
যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের হোয়াইটম্যান বিমানঘাঁটি থেকে একাধিক মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান উড্ডয়ন করেছে। বিমানগুলো প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে গুয়ামে যেতে পারে। তবে বিমানগুলোর গন্তব্য হতে পারে ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া।
ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউ জার্সি থেকে হোয়াইট হাউসে ফেরার কথা। স্থানীয় সময় আজ বিকেল ও আগামীকাল রোববার হোয়াইট হাউসে নিজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বি-২ বিমান ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা বহনে সক্ষম, যা ‘বাংকার-বাস্টার’ নামে পরিচিত। বি–২ বিমান থেকে এই বোমা ফেলে ইরানের ফর্দো ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়। ইরানে সরাসরি হামলায় যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র এই বোমারু বিমান দিয়েই ফর্দোতে আঘাত করা হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
কিছু ফ্লাইট ট্র্যাকার (বিমান চলাচলের তথ্যদাতা প্রতিষ্ঠান) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, বি–২ বিমানগুলো গুয়ামের দিকে যাচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। তবে বিমানগুলোর গন্তব্য বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি নিউইয়র্ক টাইমস। কিছু রিফুয়েলিং ট্যাংকার বিমান বি-২ বিমানগুলোর সঙ্গী হয়েছে বলে জানা গেছে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুয়াম থেকে বিমানগুলো ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটির দিকে যেতে পারে। এর অর্থ হলো এখানে এলে একবার জ্বালানি নিয়েই বিমানগুলো ইরানে সরাসরি হামলা চালিয়ে আবার ফেরত আসতে পারবে।
তবে বি-২ বিমানের উড্ডয়ন বা নির্দিষ্ট ঘাঁটিতে পাঠানো মানেই ট্রাম্প ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, বিষয়টি এমন নয়। সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সেনা কমান্ডারদের সামনে নানা বিকল্প হাজির করতে সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়। তারই অংশ হিসেবে বোমারু বিমান এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।
হোয়াইট হাউসের নিয়মিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ট্রাম্প স্থানীয় সময় আজ সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নিরাপত্তা দলকে নিয়ে বৈঠক করবেন। আগামীকাল রোববারও একই রকম বৈঠক হবে। ট্রাম্প সাধারণত সপ্তাহান্তের দুই দিনই শহরের বাইরে নিজের কোনো অবকাশ যাপনকেন্দ্রে কাটান।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের বৈঠক নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে ৩০ হাজার পাউন্ডের বাংকার-বাস্টার বোমাগুলোও ফর্দো ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনার প্রকৃত ক্ষতি হয়তো করতে পারবে না। কারণ, বোমাগুলো এতটা গভীরে পৌঁছাতে পারবে কি না, নিশ্চিত নয়। এই বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প চিন্তাভাবনা করছেন। হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তিনি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সামনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বিবৃতি পড়ে শোনান। এতে ট্রাম্প বলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা না-ও হতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে (সংঘাতে) যাব কি যাব না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।’
এই সময় দেওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প আসলে কী করতে চাইছেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে পরমাণু আলোচনায় নতুন চুক্তিতে সম্মত হতে হবে। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানে হামলা চালাবে।
ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। তবে ট্রাম্প ‘দুই সপ্তাহ’ সময়ের কথা বলার পর ইরানের সঙ্গে নতুন পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গতকাল এ বিষয়ে জেনেভায় বৈঠক হয়েছে। আবারও বৈঠকে বসার বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে দুই পক্ষই।