটা নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও প্রতিবাদ শুরু হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরুর কারণে বিক্ষোভে ভাটা পড়ে। সমালোচকদের মতে, নেতানিয়াহুর সংস্কার প্রস্তাব আদালতকে দুর্বল করবে।

ডানপন্থী লিকুদ পার্টির নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরবর্তী নির্বাচনেও লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২৬ সালের শেষের দিকে দেশটিতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।