গ্যালাপের জরিপ

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণ সম্পর্কের অবনতি

পুরো আমেরিকা তাকিয়ে ছিল জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিচারের রায়ের দিকে
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণ সম্পর্ক গত ২০ বছরের হিসাবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাত্রবর্ণের কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর এ সময়েও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার।

২২ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গ্যালাপের জরিপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, বর্ণ সম্পর্ক এখন নাজুক অবস্থায়। ৫৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান মনে করেন, শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সম্পর্ক এখন খারাপ। মাত্র ৪২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান মনে করেন, দুই বর্ণের লোকজনের মধ্যে এখনো সম্পর্ক ভালো বা মোটামুটি ভালো আছে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে গ্যালাপ জানিয়েছে, দুই দশকের মধ্যে গত টানা দুই বছর দেশটির বর্ণ সম্পর্কের ক্রমাবনতি ঘটছে।

২০০১ সালের জরিপে দেখা দিয়েছিল, আমেরিকার ৭০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ লোকজন মনে করতেন, তাঁদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের সম্পর্ক খুব ভালো। ২০২১ সালে এসে কৃষ্ণাঙ্গদের এমন মনোভাব ৩৩ শতাংশে ঠেকেছে। ২০০১ সালে ৬২ শতাংশ শ্বেতাঙ্গই কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হিসেবে মনে করতেন। ২০২১ সালে এসে শ্বেতাঙ্গদের মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে তাঁদের একটা ইতিবাচক সম্পর্ক বিরাজ করছে।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান মনে করেন, কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে বর্ণ সম্পর্কের উন্নতি সম্ভব। একই জরিপে দেখা গেছে, বর্ণ সম্পর্কের এমন উন্নয়ন নিয়ে আশাবাদী মাত্র ৪০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে গ্যালাপ বলেছে, দেশ হিসেবে আমেরিকা এখনো বর্ণবৈষম্যের মতো বিষয় নিয়ে সংগ্রাম করছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি নিয়েও আশাবাদের কথাও জরিপে উঠে এসেছে। আমেরিকার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কৃষ্ণাঙ্গ দেশটির বর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চেপে থাকা বর্ণবৈষম্য, বর্ণবিদ্বেষ কখনোই প্রকাশ্যে উচ্চারিত হয় না।

বর্ণবিদ্বেষের মতো ঘটনা আইন করে নিষিদ্ধ রয়েছে এবং এ ধরনের বিদ্বেষের কারণে বহু মামলা হয়ে থাকে প্রতিবছর। কর্মক্ষেত্রে বা সামাজিক ক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্যের ওপর প্রলেপ দেওয়া মার্কিন সমাজে মাঝেমধ্যেই এ নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে থাকে। হিস্পানিকসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং এশীয় লোকজনের ওপর বিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে অহরহ।

গত বছর মেনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এ নিয়ে আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটে। আমেরিকার সামাজিক কাঠামোর মধ্যেই বর্ণবাদ রয়েছে বলে নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি উঠেছে। এমন সম্মিলিত দাবির পক্ষে শুধু কৃষ্ণাঙ্গ লোকজনই নয়, মুক্তচিন্তার আধুনিক সর্ব বর্ণের লোকজনকে যোগ দিতে দেখা গেছে।

নাগরিক আন্দোলনের জের ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বর্ণবিদ্বেষ অবসান এবং বর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় সমালোচনামূলক বর্ণবাদ ভাবাদর্শ নিয়ে পাঠ্যসূচি সাজানো হচ্ছে। গত শতকের মধ্যভাগ থেকে মার্কিন নাগরিক আন্দোলনের প্রবর্তক এমন পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গদের ভয়ভীতির মধ্যে ফেলে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানি আমেরিকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি শিক্ষাব্যবস্থায় সমালোচনামূলক বর্ণবাদ নিয়ে পাঠ্যসূচির বিরোধিতা করছে রিপাবলিকান দলের রক্ষণশীল পক্ষ। এর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানি ও ইন্ধন পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে।