তেমুজিনের দেশে
টাকি দর্শন
মঙ্গোলিয়ার পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটে চেঙ্গিস খানের নাম অথবা উল্টোটি বললেও ভুল হবে না। মধ্যযুগে মঙ্গোল সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ। ভ্রমণকারী এলিজা বিনতে এলাহী একবিংশ শতাব্দীতে কেমন দেখলেন আজকের মঙ্গোলিয়া? সেই অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করেছেন ধারাবাহিকভাবে। আজ প্রকাশিত হলো ‘তেমুজিনের দেশে’র শেষ পর্ব।
হুস্তাই ন্যাশনাল পার্ক! আমার ভ্রমণসঙ্গী ফাইয়াজ আলম খান জানতে চাইল কী দেখব ন্যাশনাল পার্কে? বিরল প্রজাতির ঘোড়া দেখব বলে গোবি মরুভূমির পাট চুকিয়ে যাচ্ছি হুস্তাই ন্যাশনাল পার্ক। আজ রাত্রিবাস সেখানকার ক্যাম্পের ঘেরে। ঘণ্টা তিনেক লাগবে। দুঘণ্টা মূল সড়ক, তারপর অফফ রোড। ড্রাইভার আর্থের ভাষায়। অফফ রোড মানে স্তেপ আর মালভূমি অঞ্চল।
জিপে বসে থাকা দায়। একবার খাদে নামছে তো একবার ওপরে উঠছে। আচমকা দেখছি এক গাদা ভেড়ার পাল জিপের সামনে। মনে হয় সংখ্যা লাখখানেক ছাড়িয়ে যাবে। এত ভেড়া একসঙ্গে আমি কোনো দিন দেখিনি। কোনো কোনো ভেড়ার গা থেকে লোম খুলে যাচ্ছে। সেই আধখোলা লোম ঝুলছে ভেড়ার গায়ে। এ রকম করেই তারা দৌড়ে বেড়াচ্ছে রাস্তার এক মাথা থেকে অন্য মাথায়। গ্রীষ্মকালে এদের লোম ঝরে পড়ে। ব্যাকট্রিয়ান ক্যামেলদেরও একই অবস্থা দেখেছি।
দূর থেকে ক্যাম্প দেখছি। ২০–২৫টি ঘের হয়তো রয়েছে ক্যাম্পে। আশপাশে ১০০ মাইলের মধ্যে কোনো জনমানব আছে বলে মনে হয় না। এত কাছে মনে হচ্ছিল। কিন্তু যাচ্ছি তো যাচ্ছি।
উট ছাড়াও মঙ্গোলিয়ানদের প্রিয় প্রাণী হলো ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়া মঙ্গোলিয়ানদের কল্পনাই করা যায় না। শহরের বাইরে প্রত্যেকের বোধ হয় নিজস্ব ঘোড়া আছে। ছোটরা হাঁটতে শেখার আগেই ঘোড়ায় চড়তে শেখে। মঙ্গোলিয়ার বিখ্যাত ঘোড়া Przelwalski’s horse। স্থানীয় নাম টাকি (Takhi)। এটা এক আদিমতম ঘোড়া। পৃথিবীর আর সব ঘোড়া এদের থেকেই উদ্ভূত। এরা আজকাল খুব বিরল। শুধু একদল বুনো ঘোড়া হুস্তাই ন্যাশনাল পার্কে দেখা যায়। সুন্দর ধূসর-বাদামি রং।
দুপুরের খাবার খেয়ে, অল্প রেস্ট নিয়ে তারপর পার্কে যাব টাকি দেখতে। জানি না দেখতে পাব কি না।
ঘেরে প্রবেশ করলাম। হুস্তাই ন্যাশনাল পার্কের ঘের! মঙ্গোলিয়াতে চার নম্বর এবং শেষ ঘের। এখান থেকেই ফিরে যাব উলনবাটোর রাজধানী শহরে।
