বিশ্বে মানুষের কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে দূষণ ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ত্বরান্বিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাটা এখন জরুরি অগ্রাধিকারের বিষয়। আর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে সবুজ বা পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনগুলো বড় পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করছে। এগুলো পৃথিবীকে বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেধাস্বত্ব–বিষয়ক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান শেইজার ওলসেন বিশ্বে উল্লেখযোগ্য ১০টি সবুজ উদ্ভাবনের তালিকা করেছে। ওই তালিকা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সূর্যের আলোকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সৌর প্যানেল যুগান্তকারী এক উদ্ভাবন। এটি কয়লা বা তেলের মতো অনবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরতা কমায়। মার্কিন প্রকৌশলী রাসেল ওহল ১৯৪১ সালে প্রথম সৌরকোষ উদ্ভাবন করেন। এটিকে আধুনিক সৌর ফটোভোলটাইক প্রযুক্তির ভিত্তি বলে বিবেচনা করা হয়।
এ ক্ষেত্রে বায়ুশক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এটি সবচেয়ে কার্যকর নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসগুলোর একটি। ১৮৮৭ সালে চার্লস এফ. ব্রাশ প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী উইন্ড টারবাইন নির্মাণ করেন।
বিদ্যুৎ–চালিত হওয়ায় এসব গাড়িতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয় না। এ ধরনের গাড়ির ব্যবহার পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমায়।
১৮৩০-এর দশকে প্রথম পরীক্ষামূলক বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেন স্কটল্যান্ডের উদ্ভাবক রবার্ট অ্যান্ডারসন। এরপর অনেকেই বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে কাজ করেছেন। আধুনিক বৈদ্যুতিক গাড়ি জনপ্রিয়তা পেয়েছে টেসলা ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের হাত ধরে।
ভার্টিক্যাল ফার্মিং হলো এমন এক আধুনিক চাষপদ্ধতি, যেখানে কোনো উঁচু স্থাপনা বা কাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উল্লম্বভাবে বা স্তরে স্তরে চাষ করা হয়। এ পদ্ধতিতে চাষ করতে সাধারণত মাটি লাগে না। পানি ও জমিও কম লাগে।
সাধারণত শহরের কাছাকাছি এলাকায় এ ধরনের চাষপদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা যায়। সেখানে পরিবহনের প্রয়োজন কম পড়ে এবং কার্বন নিঃসরণ কম হয়। মার্কিন অণুজীববিজ্ঞানী ডিকসন ডেসপোমিয়ার ২০০০-এর দশকের শুরুতে আধুনিক ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ের ধারণা প্রবর্তন করেন।
এ ধরনের প্লাস্টিক প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয় হয়। এগুলো পচনশীল হওয়ায় ভাগাড়ে বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনে। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে মিশে যায় বলে পরিবেশকে দূষিত করে না।
জার্মানিভিত্তিক বহুজাতিক রাসায়নিক কোম্পানি বিএএসএফের একটি দল প্রথম পূর্ণাঙ্গ বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকগুলোর একটির উদ্ভাবক।
জলবিদ্যুৎ বাঁধ পদ্ধতিতে প্রবহমান পানির গতিশক্তিকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জলবিদ্যুৎ বাঁধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাঁধ দিয়ে নদীর পানি সংরক্ষণ করতে হয়। সে পানি একটি জলাধারে জমা রাখা হয়। ওই জলাধার থেকে পানি ছাড়া হলে তা একটি টারবাইনের (পাখাযুক্ত চাকা) মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় ও টারবাইন ঘুরতে থাকে। এ সময় ঘূর্ণনরত টারবাইন একটি জেনারেটরকে সক্রিয় করে তোলে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
এ ব্যবস্থায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে পানি পরিশোধন করা হয়। বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে এটি একটি পরিবেশবান্ধব সমাধান। যেসব জায়গায় পানি শোধনের সরঞ্জাম সীমিত, সেখানে সৌর তাপ ব্যবহার করে পানির পরিশোধনের এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন অশোক গাদগিল। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন পদার্থবিদ।
স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট হলো এমন একটি যন্ত্র, যা বাড়ির ভেতরকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। নেস্টের মতো থার্মোস্ট্যাটগুলো ব্যবহারকারী কেমন অভ্যস্ত, সেটি শিখে ফেলে এবং সে অনুযায়ী ঘর কতটুকু ঠান্ডা থাকবে বা কতটুকু গরম থাকবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে শক্তির অপচয় কম হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হোম অটোমেশন কোম্পানি নেস্ট ল্যাবস ২০১১ সালে প্রথম বাণিজ্যিক স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট চালু করে।
শৈবাল থেকে বিকল্প এ জ্বালানি উৎপাদন করা হয়। এ জ্বালানি প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় পরিচ্ছন্ন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অ্যালগি বায়োফুয়েল প্রক্রিয়া সম্পর্কে লেখা হয়েছে, শৈবালকোষ সূর্যের আলো ব্যবহার করে ফটোসিনথেসিসের মাধ্যমে সরাসরি শক্তি তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় সূর্যের আলো, পানি ও কার্বন ডাই–অক্সাইড কার্যকরভাবে অক্সিজেন ও শৈবাল জীবাশ্মে রূপান্তরিত হয়।
অনেক শৈবাল প্রজাতির দেহে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শক্তিসমৃদ্ধ চর্বি থাকে। আর তা বের করে বায়োফুয়েল হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা তেলের বিকল্প। বাকি শৈবালকে সহজেই পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কারণ, এতে প্রচুর প্রোটিন থাকে।
এ ধরনের প্লাস্টিকখেকো অণুজীব বা মাইক্রোব প্লাস্টিককে ভেঙে ফেলে। এগুলো প্লাস্টিককে এমন উপাদানে পরিণত করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয়। প্লাস্টিক বর্জ্যজনিত দূষণ মোকাবিলায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন।
জাপানি বিজ্ঞানী শোসুকে ইয়োশিদার নেতৃত্বাধীন একটি দল ২০১৬ সালে এমন একটি ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি আবিষ্কার করেন, যা পেট প্লাস্টিক ভাঙতে সক্ষম।