
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বলেছেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
লাতিন আমেরিকার তেলসম্পদ–সমৃদ্ধ দেশটির ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ভেনেজুয়েলার ওপর অবরোধ জোরদার করছে।
তবে ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্র রাশিয়া মাদুরোর সরকারের প্রতি তাদের ‘পূর্ণ সমর্থন’ ব্যক্ত করেছে।
ওয়াশিংটন কারাকাসের বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা ও হুমকি আরও জোরদার করেছে।
মাদুরোকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতেই কি ওয়াশিংটন এমন হুমকি দিচ্ছে, ফ্লোরিডায় নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা তাঁর ব্যাপার, তিনি কী করতে চান। আমি মনে করি, এটা করা তাঁর জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
১২ বছর ধরে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় আছেন মাদুরো।
মাদক পাচার করছে অভিযোগ তুলে গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি নৌযানের ওপর হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। কিন্তু মার্কিন বাহিনী নিজেদের এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
মাদুরোকে খানিকটা হুমকির সুরে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তিনি যদি কিছু করতে চান—যদি তিনি কঠোর অবস্থান নেন, তবে সেটাই হবে তাঁর শেষবারের মতো কঠোর অবস্থান নেওয়া।’
মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্পের এই বক্তব্যের জবাব দেন মাদুরো। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য কারাকাসকে হুমকি দেওয়ার বদলে নিজের দেশের সমস্যাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া অধিক উত্তম হবে।’
নিকোলা মাদুরো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ওই ভাষণে আরও বলেন, ‘নিজের দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে থাকাই তাঁর জন্য ভালো হবে এবং যদি নিজের দেশের কাজকর্ম ঠিকভাবে দেখাশোনা করেন, তবে বিশ্বে তাঁর অবস্থান আরও ভালো হবে।’
ওয়াশিংটন যেমন একদিকে কারাকাসের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে, অন্যদিকে মস্কো পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।
টেলিফোনে এক আলাপে মিত্র দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মাদক দমনের নামে নৌযানগুলোর ওপর হামলা এবং দুটি তেল ট্যাংকার জব্দ করাসহ মার্কিন কার্যক্রমের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান জিলের মধ্যে ফোনে আলাপের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তিনি যদি কিছু করতে চান—যদি তিনি কঠোর অবস্থান নেন, তবে সেটাই হবে তাঁর শেষবারের মতো কঠোর অবস্থান নেওয়া।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘মন্ত্রীরা ক্যারিবীয় সাগরে ওয়াশিংটনের কার্যক্রম জোরদার করা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা ওই অঞ্চলের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নৌপরিবহন হুমকির মুখে পড়তে পারে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি রাশিয়া পূর্ণ সমর্থন ও ঐক্য পুনর্ব্যক্ত করেছে।’
মাদক পাচার করছে অভিযোগ তুলে গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি নৌযানের ওপর হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। কিন্তু মার্কিন বাহিনী নিজেদের এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
এসব হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন জেলে রয়েছেন বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার ও ভেনেজুয়েলা সরকার।
১৬ ডিসেম্বর ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় সব ধরনের তেলের ট্যাংকার যাতায়াত নিষিদ্ধ করেন এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাতায়াত করা ট্যাংকারকে অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন।
ট্রাম্পের দাবি, নিকোলা মাদুরোর নেতৃত্বাধীন কারাকাস সরকার তেল বিক্রি থেকে আয় করে সেই অর্থ থেকে মাদক সন্ত্রাস, মানবপাচার, হত্যা ও অপহরণকে অর্থায়ন করছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা আমাদের সব তেল নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তা ফেরত চাই।’
অন্যদিকে, কারাকাসের ভয়, ওয়াশিংটন ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তন করতে চাইছে। দেশটি ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতার’ অভিযোগও এনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক সে দেশ থেকে বিতাড়িত ভেনেজুয়েলার ১৩৭ নাগরিককে ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছেন। মাদক পাচার ও অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের এল সালভাদরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাঁরা এখন এল সালভাদরের কারাগারে আছেন।
ট্রাম্পের জন্য কারাকাসকে হুমকি দেওয়ার বদলে নিজের দেশের সমস্যাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া অধিক উত্তম হবে।... নিকোলা মাদুরো, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট
গত মার্চে তাদের ‘এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্টের’ অধীনে এল সালভাদরে বিতাড়িত করা হয়।
গতকাল সোমবার ব্লুমবার্গ নিউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট জজ জেমস বোয়াসবার্গ এই নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ বলেন, তাদের আইন মেনে যথাযথ নিয়মে বিতাড়ন করা হয়নি। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের ফেরত আনার জন্য একটি পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছেন।