
কুখ্যাত শিশু যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের নিউইয়র্ক নগরের বাড়িতে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি ছবি পাওয়া গেছে। এই ছবি নিয়ে অনলাইনে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গত মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন ওই ঝড় উসকে দিয়েছে। প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক নগরে জেফরি এপস্টেইনের প্রাসাদতুল্য বাসভবনের ভেতরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ফ্রেম করা ছবি পাওয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে প্রয়াত এপস্টেইনের ম্যানহাটানের সাততলা বাড়ির ভেতরের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
শিশুদের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে হওয়া মামলায় ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এপস্টেইন। তাঁর বিচারকাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছিল। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের একটি কারাগার থেকে এপস্টেইনের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। পরে বিচার বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন।
এক শিশুকে যৌনকর্মের জন্য পাচার করার অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় ২০০৮ সালের দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এপস্টেইন। কিন্তু বিতর্কিত একটি সাজা হ্রাস আইনের অধীনে তাঁকে মাত্র ১৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
এপস্টেইনের বাড়ির ভেতরের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যায়, তাঁর শয়নকক্ষ ও সংলগ্ন কক্ষে বসানো রয়েছে নজরদারি ক্যামেরা। বাড়ির ভেতরে রয়েছে স্টাফ করা প্রাণীর দেহ, উসকানিমূলক শিল্পকর্ম ও ভাস্কর্য।
ভবনের ভেতরে সৌদি যুবরাজের ছবি থাকার কথা প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
যদিও অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী এতে মোটেও অবাক হননি বলে মন্তব্য করেছেন। একজন তাঁর মন্তব্যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আরেকটি ছবির প্রসঙ্গ টানেন, যে ছবিতে জর্জ আরেফ নাদেরের সঙ্গে সৌদি যুবরাজকে দেখা যায়।
লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন লবিস্ট নাদের একজন কুখ্যাত শিশু যৌন নিপীড়ক এবং এ অপরাধে দণ্ডিত একজন অপরাধী।
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, যখনই মোহাম্মদ বোন–স (যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি ব্যঙ্গাত্মক নাম) সাংবাদিকদের হত্যা পরিকল্পনা করছেন না (যেমন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনা) এবং তাঁদের দেহ অ্যাসিডে গলিয়ে দিচ্ছেন না, তখন তাঁকে শিশু নিপীড়কদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন ওই ঝড় উসকে দিয়েছে। প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক সিটিতে জেফরি এপস্টেইনের প্রাসাদতুল্য বাসভবনের ভেতরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ফ্রেম করা ছবি পাওয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে প্রয়াত এপস্টেইনের ম্যানহাটানের সাততলা বাড়ির ভেতরের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
মোহাম্মদ বিন সালমানকে বিদ্রূপ করে অনেকে ‘বোন-স’ বা হাড় কাটার করাত বলেন।
আরেকজন লেখেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, সেখান থেকে যাঁদের নাম বেরিয়েছে, তাঁদের মধ্যে এ নামটিই সবচেয়ে কম বিস্ময়ের।’
এমনকি কেউ কেউ মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম শোনার পর মানুষের বিস্ময় প্রকাশ করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
তাঁদের একজনের প্রশ্ন, ‘এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) কি কোনোভাবে নৈতিক মূলবোধসম্পন্ন নেতাদের দলে পড়েন?’
কেউ কেউ গাজা যুদ্ধ এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের হত্যা নিয়ে যুবরাজের নীরব থাকার বিষয়টি এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেছেন।
তবে অনেকেই আবার যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও এপস্টেইন ও মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়।
২০১৯ সালে কারাগারে আত্মহত্যা করার এক বছর আগে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এপস্টেইন তাঁর যুবরাজের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা বেশ গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন।
এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) কি কোনোভাবে নৈতিক মূলবোধসম্পন্ন নেতাদের দলে পড়েন?এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী
এপস্টেইনের প্রাসাদসম বাড়ির ভেতরে যেসব ব্যক্তির ছবি পাওয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে সৌদি যুবরাজই একমাত্র বিশিষ্ট ব্যক্তি নন।
এ তালিকায় নাম আছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, পোপ জন পল দ্বিতীয়, মিক জাগার, ইলন মাস্ক, ফিদেল কাস্ত্রো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম এবং কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জাসিম বিন জাবর আল-থানিসহ অনেকের নাম।
এক শিশুকে পাচারের অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় ২০০৮ সালের দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এপস্টেইন। কিন্তু বিতর্কিত একটি সাজা হ্রাস আইনের অধীনে তাঁকে মাত্র ১৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
এর এক দশক পর ২০১৯ সালে এপস্টেইন আবারও গ্রেপ্তার হন। এবার তাঁর বিরুদ্ধে ছয় শিশুকে যৌনকর্মের জন্য পাচার এবং ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে নিউইয়র্ক ও পাম বিচে তাঁর বাড়িতে বহু মেয়ে শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ছিল।
২০১৯ সালের ৬ জুলাই জেফরি এপস্টেইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে নিউইয়র্ক নগরের মেট্রোপলিটন কারেকশনাল সেন্টারে আটক রাখা হয়েছিল। ওই বছরের ১০ আগস্ট কারাগারের একটি কক্ষ থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।