দলের আরেক তরুণ ক্রিকেটার হাসান মাহমুদের অবদানটা অবশ্য অল্প বলা যাবে না। ২ ওভার বল করে ১০ রান দিয়ে হাসানের শিকার ১ উইকেট। তবে সেই একমাত্র উইকেটটি ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারের। যে মাঠে ম্যাচজুড়ে দাপট ছিল স্পিনের, সেখানে তিনি গতির ঝড় তুলে উপড়ে ফেলেছেন বাটলারের স্টাম্প। ওই মুহূর্তের অনুভূতিটা অবশ্য প্রকাশ করতে পারছিলেন না এই তরুণ, ‘বুঝিয়ে বলতে পারব না ওই আউটটা কেমন ছিল। অবিশ্বাস্য!’ হাসানের চোখ যে এখন ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাইয়ে, সেটাও লুকালেন না, ‘অবশ্যই। এখন তো সেটাই লক্ষ্য।’

অবিশ্বাস্য ছিল জয়ের মুহূর্তটাও। ইংল্যান্ডের ডেথ বোলিং বিশেষজ্ঞ বলা হয় যেই ক্রিস জর্ডানকে, তাঁকে দুটি চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন আহমেদ। এক বোর্ড পরিচালক খেলা শেষে মাঠে নেমে ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দনের সময় ঘোষণা দিচ্ছিলেন, ‘তাসকিন এখন বাংলাদেশের নতুন এক ব্যাটসম্যান।’

ম্যাচ শেষে ঠিকমতো কথাই বলতে পারছিলেন না জয়ের আরেক নায়ক নাজমুল হোসেন। সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস করতে গিয়ে গলা ভেঙে গেছে তাঁর। এই ভাঙা গলায়ই এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বললেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান তাড়া করার কথা। ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া ১১৭ রানের ছোট্ট স্কোরের পেছনে ছুটতে গিয়ে যে স্নায়ুর চাপ অনুভব করেছেন, সে কথা।

তবে নিজের সামর্থ্যে বিশ্বাস ছিল নাজমুলের। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে সম্প্রচারকারী টেলিভিশনে নাজমুল বলেছেন, ‘একটু তো টেনশন ছিল। তবে এখান থেকে আমি ম্যাচটা জেতাতে পারব, আমার এই বিশ্বাস ছিল। যেমন ব্যাটিং করছিলাম, অনেকক্ষণ উইকেটে ছিলাম, আমার মনে হচ্ছিল, যেকোনো অবস্থা থেকে খেলাটা জেতাতে পারব।’

রান তাড়ায় সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের প্রশংসাও শোনা গেল নাজমুলের কথায়, ‘মিরাজ তো খুবই ভালো বোলিং করেছে। ব্যাটিংয়ে তার ওই ইনিংসটা অনেক সাহায্য করেছে। ওর ওই দুইটা ছয়, আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন নাজমুল। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও নাজমুলই ছিলেন জয়ের নায়ক। তবে সেদিন তাড়া করতে নেমে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি এই বাঁহাতি, যা নিয়ে নাজমুলের কিছুটা আক্ষেপ ছিল।

কাল দলকে জয়ের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন নিজে অপরাজিত থেকে। নিজের ব্যাটিং নিয়ে নাজমুলের কথা, ‘খেলোয়াড় হিসেবে আমার দায়িত্ব নিয়মিত রান করা। ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেখানে প্রতিদিনই ব্যাটসম্যানের চ্যালেঞ্জ থাকে। আমিও সে অনুযায়ী অনুশীলন করি, ম্যাচে চেষ্টা করি ভালো করার।’

অধিনায়ক সাকিব অবশ্য ম্যাচ শেষে সিরিজ জয়ের কৃতিত্বটা বোলারদের দিয়েছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন ম্যাচের শুরুর ৬ ওভারের কথা। যেখানে ইংল্যান্ড দল ১ উইকেটে ৫০ রান তুলে বড় রানের আভাস দিচ্ছিল। সেখান থেকে ম্যাচটা ঘুরিয়েছে বোলাররা, ‘ওরা কিন্তু ভালো শুরু করেছিল। কিন্তু আমরা পাওয়ার প্লের পর ভালো বোলিং করেছি। স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে পেরেছি। অল্প রানে আটকেছি। সব মিলিয়ে দারুণ টিম অ্যাফোর্ট।’

তবে সিরিজ জিতলেও টি-টোয়েন্টিতে আরও অনেক উন্নতির সুযোগ আছে বাংলাদেশের। সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন নাজমুল, ‘আমরা একটা সিরিজ জিতলাম ভালো একটা দলের বিপক্ষে। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে। তবে উন্নতির অনেক জায়গা আছে। তবে এই দলের সঙ্গে সিরিজ জেতাটা সামনের সিরিজগুলোতে অনেক সাহস দেবে।’