বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতারা সাধারণত একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। তবে ময়মনসিংহ মহানগরের এক ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতা এখন পরস্পরের বন্ধু। ঘটনাটি ঘটেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংস্থার কল্যাণে।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ২৩তম ব্যাচের রাজনৈতিক ফেলো হিসেবে যুক্ত হয়েছেন এ দুই ছাত্রনেতা। তাঁরা হলেন ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম ফেরদৌস ও ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সদস্যসচিব গোবিন্দ রায়।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে এ দুই ছাত্রনেতা ময়মনসিংহ নগরের নওমহল এলাকায় একটি পানির পাম্প স্থাপন করেছেন। এ কাজ করতে গিয়ে তাঁরা ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে পানির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জেনে এক হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে আবেদন করেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক নওমহল এলাকায় ওই বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির পাম্পের ব্যবস্থা করেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ফাহিম ফেরদৌস ও গোবিন্দ রায় এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে এ দুই ছাত্রনেতা পানির পাম্প স্থাপনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এতে নওমহল এলাকার দরিদ্র মানুষের খুব উপকার হয়েছে বলেও তাঁরা জানান। পাশাপাশি পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানে থেকে বন্ধু হওয়ার কথাটিও বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের পর ফাহিম ফেরদৌস ও গোবিন্দ রায়ের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে জানা যায়, এ কাজে যুক্ত হয়ে তাঁদের মানসিকতায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
ফাহিম বলেন, ‘আগে আমি রাজনীতি বলতে শুধু মিছিল করা আর নেতাদের প্রটোকল দেওয়াকেই বুঝতাম। মানুষের ছোটখাটো কিছু উপকার হয়তো করতাম। কিন্তু এত বৃহৎ পরিসরে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, এ ধারণা আগে ছিল না। এ ছাড়া ছাত্রদলের একজন নেতার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা একসঙ্গে কাজ করতে পারে, বন্ধু হতে পারে, এমন ধারণা আগে ছিল না।’
ফাহিম বলেন, ‘গোবিন্দ এখন আমার বন্ধু। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ফেলোশিপ নিয়ে কাজ করছি তিন মাস ধরে। এ তিন মাসে সপ্তাহে চার দিন দিনে ও রাতে একসঙ্গে থাকি। কাজের প্রয়োজনে মিশতে মিশতে বন্ধু হয়ে গেছি।’
গোবিন্দ রায় বলেন, ছাত্রলীগ নেতা যে এত ভালো বন্ধু হতে পারেন, সেটি আগে তাঁর ধারণাতেও ছিল না। রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এখন ভালো বন্ধু। সপ্তাহের চার দিনের বাইরেও দুজনের ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ হয়। ফাহিম ভালো কবিতা পড়েন। নিজেও কবিতা লেখেন বলে জানান গোবিন্দ।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সংস্থাটি এ ধরনের উদ্যোগ নেয়।