যত দিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, তত দিন ফার্মাসিস্টদের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন মো. সেলিম রেজার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু দারদা মাহফুজ

প্রথম আলো:

ফার্মেসি বিভাগ নিয়ে সাধারণের খুব বেশি ধারণা নেই। ওষুধ নিয়ে পড়ালেখা—এতটুকুই অনেকে মনে করেন। কিন্তু নিশ্চয়ই এর ক্ষেত্রটা অনেক বড়?

বিশ্বের অনেক দেশেই চিকিৎসকদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট এমন একটি পেশা, যেখানে চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করেন, আর ফার্মাসিস্ট প্রেসক্রিপশনটা (ব্যবস্থাপত্র) ঠিকমতো হলো কি না দেখেন, রোগীকে বুঝিয়ে দেন। প্রেসক্রিপশন নিয়ে যদি কিছু বলার থাকে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করেন। এটা ডাক্তার খুব ফ্রেন্ডলিভাবেই নেন। ‘হসপিটাল ফার্মাসিস্ট’ বলেও একটা ধারণা আছে বিভিন্ন দেশে, বাংলাদেশে নেই বললেই চলে, কিছু বেসরকারি হাসপাতালে আছে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের ‘ফার্মাসিস্ট’ সম্পর্কে ভুল ধারণা আছে। এর একটা কারণ হতে পারে—সরকারি কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়তো ফার্মাসিস্টদের জন্য ক্ষেত্রটা সেভাবে তৈরি হয়নি। বলে রাখি, আমরা হলাম এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট। ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট হচ্ছে বি গ্রেড ফার্মাসিস্ট। আর যাঁরা লাইসেন্স নিয়ে দোকানে ওষুধ বিক্রি করেন, তাঁরা সি গ্রেড।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর একটি হলো ফার্মেসি। এখানে ভর্তির যোগ্যতা দুই রকম—প্রথমত, ভর্তি পরীক্ষায় কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আলাদা করে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে ২৫–এর মধ্যে ১৬ পেতে হবে। অর্থাৎ যে শিক্ষার্থীরা ফার্মেসি পড়তে আসবে, তাদের রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

প্রথম আলো:

এই বিভাগে মূলত কী কী পড়ানো হয়?

এক কথায় ফার্মেসি হলো ওষুধ প্রস্তুত বিদ্যা বা ম্যানুফ্যাকচারিং অব মেডিসিন। এ বিভাগে আমরা মূলত তিনটি বিষয় পড়াই। একটা হচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি। লতাপাতা থেকে শুরু করে ওষুধের যত উপাদান আছে, সেসব নিয়ে গবেষণা। আরেকটা বিষয় আছে, ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি, যেখানে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল থেকে শুরু করে সব ডোজেস ফর্ম তৈরি করা শেখানো হয়। ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি নামে আরও একটা বিষয় আছে, যেখানে ওষুধের কার্যকারিতা ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি সম্বন্ধে অধিকতর জ্ঞান চর্চা হয়। এর বাইরে আরও কিছু বিষয় ও কোর্স আছে।

আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন মো. সেলিম রেজা
ছবি: সেলিম রেজার সৌজন্যে
প্রথম আলো:

আমরা জানি যে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের একটা ভালো অবস্থান আছে। আরও ভালো অবস্থানে যেতে আমাদের শিক্ষার্থীরা কীভাবে অবদান রাখতে পারে?

শুনতে কঠিন শোনালেও এটা সত্যি যে দেশের আর্থসামাজিক কারণে শিক্ষার্থীরা অনেকে (এ পেশায়) অনিরাপদ বোধ করে। আমার এখানে ফার্মেসির সর্বোচ্চ শিক্ষা পাওয়ার পর তারা কেউ হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ পুলিশ। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে বেরিয়ে প্রতিবছর ৮৫ জনই যদি ওষুধশিল্পে যোগ দিত, নিজেদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে এই শিল্পটাতে প্রভাব বিস্তার করত, তাহলে উন্নতিটা চোখে পড়ত জ্যামিতিক হারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিও হতো। আমাদের শিক্ষার্থীদের তাই বেশি বেশি ওষুধশিল্পে প্রবেশ করতে হবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

ফার্মেসি নিয়ে পড়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা, বৃত্তি বা গবেষণার সুযোগ কেমন?

আমি মনে করি ফার্মাসিস্ট ও ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেসের সুযোগ অনেক। আমরা যেকোনো ফিল্ডে কাজ করতে পারি। আমরা বায়োমেডিকেলে, বায়োফিজিকসে, ওশানোগ্রাফিতে কাজ করতে পারব। কেননা ফার্মেসির জ্ঞান খুবই সমন্বিত। আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিশ্বের সেরা ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করছে, ভালো করছে। আমাদের অনেক ছাত্র ডেলিকেট (সূক্ষ্ম) ডোজেস ফর্ম নিয়ে কাজ করছে। পলিমার নিয়ে, ডেন্ড্রিমারস নিয়ে কাজ করছে, যেগুলো অত্যাধুনিক পর্যায়ের ওষুধ। কয়েকজন শিক্ষার্থী করোনার টিকা তৈরির সঙ্গেও যুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য কিছু গবেষণাও আছে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

ভবিষ্যতে যারা ফার্মেসি নিয়ে পড়তে চায়, তাদের কী পরামর্শ দেবেন?

ধন্যবাদ। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ফার্মেসির সুযোগ এখন বহুমুখী ও আন্তর্জাতিক। বেশ কিছু ধাপ পার করে এখানে পড়তে আসতে হয়। হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। দেশে এবং বিদেশে গবেষণা ও কাজের বিশাল সুযোগ আছে। ফার্মাসিস্টরা নীরবে, নিরলসভাবে মানুষের সেবা করছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে বেতন কিছুটা কম পেলেও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বাড়ে, পদোন্নতি হয়, অন্যান্য কোম্পানি থেকেও ভালো অফার আসে। যত দিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, তত দিন ফার্মাসিস্টদের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। ডাক্তারদের সহায়ক হিসেবে ফার্মাসিস্টদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ফার্মেসি পেশাকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ এবং এর সুযোগগুলো কাজে লাগানো দরকার।

আরও পড়ুন