সুপারম্যান কমিকসের প্রথম সংস্করণের এই কপিটি বিক্রি হয়েছে ১১১ কোটি টাকায়
সুপারম্যান কমিকসের প্রথম সংস্করণের এই কপিটি বিক্রি হয়েছে ১১১ কোটি টাকায়

মা তুলে রেখেছিলেন সুপারম্যান কমিকসের কপি, বিক্রি হলো ১১১ কোটি টাকায়

গত বছর বড়দিনের সময়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজ বাড়ির চিলেকোঠা ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করছিলেন তিন ভাই। ঘরটির এক কোণে ছিল পুরোনো সংবাদপত্রের স্তূপ। তা সরাতেই বেরিয়ে এল ধুলায় ঢাকা একটি কার্ডবোর্ডের বাক্স। চারপাশে মাকড়সার জাল। পরিষ্কার করার পর বাক্সটিতে যা মিলেছিল, নিমেষেই তা বদলে দিয়েছে তিন ভাইয়ের ভাগ্য।

ওই বাক্সের মধ্যে ছিল কমিকসের মোট ছয়টি বই। সেগুলোর একটি অতিমানব চরিত্র ‘সুপারম্যান’–এর প্রথম সংস্করণ। প্রকাশ করা হয়েছিল ১৯৩৯ সালের জুন মাসে। কমিকসের ওই বইটি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন তিন ভাইয়ের প্রয়াত মা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন মহামন্দা চলছিল, তখন বইটি কিনেছিলেন ওই নারী ও তাঁর ভাই।

পুরোনো বিরল জিনিসের কদর বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে আগ্রহ আরও বেশি। তাই তো সুপারম্যান কমিকসের প্রথম সংস্করণটি বিক্রির জন্য লুফে নিয়েছিল টেক্সাসের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ। সেখানে গত বৃহস্পতিবার বইটি বিক্রি হয়েছে ৯১ লাখ ২০ হাজার ডলারে। বাংলাদেশের হিসাবে তা ১১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি। এত দামে কখনোই কোনো কমিকসের বই বিক্রি হয়নি।

অবিশ্বাস্য এই দাম পাওয়ার কারণ শুধু বইটি পুরোনো ও বিরল, তা নয়। সেটি বেশ নিখুঁত অবস্থায়ও ছিল। অক্ষত থাকার কারণেই কমিকসের মান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান সিজিসি সুপারম্যানের বইটিকে ১০–এর মধ্যে ৯ দিয়েছে। আগে অন্য একটি কমিকসের বইয়ের সর্বোচ্চ রেটিং ছিল ৮ দশমিক ৫। আর এর আগে সুপারম্যানের আরেকটি কমিকসের বই নিলামে বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ ডলার পাওয়া গিয়েছিল।

যে তিন ভাই সুপারম্যানের ওই কমিকসটি নিলামে তুলেছিলেন, তাঁরা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁদের বয়স পঞ্চাশ ও ষাটের কোঠায়। আর বইটি পাওয়ার পরপরই তাঁরা বিক্রির জন্য তাড়াহুড়া করেননি। বরং কয়েক মাস অপেক্ষার পর হেরিটেজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সান ফ্রান্সিসকোয় তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন হেরিটেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট লন অ্যালেন।

সুপারম্যানের বইটি এত দামে বিক্রিকে হেরিটেজ উল্লেখ করেছে ‘কমিসক বিক্রি করে সর্বোচ্চ সাফল্য’ হিসেবে। লন অ্যালেন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার ওই ভাইদের মা তাঁদের বলেছিলেন যে তাঁর কাছে মূল্যবান কমিকস আছে। তবে সেগুলো কখনোই দেখাননি। আর উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার শীতল আবহাওয়ায় পুরোনো কাগজপত্র টিকে থাকে। টেক্সাসের মতো আবহাওয়া হলে অনেক আগেই নষ্ট হয়ে যেত।

মায়ের সংরক্ষণ করা এই কমিকস নিয়ে কথা বলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার তিন ভাইয়ের সবচেয়ে কনিষ্ঠজন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন টিকে থাকার লড়াই করতে করতে লড়াইটায় জীবনের মূল জায়গাটা দখল করে নিয়েছিল। ফলে অনেক যত্ন করে তুলে রাখা কমিকসের বাক্সটির কথা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। অন্তত গত বছরের বড়দিন পর্যন্ত এর অস্তিত্বের কথা আমরা জানতাম না।’

নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজের মাধ্যমে ওই ভাই আরও বলেন, ‘এটি শুধু কাগজের ওপর কালি দিয়ে লেখা গল্প নয়। এটি কখনোই শুধু সংগ্রহের একটি বিষয় ছিল না। অতীত স্মৃতি যে অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের কাছে ফিরে আসতে পারে, এটি তার একটি প্রমাণ।’