মঙ্গোলীয় যাযাবরদের ঘের বা গোল তাঁবু যে নামেই ডাকি না কেন। দেয়াল আর ছাদ ভেড়ার উল দিয়ে ঠাসা, শীতের সময় তাঁবু গরম রাখে। মেঝে কাঠের। তবে নোমাড পরিবারে দেখেছিলাম উলের কার্পেট। মেঝে, খাট সব জায়গাতেই উলের কার্পেট বিছানো। ঘেরের ঠিক মাঝখানে একটা উনুন বা ফায়ারপ্লেস, তার লম্বা চিমনিটা ছাদের মাথা ফুঁড়ে বাইরে বেরিয়ে থাকে, যাতে ধোঁয়াটা একেবারে বাইরে বেরিয়ে যায়। উনুনের আশপাশে রান্না, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি আর দেয়াল ঘেঁষে দু–তিনটে খাট—মোটা উলের লেপ, তোশক সমেত। এই ঘেরে চিমনি নেই। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চল বেশ উত্তপ্ত থাকে দিনের বেলায়।
যেগুলো আধুনিক ও বাণিজ্যিক ঘের, সেগুলোতে রান্না হয় না। নোমাডরা রান্না, খাওয়া, ঘুম একই স্থানে। মানে এই ঘেরকে কেন্দ্র করে। রাতে বাতির একমাত্র সোর্স সোলার প্যানেল।
গ্রীষ্মকালে রাতে ভালোই ঠান্ডা পড়ে। আমাদের জন্য শীত। স্থানীয়দের জন্য আরামদায়ক আবহাওয়া। খোলা জায়গা বলে কনকনে হাওয়া। ঘেরগুলোর ভেতরে ও বাইরে নানা রঙের কারুকার্য করা—মঙ্গোলীয় প্রথায় মঙ্গলের চিহ্ন। ঘেরে একটাই দরজা এবং সেটা বড়জোর চার সাড়ে চার ফুট উঁচু। তাই সবাইকে মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়। অবশ্য এটা মনে না রাখলে মাথায় ঠোক্কর খেতে হবে। আমি তিনবার খেয়েছি।
বাণিজ্যিক ক্যাম্পগুলো শুধু গ্রীষ্মকালে খোলা থাকে। শীতকালে গুটিয়ে রাখা হয় স্টোরে। এই ক্যাম্পে দুটো পাকা বিল্ডিং—কিচেন আর খাওয়ার ঘর এবং অন্যটা বাথরুম ও শাওয়ার। আর একটি রিসার্চ সেন্টার আছে। বাথরুমগুলো মোটামুটি চলনসই, কিন্তু বাইরে যতই ঠান্ডা পড়ুক, গরম পানি খুব কমই পাওয়া যায়। গোবিতে গরম পানি পাইনি। কারাকোরামে পেয়েছিলাম। এখানে রয়েছে। আর রাত্তিরে বাথরুম যেতে হলে অন্ধকারে, উঁচু–নিচু মাটিতে ঠোক্কর খেতে হবে। কারাকোরাম শহরে কেবল ঘেরের সঙ্গে শাওয়ার ও রেস্টরুম ছিল। গোবি ও ন্যাশনাল পার্কে নেই।
ন্যাশনাল পার্কের এই ঘেরটি বেশ কারুকাজ করা। কমলা রঙের আধিক্য। এই রং আর কারুকাজটি মঙ্গোলীয় ঐতিহ্যবাহী কারুকাজ নাম খি খৌর (khee khuar)। অনেকটা আমাদের রিকশা পেইন্টের মতো।
ডাইনিংয়ে গেলাম খাবার খেতে। খাবার বেশ মজার। তুসিনতুর বলল, খাবার খেয়ে আমরা একটি ডকুমেন্টারি দেখব। এটি যেহেতু রিসার্চ সেন্টার, তাই অডিটরিয়াম, মিটিং রুম, জাদুঘর, স্যুভেনির শপ, কফি শপ রয়েছে। লাঞ্চের পর ঘুরে ঘুরে দেখলাম সব। তথ্যচিত্রটি টাকি ঘোড়ার গবেষণাকাজ নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। জাদুঘর, স্যুভেনির দোকান সব ঘুরতে ঘুরতে আমাদের যাওয়ার সময় হলো।
