যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মারজোরি টেলর গ্রিন। ২৬ মার্চ ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মারজোরি টেলর গ্রিন। ২৬ মার্চ ২০২২

নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্র থেকে সমর্থন প্রত্যাহার ট্রাম্পের, নেপথ্যে কী

নিজের গোঁড়া সমর্থক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মারজোরি টেলর গ্রিন থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প এ ঘোষণা দিয়েছেন। গ্রিন সম্প্রতি ট্রাম্পের বিভিন্ন কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছিলেন।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শুক্রবার রাতে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি সেরা অঙ্গরাজ্য জর্জিয়ার কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেলর গ্রিন থেকে আমার সমর্থন ও অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’

ট্রাম্প মিথ্যাচার করছেন: গ্রিন

পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, তিনি গ্রিনকে কেবল ‘অভিযোগ, অভিযোগ আর অভিযোগ’ করতে দেখেন। তিনি জানান, তাঁদের মধ্যকার সংঘাত শুরু হয়, যখন তিনি গ্রিনের সঙ্গে একটি জরিপের তথ্য বিনিময় করেন। ওই জরিপে উঠে আসে, তাঁর সমর্থন ছাড়া সিনেট বা গভর্নর পদে নির্বাচনে জেতার তেমন সুযোগ নেই গ্রিনের। আর তাঁকে সমর্থন দিতে ইচ্ছুক নন ট্রাম্প।

রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, গ্রিনের নির্বাচনী এলাকার রক্ষণশীল ভোটাররা হয়তো দলীয় প্রাইমারিতে তাঁর একজন প্রতিদ্বন্দ্বী বেছে নেওয়ার কথা ভাবছেন। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে তিনি (ট্রাম্প) গ্রিনের বিরুদ্ধে সঠিক প্রার্থীকেই সমর্থন দেবেন।

গ্রিন এত দিন সরাসরি ট্রাম্পের সমালোচনা এড়িয়ে চলতেন। ট্রাম্পের পোস্টের জবাবে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) কেবলই আমাকে আক্রমণ করলেন এবং আমার সম্পর্কে মিথ্যা বললেন।’

জর্জিয়া একটি নির্বাচনী সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন মারজোরি টেলর গ্রিন। ২০২৪ সালে মার্চে

কেন চটলেন ট্রাম্প

গ্রিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্প হয়তো তাঁকে কেন্দ্র করে প্রয়াত জেফরি এপস্টেইনের মামলা-সংক্রান্ত যেকোনো নথি প্রকাশের জন্য তাঁর প্রশাসনকে চাপ দেওয়ার কারণে এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। উল্লেখ্য, এপস্টেইন ছিলেন একজন সাজাপ্রাপ্ত যৌন অপরাধী। এপস্টেইন কেলেঙ্কারি নিয়ে তৈরি হওয়া শোরগোলকে ডেমোক্র্যাটদের ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গ্রিন বলেন, এপস্টেইনের নথি প্রকাশের বিষয়ে আগামী সপ্তাহের ভোটাভুটির আগে তিনি অন্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের ভয় দেখাতে চাইছেন। গ্রিন বলেন, ‘এটি সত্যিই বিস্ময়কর যে এপস্টেইনের নথি প্রকাশ ঠেকাতে তিনি এতটাই কঠিনভাবে লড়ছেন যে তিনি এই পর্যায়ে নেমে এসেছেন।’

গত বুধবার হাউস রিপাবলিকানদের মধ্যে মাত্র চারজনের একজন ছিলেন গ্রিন, যিনি বিচার বিভাগের এপস্টেইন সম্পর্কিত সম্পূর্ণ নথি প্রকাশে ভোটাভুটি আয়োজনে বাধ্য করার জন্য ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে একটি পিটিশনে সই করেছিলেন।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত একধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেন গ্রিন। পররাষ্ট্রনীতিতে ট্রাম্পের বেশি মনোযোগী হওয়ার সমালোচনা করে গ্রিন বলেছেন, তিনি চান ট্রাম্প যেন অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেন।

এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ট্রাম্পের যে দাবি, তার সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেন এই রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ইস্যুতে রিপাবলিকানদের একটি পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে গ্রিন প্রথম রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা হিসেবে ফিলিস্তিনের গাজার মানবিক সংকটকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

গ্রিন ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন—এমন জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন। রিপাবলিকান এই আইনপ্রণেতা বলেন, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত তাঁর নির্বাচনী এলাকার দিকেই তিনি মনোনিবেশ করছেন।