
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফ্লোরিডার একটি গলফ কোর্সে গত বছরের সেপ্টেম্বরে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মার্কিন নাগরিক রায়ান রুথকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে হত্যাচেষ্টা এবং আগ্নেয়াস্ত্র-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধসহ সব অভিযোগে জুরিবোর্ড ৫৯ বছর বয়সী রুথকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। ওই সময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পদপ্রার্থী ট্রাম্প তাঁর মার-এ-লাগো বাসভবন থেকে প্রায় ১৫ মিনিটের দূরত্বে ওয়েস্ট পাম বিচে অবস্থিত নিজের মালিকানাধীন একটি গলফ কোর্সে গলফ খেলছিলেন।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য ঝোঁপের মধ্য থেকে একটি রাইফেলের নল বের হয়ে থাকতে দেখে রাইফেলধারী লোকটির ওপর গুলি চালান। তৎক্ষণাৎ লোকটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে তাঁকে রুথ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তাঁকে কাছাকাছি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রায় ঘোষণার পর রুথ নিজেই নিজেকে দৈহিকভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ইউএস মার্শালরা হস্তক্ষেপ করার আগে তিনি একটি কলম দিয়ে নিজের দেহে আঘাত করার চেষ্টা করেছিলেন।
আদালত রুথকে দোষী সাব্যস্ত করার পরপরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং একজন সাক্ষীকে ধন্যবাদ জানান। ওই সাক্ষীর তথ্যের ভিত্তিতে রুথকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল।
রুথ সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, লোকটি ছিলেন একজন শয়তান, যাঁর উদ্দেশ্যও ছিল শয়তানি। তাঁরা তাঁকে ধরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যায়বিচারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি বলেন, ‘এই হত্যাচেষ্টা শুধু আমাদের প্রেসিডেন্টের ওপর আক্রমণ ছিল না, বরং এটি আমাদের জাতির জন্য একটি অপমান।’
আগামী ১৮ ডিসেম্বর রুথের সাজা ঘোষণা করা হবে। এতে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
রুথ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন এবং শুনানির সময় নিজের পক্ষে নিজেই আইনি লড়াই করার এক অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নেন। এই শুনানি ৮ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার ফোর্ট পিয়ার্সের ফেডারেল কোর্টহাউসে শুরু হয়েছিল।
রুথ মূলত নর্থ ক্যারোলাইনার বাসিন্দা এবং ফ্লোরিডার ঘটনার আগে হাওয়াইয়ে থাকতেন। শুনানির পুরো সময় তিনি একের পর এক অদ্ভুত কাণ্ড ও মন্তব্য করেন।
এর মধ্যে ছিল ট্রাম্পকে গলফ খেলার চ্যালেঞ্জ জানানো, গলফ খেলার অনুশীলনের জায়গা ব্যবহারের অনুরোধ এবং শুনানির শুরুতে মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাস, একে অন্যের প্রতি সদয় হওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং অ্যাডলফ হিটলার ও ভ্লাদিমির পুতিনের প্রসঙ্গ নিয়ে বক্তব্য দেওয়া। বিচারক তাঁর প্রাথমিক বক্তব্য থামিয়ে দেন।
আদালতে জানানো হয়, হত্যাচেষ্টার সময় রুথ ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল গলফ ক্লাবের সীমানাপ্রাচীরের পেছনের ঝোঁপে লুকিয়ে ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, রুথ কখনোই ট্রাম্পকে সরাসরি দেখতে পাননি। তবে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো-এফবিআইয়ের এজেন্টরা জানিয়েছেন, তিনি যেখানে লুকিয়ে ছিলেন, সেখান থেকে তাঁরা একটি স্কোপ এবং অতিরিক্ত ম্যাগাজিনসহ সেমি-অটোমেটিক রাইফেল খুঁজে পেয়েছেন।
আদালত আরও জানতে পারেন, ট্রাম্পের সম্ভাব্য উপস্থিতির স্থানগুলোর একটি তালিকা করেন রুথ। তিনি এক বন্ধুকে লেখা একটি নোট রেখে গিয়েছিলেন যাতে বলা ছিল, ‘এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার একটি চেষ্টা ছিল।’
গতকাল মঙ্গলবার ফ্লোরিডার আদালতে প্রধান প্রসিকিউটর জন শিপলি তাঁর সমাপনী বক্তব্যে রুথের যুক্তি গ্রহণ না করতে জুরির প্রতি আহ্বান জানান। রুথ দাবি করেছিলেন, তিনি একজন অহিংস মানুষ এবং কাউকে হত্যা করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
শিপলি বলেন, ‘রুথের কাজ অন্য কথা বলে।’ তিনি রুথকে একজন অসৎ ব্যক্তি উল্লেখ করে জুরিকে শুনানিতে উপস্থাপিত প্রমাণের ওপর মনোযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, এসব প্রমাণ বলে দিচ্ছে, রুথ কয়েক মাস ধরে এই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।
প্রসিকিউটর বলেন, ‘আপনাদের কাছে পাহাড়সম প্রমাণ আছে। আপনারা বুঝতে পারছেন, তিনি এই কাজ করার কতটা কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁর রাইফেলের চেম্বারে গুলি ভরা ছিল এবং সেফটি লক খোলা ছিল।’
বক্তব্যের সময় রুথকে নির্বিকার দেখাচ্ছিল।
তবে শুনানির সময় রুথের নিজের সমাপনী বক্তব্য বেশ অদ্ভূত ঠেকাচ্ছিল। তিনি নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নিয়ে কথা বলেন। তাঁর একটি নৌকা কেনার পরিকল্পনা আছে, এমন অসংলগ্ন কথা থেকে ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুথের সমাপনী বক্তব্যের সময় বিচারক তাঁকে বারবার থামিয়ে দেন। বিচারক জুরিকে বেশ কয়েকবার আদালতকক্ষের বাইরে পাঠিয়ে দেন।
প্রায় এক ঘণ্টা রুথ বক্তব্য দেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যেহেতু তিনি ট্রিগার চাপেননি, তাই তাঁর হত্যার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
ফ্লোরিডার এই ঘটনা ছিল গত বছর ট্রাম্পের ওপর দ্বিতীয় বড় ধরনের হামলার চেষ্টা। এর আগে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়ার বাটলার-এ একটি রাজনৈতিক সমাবেশে একজন বন্দুকধারী তাঁকে নিশানা করে গুলি চালান।
গুলিতে ট্রাম্পসহ একাধিক ব্যক্তি আহত হন এবং একজন নিহত হন। হামলাকারীও ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছিলেন।
রুথকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করার পর এফবিআইয়ের পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লেখেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতা দমন এবং যাঁরা এই জঘন্য কাজ করেন, তাঁদের রাস্তা থেকে ধরে কারাগারে পাঠাতে আমাদের এখনো অনেক কাজ করতে হবে।’