Thank you for trying Sticky AMP!!

সহযাত্রীদের মাংস খাওয়ায় অনুতপ্ত নন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা

বিমান দুর্ঘটনার ৭২ দিন পর একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর রবার্তোসহ ১৬ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়

১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর আন্দিজ পর্বতমালায় ঘটে এক বিমান দুর্ঘটনা। অর্ধশতাব্দী আগের সে দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজের ৪২ জন যাত্রী নিহত হন। এর মধ্যে দুর্ঘটনার দিন প্রাণ যায় ২৯ জনের। এরপর তিন সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে তুষারধসে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়। তবে ‘সৌভাগ্যক্রমে’ বেঁচে যান ১৬ জন যাত্রী।

তবে বেঁচে ফেরা ১৬ যাত্রী ছিলেন জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সেই ১৬ যাত্রী ৭২ দিন পাহাড়ের খাঁজে আটকা পড়ে ছিলেন। খাবার ও পানি ছিল না। দুর্গম পাহাড়ে আটকা এসব যাত্রী বেঁচে থাকার জন্য ‘নরখাদক’ হিসেবে আবির্ভূত হন। বাধ্য হয়ে একসময় সহযাত্রীদের মাংস আগুনে পুড়িয়ে খান।

ওই বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা যাত্রীদের একজন রবার্তো কানেসা। দুর্ঘটনার ৭২ দিন পর একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর রবার্তোসহ ১৬ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বাধ্য হয়ে সহযাত্রীদের মাংস পুড়িয়ে তিনি প্রথম ক্ষুধা নিবারণ করেন। দুর্ঘটনার ৫০তম বার্ষিকীতে বেঁচে ফেরা যাত্রীরা বলেন, এ নিয়ে তাঁদের অনুশোচনা নেই।

দুর্ঘটনার শিকার সে চার্টার্ড উড়োজাহাজটি ছিল উরুগুয়ের বিমানবাহিনীর। একটি রাগবি দল তাঁদের পরিবার, বন্ধুদের নিয়ে উড়োজাহাজটি উরুগুয়ে থেকে চিলি যাচ্ছিল।

পথে বিকট শব্দে উড়োজাহাজটি আন্দিজ পর্বতের ওপর ভেঙে পড়ে। তুষারের মধ্যে আটকা পড়েন জীবিতরা। তিন সপ্তাহ পর আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়।

বিমান দুর্ঘটনার পর দুর্গম পাহাড়ে আটকা ১৬ জন যাত্রী বেঁচে থাকার জন্য সহযাত্রীদের মাংস খান

১৩ অক্টোবর দুর্ঘটনার ৫০তম বার্ষিকীতে ‘মিরাক্যাল ইন দ্য আন্দিজ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে ভয়াবহ সেই ৭২ দিনের কথা স্মরণ করেন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা। তাঁরা বলেন, বেঁচে থাকার জন্যই সহযাত্রীর মাংস খান তাঁরা। প্রথমে তাঁরা চামড়া ও ত্বক ঝলসিয়ে খান। এরপর খান মাংস ও মস্তিষ্ক।  

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট সেই যাত্রীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী সেই সময়ে উরুগুয়ের মন্টেভিডিও মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন রবার্তো। ‘মিরাক্যাল ইন দ্য আন্দিজ’ অনুষ্ঠানে রবার্তো বলেন, প্রাণ যখন যায় যায় অবস্থা, তখন তিনিই প্রথম ভাঙা কাঁচ দিয়ে সহযাত্রীদের মাংস খুবলে তা ঝলসিয়ে খাওয়া শুরু করেন। তাঁকে এভাবে ‘নরখাদক’ রূপে দেখে বেঁচে থাকা অন্যরাও একইভাবে খেতে শুরু করেন।

১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারীদের একটি দল জীবিত যাত্রীদের কাছে পৌঁছান

রবার্তো বলেন, ‘আমাকে পরে সেসব সহযাত্রীর পরিবারের কাছে গিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল।’ বাঁচার জন্য এমন কাজ করায় অনুশোচনা না থাকলেও রবার্তো বলেন, ওই দিন তিনি যদি মারা যেতেন এবং অন্যরা যদি বাঁচার জন্য তাঁর মাংস খেয়ে ফেলতেন, তবে তিনি এটিকে সম্মান হিসেবে বিবেচনা করতেন।

যে ১৬ যাত্রী বেঁচে ফিরেছিলেন, তাঁদের একজন র‌্যামন সাবেললা। ১৩ অক্টোবর সেই অনুষ্ঠানে র‌্যামন বলেন, ‘অবশ্যই মানুষের মাংস খাওয়ার এই ধারণা ছিল ভয়ানক ও ঘৃণ্য। বন্ধুদের মাংস মুখে তোলাও ছিল কঠিন। কিন্তু নিরুপায় আমরা সেটা করতে করতে একসময় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। একটা দিক বিবেচনায় নিলে আমাদের বন্ধুরা ছিল বিশ্বে প্রথম, যারা নিজেদের অঙ্গদান করেছিল। জীবন–মৃত্যুর সে সন্ধিক্ষণে মাংস খাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছিল।’

উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে ভারী তুষারের কারণে তাঁরা কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি। ১০ দিনের মাথায় সেই জীবিতরা রেডিওর মাধ্যমে জানতে পারেন, তাদের উদ্ধারে যে অভিযান শুরু হয়েছিল, তা প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জীবিত সেই যাত্রীরা কোনো চেষ্টা না করে সহযাত্রীদের মাংস খাওয়া শুরু করেননি। রবার্তো ও প্যারাদো সাহায্যের খোঁজে ১০ দিনের যাত্রা শুরু করে শেষে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী একটি দল দুর্ঘটনাস্থল পৌঁছান। পরদিন ১৬ যাত্রীর উদ্ধার করেন। এ ঘটনা নিয়ে পিয়ের্স পল নামে এক লেখক ‘অ্যালাইভ: দ্য স্টোরি অব আন্দিজ সারভাইভার্স’ নামে বই লেখেন। ১৯৯৩ সালে এ ঘটনা নিয়ে হলিউডে একটি চলচ্চিত্রও মুক্তি পায়।