টাকি দর্শন! নাম তার টাকি। আদিম ঘোড়া টাকি। কথামতো সূর্যাস্তের আগে গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে টাকি দেখার জন্য। পাহাড় থেকে তারা নিচে নেমে আসে পানি খাওয়ার জন্য। সমস্তটিই ধারণার ওপর নির্ভর করে। হয়তো আমরা যে পাশে রয়েছি ভ্যালির, সেদিন টাকি পানি খেতে এলই না এই এলাকায়।
তবে তো সফর পুরোটাই মাটি। দেখি বিধাতা কতটুকু সদয় থাকেন। আবারও স্তেপ অঞ্চলের ভেদ করে গাড়ি ছুটছে। চারদিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আট জোড়া চোখ খুঁজতে আরম্ভ করল টাকিদের। পুরো ভ্যালি খালি। মিনিট বিশেক অপেক্ষা করার পর একজন টাকির দেখা পেলাম। গাইড বলল, আমরা ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে দেখি তারপর এগোব। জিপটিকে একটু আড়ালে রাখা হলো। স্তেপ অঞ্চলে ঘাস বেশ বড় বড়। গুল্মলতাজাতীয় গাছের আড়ালে নিজের অবয়ব বেশ লুকিয়ে রাখা যায়।
তীর্থের কাকের মতো বসে আছি। আরও সময় পরে একটির পর একটি টাকি পাহাড় থেকে নিচে নেমে এল ১০–১২টি টাকি ঘোড়া। ৪০০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দর্শন করতে হবে। ঘাসের ওপর শুয়ে, সামান্য মুঠোফোন উঁচু করে যতটুকু ছবি কিংবা ভিডিও করা যায়।
হুস্তাই জাতীয় উদ্যানটি মধ্য মঙ্গোলিয়ায় অবস্থিত এবং ২০০২ সালে ইউনেসকো কর্তৃক বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণা করা হয়েছে। এটি ৫০ হাজার হেক্টর তৃণভূমি এবং পাহাড়ি বন জুড়ে বিস্তৃত এবং অনেক প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখির আবাসস্থল। অবশ্য নামেই বন। একটি গাছও নেই।
হুস্তাই জাতীয় উদ্যান বিপন্ন টাকিকে রক্ষা করার জন্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আয়োজনের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। এই বন্য ঘোড়া, যা রাশান ট্রাভেলার ও গবেষক প্রজেওয়ালস্কির ঘোড়া নামেও পরিচিত। তিনিই প্রথম এই ঘোড়ার অস্তিত্ব খুঁজে পান মঙ্গোলিয়াতে। এর আগপর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্ব মনে করত বন্য ঘোড়া টাকি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রজেওয়ালস্কি তিনবার মঙ্গোলিয়া ট্রাভেল করেন—১৮৭৩, ১৮৭৮ ও ১৮৮০ সালে।
এটা এক আদিমতম ঘোড়া। পৃথিবীর আর সব ঘোড়া এদের থেকেই উদ্ভূত। এরা আজকাল খুব বিরল। শুধু একদল বুনো ঘোড়া হুস্তাই ন্যাশনাল পার্কে দেখা যায়। সুন্দর ধূসর-বাদামি রং। বিশ্বের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় এখন মাত্র কয়েকটি নমুনা পাওয়া গেছে। শুনেছি এই পার্কে মাত্র ৩০০টি টাকি রয়েছে।
