Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রাজিল-চীন সমঝোতায় কী বার্তা পেল ওয়াশিংটন

মঙ্গলবার চীনের উদ্দেশে উড়োজাহাজে ওঠার আগমুহূর্তে লুলা দা সিলভা

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা চার দিনের সফরে গতকাল বুধবার চীন পৌঁছেছেন। তাঁর এই সফর গ্লোবাল সাউথে (লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চল) কূটনৈতিক মঞ্চে ব্রাজিলের প্রত্যাবর্তনকেই তুলে ধরছে। কিন্তু এই সফর পশ্চিমকে ঘিরে থাকা ভূরাজনৈতিক প্রশ্ন থেকে ক্রমবর্ধমান দূরত্বও প্রকাশ করছে।

ইউরোপ ও ওয়াশিংটনে অধিকাংশ কূটনৈতিক আলাপে যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন লুলার দাপ্তরিক সফরসূচিতে বিষয়টির উল্লেখ নেই। যদিও শান্তি প্রতিষ্ঠার কৌশল নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করার বিষয়ে অতীতে অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি।

উইলসন সেন্টারের কিসিঞ্জার ইনস্টিটিউট অব চীনের গবেষক ইগর প্যাট্রিক বলেন, ‘আমি যা শুনলাম, তাতে মনে হয় চীন সরকারের দাবি অনুসারে তালিকা থেকে ইউক্রেনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

সিএনএনকে প্যাট্রিক বলেন, ‘বিষয়টি উত্থাপন এবং শান্তিপ্রক্রিয়ার ধারণা নিয়ে আলোচনা করতে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এখনো কিছুটা আগ্রহ রয়েছে। তারা আশা করছেন, একটি যৌথ বিবৃতি দেবেন, যেখানে ইউক্রেন সংঘাতেরও উল্লেখ থাকবে; শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং কূটনৈতিক মধ্যস্থতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার কথা বলা হবে। তবে দাপ্তরিক কর্মসূচিতে সেটা নেই এবং বহুলাংশেই তা প্রত্যাশিতই ছিল।’

এর পরিবর্ততে এ সফরে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যের ওপর জোর দেওয়া হবে। কীভাবে ব্রাজিলের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে চীনের বিনিয়োগ সাহায্য করতে পারে। আর বৈশ্বিক কার্বন ক্রেডিটের লাভজনক সম্ভাব্যতাকে কীভাবে দেশটি কাজে লাগাতে পারে।

প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ব্যাপক বেড়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ব্রাজিলের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয় চীন। শুধু গত বছরই প্রায় ৯ হাজার কোটি ডলার মূল্যের ব্রাজিলীয় পণ্য—সয়া, লৌহ আকরিক, পেট্রল আমদানি করে দেশটি। একই সময়ে লাতিন আমেরিকায় চীনের সরকারি বিনিয়োগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রহীতা হলো ব্রাজিল। আর দক্ষিণ আমেরিকায় চীনা পণ্যের একক সবচেয়ে বড় বাজারও দেশটি।

কেবল সফরের আলোচ্যসূচিতেই বোঝা যায়, ব্রাজিলীয়রা ব্যবসাটাই চায়। ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্রাজিলের ব্যাংকগুলো যাতে ইউয়ানে (চীনা মুদ্রা) লেনদেন পরিচালনা করতে পারে, সে জন্য একটি পরিকাঠামোসহ ২০টি বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে চাইছে লুলার প্রতিনিধিদল। গত মাসে কয়েক শ ব্রাজিলীয় ব্যবসায়ী নেতার বেইজিং ভ্রমণের পরই লুলার এ সফর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। লুলাও ওই দফায় যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে তা স্থগিত করা হয়।

বিশ্বমঞ্চে চীনের অবস্থান আরও পোক্ত করতে চান সি চিন পিং

বেইজিং ও ব্রাসিলিয়ার ভাবনায় জ্বালানি ও পরিবেশের বিষয়টি শীর্ষে থাকার পাশাপাশি কার্বন মার্কেটের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি হিসেবে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক নিয়ে গবেষণায় জোর দিয়ে থাকা ব্রাজিলীয় চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবসেরভা চীনার আবাসিক ফেলো রেনাতো উঙ্গারেত্তি বলেন, ‘ব্রাজিল ও চীন জলবায়ু সংকটকে ঘিরে একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবে বলে কিছুটা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।’

