
তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর স্বজন ও দলীয় কর্মীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। অনলাইনে তাঁর মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়েছে। এ অবস্থায় বাবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইমরানের দুই ছেলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর (ইমরান) বর্তমান অবস্থা নিয়ে সম্ভবত কোনো সত্য গোপন করছে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বজনদের প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে দিতে হবে।
‘তাঁকে সচেতনভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। তাঁর জন্য এটা আতঙ্কের। তিনি পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং তাঁরা জানেন, গণতান্ত্রিক পথে তাঁরা তাঁকে (ইমরান) পরাজিত করতে পারবেন না।’
কিন্তু তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আদিয়ালা কারা কর্তৃপক্ষ ইমরানের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দিচ্ছে না। ইমরানের তিন বোন কারাগারের সামনে সড়কে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান করার পরও ইমরানের দেখা পাননি, বরং তাঁদের জোর করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ইমরান খানকে নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এই পিটিআই নেতাকে আদিয়ালা কারাগার থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়েছে।
যদিও গত বুধবার এসব আশঙ্কাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইমরান এখনো (আদিয়ালা) কারাগারেই আছেন, সুস্থও আছেন।
এ নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন ইমরান খানের ছেলে কাসিম খান। তিনি বলেন, পরিবার থেকে ইমরান খানের সঙ্গে সরাসরি বা বিশ্বাসযোগ্য কোনো যোগাযোগ এখনো সম্ভব হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে কাসিম খান আরও বলেন, ‘আপনার বাবা নিরাপদে আছেন, আহত হয়েছেন, এমনকি তিনি আদৌ বেঁচে আছেন কি না, তা জানতে না পারা একধরনের মানসিক অত্যাচার।’
কাসিম বলেন, তাঁরা শেষবার তাঁদের বাবাকে দেখেছেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। সে বছর একটি গুপ্তহত্যার চেষ্টা থেকে ইমরান বেঁচে গেলে আহত বাবাকে দেখতে তাঁরা পাকিস্তানে এসেছিলেন।
কয়েক মাস ধরে বাবার সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে কোনো বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমে যোগাযোগ হয়নি বলেও জানান কাসিম খান।
কাসিম খান আরও বলেন, ‘আজ আমাদের কাছে তাঁর অবস্থার সম্পর্কে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্যই নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় হলো আমাদের কাছ থেকে কিছু সত্য লুকানো হচ্ছে।’
পরিবার থেকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বারবার ইমরান খানকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ দেওয়ার আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে অনুমতি মেলেনি বলেও জানান ইমরান খানের ছেলে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ইমরান খানের স্বাস্থ্য ভালো আছে। ইমরানকে অন্য কোনো কারাগারে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও তিনি কিছু শোনেননি।
৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে কারাবন্দী আছেন। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েছে এবং কয়েকটি মালায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা পেয়েছেন। যদিও ইমরান দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইমরানের পরিবারের দাবি, যোগাযোগের অভাবই তাদের ভয় বাড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, সচেতনভাবে ইমরানকে জনসমক্ষ থেকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ইমরানের নাম বা ছবি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারাবন্দী হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অনলাইনে ইমরানের একটি মাত্র ঝাপসা ছবি পাওয়া যায়। ওই ছবি আদালত প্রাঙ্গণে তোলা।
সে সময়ের ছবি সারা জীবন আমার মনে থাকবে। বাবাকে ওই অবস্থা দেখা এমন কিছু, যা আপনি সারা জীবন ভুলতে পারবেন না। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, তিনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে উঠবেন। এখন কয়েক সপ্তাহ ধরে পূর্ণ নীরবতা এবং তাঁর বেঁচে থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়া, ওই স্মৃতিকে আরও ভারী করে তুলেছেকাসিম খান
ইমরান খানের ছোট ছেলে কাসিম বলেন, ‘তাঁকে সচেতনভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। তাঁর জন্য এটা আতঙ্কের। তিনি পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং তাঁরা জানেন, গণতান্ত্রিক পথে তাঁরা তাঁকে (ইমরান) পরাজিত করতে পারবেন না।’
কাসিম ও তাঁর বড় ভাই সুলেইমান ইসা খান তাঁদের মা জেমিমা গোল্ডস্মিথের সঙ্গে লন্ডনে বসবাস করেন। পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে দুই ভাই দূরে আছেন।
কাসিম বলেন, তাঁরা শেষবার তাঁদের বাবাকে দেখেছেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। সে বছর একটি গুপ্তহত্যার চেষ্টা থেকে ইমরান বেঁচে গেলে আহত বাবাকে দেখতে তাঁরা পাকিস্তানে এসেছিলেন।
ইমরান খানের ছোট ছেলে বলেন, ‘সে সময়ের ছবি সারা জীবন আমার মনে থাকবে। বাবাকে ওই অবস্থায় দেখা এমন কিছু, যা আপনি সারা জীবন ভুলতে পারবেন না। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, তিনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে উঠবেন। এখন কয়েক সপ্তাহ ধরে পূর্ণ নীরবতা এবং তাঁর বেঁচে থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়া, ওই স্মৃতিকে আরও ভারী করে তুলেছে।’
পরিবার থেকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বারবার ইমরান খানকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ দেওয়ার আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে অনুমতি মেলেনি।
কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে আবার দেখা করার অনুমতি পেতে তাঁর পরিবার দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করছে। তাঁরা নানা মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।
কাসিম বলেন, ‘এটা কেবল রাজনৈতিক বিরোধ নয়, এটি জরুরি মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রতিটি দিক দিয়ে চাপ তৈরি করতে হবে। আমরা তাঁর কাছ থেকে শক্তি পাই, কিন্তু আমাদের জানতে হবে যে তিনি নিরাপদ আছেন।’