১৯৯২ সালে মঙ্গোলিয়াতে একটি প্রজনন ও পুনঃ প্রবর্তন কর্মসূচি শুরু হয়। ডাচ্ গবেষক ও মঙ্গোলিয়ার পরিবেশবিদদের মিলিত প্রচেষ্টায়।
এত দূর থেকে কি টাকি দর্শন হয়। তুসিনতুর বলছিল, অনেক অতিথি না দেখে ফিরে যায়। এমনও সময় গেছে এক মাসে তিনটি ট্যুরের কোনো পর্যটক টাকি দেখতে পারেনি।
পানি খেয়ে টাকিগুলো ধীরে ধীরে আবারও পাহাড়ে ফিরে যাচ্ছে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আমাদেরও ফিরতে হবে। দিনের শেষ আলোতে গোটা অঞ্চল এক রহস্যপুরীতে পরিণত হয়েছে। ফেরার পথে আমাদের গাড়ি ছাড়া অত্র এলাকায় একটি প্রাণীও নেই। গাড়িতে বসে কেউ কোনো কথা বলছি না। হয়তো পরিবেশের প্রভাব। আচমকা এবড়োখেবড়ো পথে ঝাঁকি খেয়ে সবাই একসঙ্গে আর্তনাদ করে উঠল। নীরবতা ভাঙল।
ঘেরে পৌঁছে ডিনারে গেলাম। ডাইনিং প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
ফের উলনবাটোর
খোলা আকাশের নিচে আহার...! আজ সকাল শুরু হয়েছে ৬টায়। অবশ্য প্রতিদিনই তাই হচ্ছে। এখানে সকাল ৬টায় একেবারে চকচকে রোদ। স্থানীয়দের সকাল শুরু হয় ভোর ৪টায়। কাজেই সকাল ৬টা খুব বেশি উল্লেখ করার মতো সময় না মঙ্গোলিয়ার শহরতলিতে ।
আর খোলা আকাশের নিচে আহার, সে রকম কোনো উল্লেখযোগ্য বিষয় নয়। কিন্তু পরিকল্পনাবিহীন যেকোনো কাজ মজার। নির্জন ভ্যালিতে, খোলা আকাশের নিচে, স্তেপ অঞ্চল, সবুজ ঘাস আর প্রাণিকুলের মাঝে বসে কফি বানানো, প্যাকেট করা আনা খাবার খাওয়া একেবারে গুরুত্বহীন নয় ভ্রমণে। গাড়ির পেছনের ডালা খুলে পুরো একটি কিচেন দেখলাম। কফি মগ, রান্নার চুলা, ছুরি, কাঁচি, প্লেট, বসার ফোল্ডিং চেয়ার, ফ্লোরম্যাট সব রয়েছে। মনে হচ্ছিল আরও সময় কাটাই সবুজ ঘাস আর প্রাণীদের সঙ্গে। ভ্যালির ওপর থেকে মূল সড়ক দেখা যাচ্ছে। তুসিনতুর তাড়া দিল।
উলানবাটরের দিকে যাচ্ছি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করার জন্যই খোলা আকাশের নিচে খাবার আয়োজন। হুস্তাইয়ের ডাইনিং বসে নাশতা করতে চাইলে আরও এক ঘণ্টা দেরি হতো, তাই এই ব্যবস্থা। প্রায় ফুরিয়ে এসেছে মঙ্গোলিয়া সফর!
তেমুজিনের দর্শন
একটা বিষয় আমি বুঝি না, ইতিহাস চেঙ্গিস খানের সৈন্যবাহিনীকে ‘বর্বর’ আখ্যা দিয়েছে অথচ ‘বর্বরতায়’ এদেরই সমান কিন্তু অনেক ছোট সাম্রাজ্যের অধিকারীদের আলেকজান্ডার ‘দ্য গ্রেট’, সাইরাস দ্য গ্রেট বলে সম্মানিত করা হয়েছে! কী রকম পরিহাস! ঐতিহাসিক সত্য, প্রোপাকান্ডা, প্রচারণা কখন, কোনটি ভূখণ্ড ভেদে পৃথিবীকে প্রভাবিত করে, বোঝা আসলেই মুশকিল!