কার্বন ক্রেডিট

সিএনএনকে উঙ্গারেত্তি বলেন, কার্বন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই অর্থনৈতিক জায়ান্ট একে অপরের ‘পরিপূরক’। তিনি বলেন, ‘নির্গমন কমাতে চাওয়া চীনের কোম্পানিগুলোর জন্য কার্বন ক্রেডিট বাজারে এটি বিশাল সুযোগ আর ব্রাজিলীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সেসব প্রকল্পই বিক্রির চেষ্টা করছে।’

Also Read: লুলাকে চিঠি দিলেন সি

যেসব দেশ কম পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে, কার্বন ক্রেডিট বাজার তাদের কিছু নির্গমন অনুমোদন অন্য দেশে বিক্রির সুযোগ দেয়, যাতে বড় দূষণকারীরা ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে নিজেদের নির্গমনে ভারসাম্য আনার সুযোগ পায়। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যা উচ্চ দূষণের দেশগুলোকে তাদের আন্তর্জাতিক জলবায়ু বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে এবং সামগ্রিকভাবে গ্রহ-উষ্ণায়ন দূষণ কমাতে সাহায্য করার জন্য করা হয়েছে।

যেহেতু আরও বেশি দেশ নিজেদের সার্বিক নির্গমনকে সীমিত করার অঙ্গীকার করছে, বিদেশে কার্বন ক্রেডিট ক্রয় সেসব দেশের জন্য একটি সমাধানের পথ করে দিয়েছে। এই মার্কেটের অন্যতম বড় ক্রেতা হলো চীন। দেশটি ২০৬০ সাল নাগাদ নেট-জিরো নির্গমনের লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু দেশটিতে এখনো জ্বালানি খাতে গ্রহ-উষ্ণায়নকারী কয়লা ও তেলের প্রাধান্য রয়েছে।

ব্যবসা পরামর্শক ম্যাককিন্সির মতে, আমাজন বনের কল্যাণে ব্রাজিল বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শোষণ করার বৈশ্বিক সম্ভাবনার প্রায় ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেই সম্ভাবনা যত বাড়বে, তার মানে অর্থটাও বেড়ে যাওয়া।

Also Read: বাইডেনের চীন নীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে

লুলা ইতিমধ্যেই বন উজাড় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা ব্রাজিলে প্রায় অর্ধেক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী। চীনের কাছে কার্বন ক্রেডিট বিক্রি এটির অর্থায়নের একটি উপায় হতে পারে। এ ধরনের চুক্তিতে পৌঁছানোর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোরও একই ধরনের চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে ব্রাজিল।

ম্যাককিন্সির আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, এই দশকে কার্বন ক্রেডিট মার্কেটের ব্যাপক বাড়বাড়ন্ত হবে। ২০২১ সালের ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের এই বাজার ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হতে পারে।

ওয়াশিংটনের জন্য বার্তা

চীনের সঙ্গে এ ধরনের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো ওয়াশিংটন ও বাকি উন্নত বিশ্বের প্রতিও একধরনের বার্তা দেবে। এসব দেশ গ্লোবাল সাউথের প্রতি যথেষ্ট মনযোগ দিচ্ছে না বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠছে। গ্লোবাল সাউথ এখন বলবে, আমরা উত্তরে নয়, পূর্বে ঝুঁকে আরও ভালো প্রবৃদ্ধির সুযোগ খুঁজে পেতে পারি।

Also Read: বিশ্বকে যেভাবে দেখতে চান সি চিন পিং

এই সপ্তাহে লুলার বিস্তৃত সফরটি ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে তাঁর স্বল্পসময়ের সফরের অবশ্যই বিপরীত। বনসমৃদ্ধ ব্রাজিলকে রক্ষায় ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক তহবিলে বাইডেন প্রশাসন অবদান রাখবে বলে যে আশা করা হয়েছিল, ওই সফরে তেমন কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।

এরপর হন্ডুরাস আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক স্বীকৃতি পরিবর্তন করায় লাতিন আমেরিকায় ওয়াশিংটনের প্রভাব আরেক দফা ধাক্কা খেয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্প আমলের বিপরীতে এসে এ অঞ্চলের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই সম্পৃক্ততার ফল এখনো পরিণতি পায়নি।