রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ
চোখের ‘ইনজুরি’ নিয়েই ফেরত গেলেন ৩ শিক্ষার্থী, বিদেশে চিকিৎসার পরামর্শ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে চোখে ‘ভিট্রিয়ল রেটিনাল ইনজুরি’ হওয়া তিন শিক্ষার্থীকে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে আজ বুধবার তাঁরা রাজশাহীতে ফিরেছেন। তাঁদের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ১৪ মার্চ তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
ওই শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম, আইন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আল আমিন ইসলাম ও ফারসি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মিসবাহুল।
১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত ছয় শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই দিন রাতেই তাঁদের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে ভিট্রিয়ল রেটিনাল ইনজুরির কারণে রাজশাহীতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।
১৫ মার্চ থেকে ঢাকায় ছেলের সঙ্গে ছিলেন আহত শিক্ষার্থী আল আমিনের বাবা আবদুস সেলিম। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরায়। ওই দিন দুপুরে তিনি বলেছিলেন, সকালে তিন শিক্ষার্থীর চোখের চিকিৎসার ব্যাপারে হাসপাতালে বোর্ড বসানো হয়েছিল। এরপর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। সেগুলো হাতে পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
আজ দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবদুস সেলিম বলেন, গত কয়েক দিনে তাঁর ছেলের চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের রাজশাহীতে ফিরে যেতে বলেছে। তাই তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন।
আল আমিনের সঙ্গে আহত শিক্ষার্থী মিসবাহুলও রাজশাহীতে ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় তাঁদের চিকিৎসা করাতে হলে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তাঁদের আগে অপেক্ষমাণ অনেক রোগী আছেন। কবে তাঁরা সিরিয়াল পাবেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঢাকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে যাওয়া উচিত। কয়েক দিন ধরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। আজ দুপুরে ছাত্র উপদেষ্টার মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি রাজশাহীতে ফিরে যেতে বলেছেন। তাঁরা বাসে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
মিসবাহুল আরও বলেন, তাঁদের তিনজনের মধ্যে আলিমুলকে ভারতে নিয়ে যেতে তাঁর বাবা ঢাকায় পাসপোর্টের কাজ করছেন। এ জন্য আলিমুল পরে আসবেন। তিনি আর আল আমিন রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
এদিকে মাথায় পুলিশের ছররা গুলির ‘পিলেট’ নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদকে। অনিশ্চয়তার কারণে ১৫ মার্চ অস্ত্রোপচার না করেই তাঁকে রাজশাহীতে ফেরত পাঠানো হয়। এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিবুল হাসান ১৬ মার্চ সকাল থেকে কথা বলছেন। আর মশিউর রহমান পোস্ট অপারেটিভ আইসিইউতেই ছিলেন। তাঁরা ছাড়া হাসপাতালে ৯০ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর ১৫ মার্চ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সারাক্ষণ আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখছেন। ছাত্রদের চিকিৎসা ব্যয়ের পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করছে। তবে আজ তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।