দুধ চা কি মনের জন্য ক্ষতিকর
চা খাওয়ার অল্প সময় পরেই সতেজ লাগে। কেটে যায় ক্লান্তি। কাজকর্মে আসে উদ্যম। চা খাওয়ার আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে আপনার রক্তে চায়ের ক্যাফেইনটা চলে আসে পুরোপুরি। অর্থাৎ এ সময়ে চায়ের সতেজতা সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন আপনি। ক্লান্তি বা অবসন্নতা দূর করতে অনেকেই তাই চা খান। মনের ওপরেও কি খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে দুধ চা? ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খানের কাছে জানতে চেয়েছিলেন রাফিয়া আলম।
চাই আরও চা?
চা খাওয়ার পর শরীর ও মনের সতেজ ভাব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চা খাওয়ার পর অন্তত ছয় ঘণ্টা সময় লাগতে পারে চায়ের প্রভাব পুরোপুরি শেষ হতে। তবে বাস্তবতা হলো দুধ চা এমন এক পানীয়, যা থেকে আবারও উদ্দীপনা পাওয়ার জন্য ছয় ঘণ্টা পেরোনোর আগেই আপনি তা গ্রহণ করতে উদ্যত হতে পারেন। আপাতদৃষ্টে এটি কোনো সমস্যা না। কারণ, চা কোনো নেশাদ্রব্য না। ফলে ‘চায়ের নেশা’ শব্দযুগলকে খুব একটা খারাপ মনে করা হয় না। বারবার চা খেলে অনেকেই তেমন কোনো শারীরিক সমস্যাও বোধ করেন না; বরং চা খাওয়ার সঙ্গে ভালো লাগার একটা অনুভূতি জড়িয়ে থাকে।
তবে চা নেশাও হয়ে উঠতে পারে
বারবার চা খেয়ে ভালো লাগলেও বিষয়টা আদতে এতটা সরল নয়। দুধ চায়ের সঙ্গে মনের নানা সমস্যার সম্পর্ক থাকতে পারে। দুধ চায়ের প্রতি একধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হতে পারে। দুধ চা সাধারণত চিনি দিয়েই খাওয়া হয়। চিনি আমাদের রক্তের গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয় হুট করে। অল্প সময়ের মধ্যে সেই গ্লুকোজের মাত্রা আবার কমেও যায়। এ সময়টাতেই খারাপ লাগার একটি অনুভূতি হতে পারে। মেজাজ খিটমিটে লাগতে পারে। ওই সময় আপনি দুধ চায়ের অভাব বোধ করতে পারেন। বিষয়টা অনেকটা নেশার মতোই হয়ে দাঁড়াতে পারে। কোনো কারণে নির্দিষ্ট সময় পর চা খাওয়া না হলে তখন খারাপ লাগার একটি অনুভূতি সৃষ্টি হয়। অস্থিরতা অনুভব করেন ওই ব্যক্তি।
হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণ
দুধ চায়ের নেশার সঙ্গে বেশ কিছু মারাত্মক মানসিক সমস্যাও সম্পর্কিত। বেইজিংয়ের ৫ হাজার ২৮১ জন কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে—হতাশা, দুশ্চিন্তা, এমনকি আত্মহত্যার চিন্তারও কারণ হতে পারে দুধ চা। গবেষণাটি ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর এফেক্টিভ ডিজঅর্ডারসের অফিশিয়াল জার্নালে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এর কারণ হলো আবেগ নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ধারার বাইরে চলে যাওয়া। ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কোনো ব্যক্তি তাঁর ভালো না লাগার অনুভূতি সামলানোর জন্য দুধ চায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে ধীরে ধীরে তাঁর আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। ফলে মানসিক সমস্যাগুলো পরে তাঁকে পেয়ে বসতে পারে। অধিক মাত্রায় দুধ চা গ্রহণ করতে থাকলে এসব সমস্যার প্রবণতা বাড়তে পারে।
তাই দুধ চা হোক সীমিত
বুঝতেই পারছেন, দুধ চায়ের অভ্যাস না করাই ভালো। বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্যকর অন্যান্য পানীয় গ্রহণ করতে পারেন। দুধ চা খেলেও পরিমাণ রাখুন সীমিত। আগে থেকে খুব বেশি দুধ চা গ্রহণের অভ্যাস থেকে থাকলে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে চেষ্টা করুন।
তা ছাড়া এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, দুধ চা থেকে দুধ এবং চা কোনোটির সব উপকারিতাই আপনি পাবেন না ঠিকঠাক। তাই কেবল স্বাদের জন্য দুধ চা খাওয়ার অভ্যাস বাদ দেওয়াই শ্রেয়।