হাতে থাকা ইভিএমের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চায় ইসি

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)
ফাইল ছবি

নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প স্থগিত হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের হাতে থাকা ইভিএমগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে তারা যে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছিল, সেগুলোর কতটি ব্যবহারের উপযোগী আছে, তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে কমিশন। এটা শেষ হলে বলা যাবে, আগামী সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। তাদের হাতে এখন দেড় লাখ ইভিএম আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। ইসি বলে আসছে, হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে ৬০ থেকে ৭০টি আসনে ভোট করা সম্ভব হবে। তবে কতটি আসনে এ যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট করা সম্ভব হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে এখনো বলতে পারছে না ইসি।

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিতর্ক চলছিল, তা নতুন প্রকল্প স্থগিত হওয়ায় অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে (প্রকল্প স্থগিত হওয়া) বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা পূরণ হলো। বিশিষ্ট নাগরিকদের যে ইচ্ছা ছিল, সেটাও বাস্তবায়িত হলো। এখন আমরা মনে করি, দলমত–নির্বিশেষে বর্তমান সিদ্ধান্ত পছন্দ করবে।’

ইসি আরও ২ লাখ ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় এ প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইসিকে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক আছে। ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ভোটে এ যন্ত্রের ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নতুন ইভিএম কেনা আপাতত স্থগিত রাখা হলেও রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে ইভিএমের ব্যবহার থেকে পিছু হটছে না ইসি। এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, এ যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট হলে কারচুপি সম্ভব নয়।

নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যতগুলা কার্যক্ষম ইভিএম আছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করব। এ লক্ষ্যে মজুত থাকা ইভিএমের কোয়ালিটি চেক করা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সবকিছুই রোডম্যাপ অনুযায়ী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কমিশন পাঁচ শতাধিক নির্বাচন ইভিএমে করেছে; বিশ্লেষণ করে অনুধাবন করেছে যে ইভিএমে কোনো প্রকার কারচুপি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াই ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রার্থীরা ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কোনো প্রকার অভিযোগ করেনি। এ জন্য অনূর্ধ্ব ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। অনেক সময় সাধের সঙ্গে সাধ্যের সমন্বয় হয় না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্প আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।’

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিতর্ক চলছিল, তা নতুন প্রকল্প স্থগিত হওয়ায় অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে (প্রকল্প স্থগিত হওয়া) বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা পূরণ হলো।

বিশিষ্ট নাগরিকদের যে ইচ্ছা ছিল, সেটাও বাস্তবায়িত হলো। এখন আমরা মনে করি, দলমত–নির্বিশেষে বর্তমান সিদ্ধান্ত পছন্দ করবে। আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সহযোগিতা করবে। ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটেও নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব, সেটা প্রমাণ করব ইনশা আল্লাহ।’

ইসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গত চার বছরে সারা দেশের আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলোয় মোট ৯৩ হাজার ইভিএম পাঠিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ইভিএমের ৩০ শতাংশ বা প্রায় ২৮ হাজার ইভিএম সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় অকেজো বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সেগুলোর কিছু মেরামতযোগ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইসি মাঠপর্যায়ে থাকা ইভিএমগুলোর কী অবস্থা, তা আরও যাচাই-বাছাইয়ে নামে। সারা দেশে ইসির ১০টি অঞ্চল আছে। এই ১০টি অঞ্চল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মাঠে থাকা ইভিএমগুলোর গুণগত মান যাচাই করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাঁচটি অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যে যন্ত্রগুলোয় সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে, সেগুলো বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) পাঠানো হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি ইসিকে ইভিএম সরবরাহ করেছিল। ১০টি অঞ্চলের ইভিএমের গুণগত মান যাচাই শেষে বলা যাবে, কতটি ইভিএম ব্যবহারের উপযোগী আছে এবং কতটি আসনে এই যন্ত্রে ভোট করা যাবে। সে জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।