সম্প্রতি রাজধানী উলানবাটর (মঙ্গোলরা ছোট্ট করে বলে ইউবি বা UB) থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে চেঙ্গিস খানের একটি বিরাট ১৩০ ফুট উঁচু স্টেনলেস স্টিল স্ট্যাচু তৈরি করা হয়েছে। মূল সড়ক থেকেই দেখা যায় ভাস্কর্যটি। ঘোড়ার ওপর বসে আছেন বিশ্ববিজেতা। বিশাল প্রান্তরের মাঝে ভাস্কর্যটি দারুণ দৃষ্টিনন্দন। খোলা আকাশের নিচে রোদ্দুরে ঝকমক করে। সঙ্গে আছে একটা ছোট মিউজিয়াম আর স্যুভেনির দোকান। ভেতরে লিফট আর সিঁড়ি দিয়ে চেঙ্গিস খানের ঘোড়ার মাথা পর্যন্ত চড়া যায়। পর্যটকদের ভিড়ে সেখানে দাঁড়ানোর জো নেই। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর ভাস্কর্যটি দেখলে মনে হয় তিনি শূন্যে বসে পুরো মঙ্গোলিয়া দেখছেন।
এই ভাস্কর্যের দিকে আমি অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল তেমুজিনকেই দেখছি। এতই জীবন্ত লাগছিল ভাস্কর্যটি।
মোঙ্গল সাম্রাজ্যের পত্তনের পর চেঙ্গিস বিশ্বজয়ে বেরিয়েছিলেন। চেঙ্গিস খান উত্তর চীন থেকে আফগান সীমান্ত পর্যন্ত এবং সাইবেরিয়া থেকে তিব্বতের সীমান্ত পর্যন্ত শাসন করেছিলেন একসময়। পরবর্তীকালে তুরস্ক থেকে রাশিয়া পর্যন্ত অঞ্চলও ছিল তাঁর দখলে। একজন কিংবদন্তি সামরিক নেতা হিসেবে চেঙ্গিস খানের নাম আজও স্মরণ করা হয়। যদিও তাঁর আগ্রাসী চরিত্রের জন্য তাঁকে হিংস্র একজন মানুষের তালিকাতেই ফেলা হয়। কিন্তু যাযাবর উপজাতিদের একটি সামাজিক পরিচয়ের অধীনে একত্র করা চেঙ্গিস খানের অন্যতম কৃতিত্ব।
তিনি রাজাদের রাজা...! আমি বলছি না, তাঁর উপাধি চেঙ্গিস খানের অর্থ হচ্ছে ‘রাজাদের রাজা’...! মঙ্গোলরা ডাকে চেঙ্গিস খান। তাঁর আসল নাম তেমুজিন।
সব মঙ্গোল ও তুর্কি উপজাতিদের ঐক্যবদ্ধ করার কারণে গোত্রপ্রধানেরা তাঁকে উপাধি দেন চেঙ্গিস খান, ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে।
পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য তিনি অধিকার করেন। কারাকোরামে অবস্থিত রাজধানীতে তিনি বিজিত দেশ থেকে দার্শনিক, ধর্মশাস্ত্রবিদ ও বিজ্ঞানী সমবেত করেন। তাঁ সময়ে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়।
ইতিহাস তাঁকে যতই বর্বর ও নিষ্ঠুর বলে আখ্যায়িত করুক, কিন্তু মোঙ্গলদের কাছে তিনি দেবতুল্য। চেঙ্গিস খানকে নিয়ে তারা গর্ব করে। চেঙ্গিস তাদের কাছে একটি অনুপ্রেরণার নাম। ১৯৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্ট চেঙ্গিস খানকে ‘ম্যান অব দ্য মিলেনিয়াম’ তথা ‘সহস্রাব্দের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি’ ঘোষণা করে।
এত দৌড়ে উলনবাটোর এলাম চেঙ্গিস খান জাতীয় জাদুঘর দেখব বলে। পাক্কা ৫ ঘণ্টা কাটালাম জাদুঘরে। দিনের আলো নিভে যাচ্ছে। পশ্চিমের আকাশ লাল হয়ে আছে। মঙ্গোলিয়ার শেষ সন্ধ্যা কাটালাম উলনবাটোর স্কয়ারে।
অন্য কোনো ভূখণ্ডের গল্প নিয়ে আবারও হাজির হব।